দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম–১৬ আসনে নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর প্রার্থিতা বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলা ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গতকাল রোববার (৭ জানুয়ারি) বিকেল ৩টা ৪৫ মিনিটে ভোট শেষের ১৫ মিনিট আগে ইসি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিকেল ৪টায় ইসি সচিব জাহাংগীর আলম এ তথ্য সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
এর আগে রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ভোটগ্রহণ চলাকালে বাঁশখালী থানায় ঢুকে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) কয়েকজন পুলিশ সদস্যের ওপর চড়াও হয়েছেন চট্টগ্রাম–১৬ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। তিনি বর্তমান সংসদ সদস্য। থানায় ঢুকে এমপির ‘চোটপাটের’ একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ওসি’র অভিযোগ, এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী তাকে মারার জন্য তেড়ে গিয়েছেন।
জানা গেছে, বাঁশখালী পৌরসভার দক্ষিণ জলদি আশকরিয়া পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে বেলা ১২টার দিকে পৌর কাউন্সিলর আব্দুল গফুরকে আটক করে পুলিশ। নৌকার প্রার্থীর সমর্থক গফুরের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি কেন্দ্রে ঢুকে ব্যালটে সিল মারার চেষ্টা করেছিলেন। গফুরকে থানায় নেয়ার খবর পেয়ে মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী আরও কয়েকজনকে নিয়ে সেখানে যান। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী ওসি তোফায়েল আহমেদকে ‘তুই তোকারি’ করে কথা বলা শুরু করেন। এসময় ওসি বলেন, স্যার, সম্মানের সহিত বলছি তুই–তোকারি করবেন না। তখন একজন পুলিশ সদস্যকে মোবাইলে ভিডিও করতে দেখে ক্ষেপে যান মোস্তাফিজুর। তাকে উদ্দেশ্য করে হুমকির স্বরে বলেন, এই তুই এদিকে আয়। একপর্যায়ে মোস্তাফিজুর চেয়ার ছেড়ে উঠে ভিডিও ধারণকারী ওই পুলিশ সদস্যের দিকে তেড়ে যান। তখন ওসি চেয়ার ছেড়ে উঠে তাকে বসতে বলেন। মোস্তাফিজুরের সঙ্গে যাওয়া কয়েকজন তাকে ধরে আবারও চেয়ারে এনে বসান। কয়েক সেকেন্ড পর তিনি আবারও চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বিভিন্ন কথাবার্তা বলতে শুরু করেন এবং ওসির দিকে তেড়ে যাবার চেষ্টা করলে তাকে কয়েকজন মিলে ধরে ফেলেন। ওসি বারবার বলতে থাকেন, স্যার, আপনি শান্ত হোন। এরপর আরও কিছুক্ষণ ‘চোটপাট’ করে মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীকে থানা থেকে বেরিয়ে যেতে দেখা যায় ওই ভিডিওতে।
জানতে চাইলে বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোফায়েল আহমেদ বলেন, একটি কেন্দ্রে উনার সমর্থক কাউন্সিলর আব্দুল গফুর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছিলেন। তিনি প্রতিপক্ষের এজেন্টদের মারধর করে বের করে দিয়েছেন ও ব্যালটে সিল মারার চেষ্টা করছেন অভিযোগ পেয়ে আমরা সেখানে যাই এবং উনাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসি। তখন এমপি সাহেব গফুরকে ছাড়াতে থানায় এসে চাপ সৃষ্টি করেন। উনি আমাকে মারার জন্য তেড়ে আসেন। আমি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। এখন উনাদের সিদ্ধান্ত মতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এর আগে, একই কেন্দ্রে প্রায় এক ঘণ্টা ভোটগ্রহণ বন্ধ ছিল। প্রিসাইডিং অফিসার আবু বক্কর সিদ্দিকি বলেন, সহকারী রিটার্নিং অফিসারের সিদ্ধান্তে একজন আনসার সদস্য গত রাত ৯টায় আমার কেন্দ্রে আসেন। তিনি নৈশপ্রহরীর দায়িত্ব পালন করেন। সকালে একপক্ষ গুজব রটায় যে, সে নাকি ব্যালটে ভোট মেরেছে। এটা সম্পূর্ণ বানোয়াট অভিযোগ। তখন দু’পক্ষে ঝামেলা হলে ভোটগ্রহণ কিছুক্ষণ বন্ধ ছিল। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্থগিত করা হয়নি। এদিকে ভোটগ্রহণ বন্ধের খবর পেয়ে মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী ওই কেন্দ্রের সামনে যান। তিনি চিৎকার করে বলতে থাকেন, আমি হলেও এমপি, না হলেও এমপি। তোরা আমার কিছু করতে পারবি না। প্রধানমন্ত্রী আমার সঙ্গে আছেন।
এর আগে, গত ৫ জানুয়ারি ওসি তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর মোবাইলে কথোপকথনের আরেকটি অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যাতে তাকে ‘পুলিশের হাত কেটে নেয়ার’ হুমকি দিতে শোনা যায়।