দেশের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক অঞ্চল মীরসরাই ইকোনমিক জোনে ভর্তুকি মূল্যে নয়, ‘উৎসাহ মূল্যে’ ভূমি দিচ্ছে সরকার। প্রতি একর ভূমির ক্ষতিপূরণ এবং উন্নয়ন খাতে সরকারের ৪ কোটি টাকার মতো খরচ হলেও শিল্প উদ্যোক্তাদের দেওয়া হচ্ছে এক কোটি টাকায়। শুধুমাত্র ভূমি খাতেই শিল্প উদ্যোক্তাদের প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে। দেশের শিল্পের বিকাশ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে সরকারের এই বিশেষ ছাড়ের সুফল মিলতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে ১৫ বিলিয়নের বিনিয়োগ প্রস্তাবের লক্ষ্যমাত্রার স্থলে ১৯ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব স্বাক্ষরিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, মীরসরাই, সীতাকুণ্ড এবং ফেনীর উপকূলীয় এলাকার ত্রিশ হাজার একর জমিতে দেশের বৃহত্তম অর্থনৈতিক শিল্পাঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) উদ্যোগে এলাকার উন্নয়ন এবং অবকাঠামোগত নির্মাণ কার্যক্রম পুরোদমে চলছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন শিল্প গ্রুপ জায়গা বরাদ্দ নিতে শুরু করেছে। দেশি-বিদেশি অনেক শীর্ষ স্থানীয় প্রতিষ্ঠান এখানে জায়গা বরাদ্দ নিয়েছে।
তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ, রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড, এনার্জিপ্যাক পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, সামিট অ্যালায়েন্স লজিস্টিক পার্ল লিমিটেড (এসএএলপিএল), মাহিন ডিজাইন এটিকেট (বিডি) লিমিটেড, আরেফিন এন্টারপ্রাইজ, সানজি টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড, হেলথ কেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ইওন মেটাল ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, বাংলাদেশ এডিবল অয়েল লিমিটেড ও বার্জার পেইন্টস (বিডি) লিমিটেড, বসুন্ধরা গ্রুপ, টিকে গ্রুপ ইত্যাদি দেশীয় প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে জাপানের নিপ্পন স্টিল ও সুজিত কর্পোরেশন, ভারতের এশিয়ান পেইন্টস, যুক্তরাজ্যের বার্জার পেইন্টস, চীনের জিনদুন গ্রুপসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে ইতোমধ্যে জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। জাপানের মিৎসুবিসি এই শিল্পনগরীতে প্ল্যান্ট স্থাপনের আগ্রহের কথা জানিয়েছে।
বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো গার্মেন্টস, টেক্সটাইল, বিদ্যুৎ উৎপাদন, কনটেইনার ম্যানুফ্যাকচারিং, কন্টেনার ডিপো স্থাপন, ওষুধ, স্টিল পার্ক, ভোজ্যতেল ও খাদ্য উৎপাদনের মতো কারখানা প্রতিষ্ঠা করবে। বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোও নানা ধরনের পণ্য উৎপাদনের কারখানা গড়ে তুলবে। গাড়ি প্রস্তুতের জন্য একটি আলাদা এলাকা চিহ্নিত করে রাখা হয়েছে শিল্প নগরীতে।
মীরসরাই ইকোনমিক জোন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মাঝে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে উল্লেখ করে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী আজাদীকে জানান, প্রত্যাশা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। আমাদের প্রত্যাশা ছিল, বর্তমান সময় পর্যন্ত ১৫ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব আসবে। তবে এখন পর্যন্ত আমরা ১৯ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছি। এই বিষয়টি আমাদেরকে উজ্জীবিত করছে। তিনি বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে এই ইকোনমিক জোনে ৩০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ হবে বলে আমরা আশাবাদী।
ভূমি বরাদ্দের ব্যাপারে তিনি বলেন, পানির দামে ভূমি দিচ্ছি। শিল্পায়ন এবং কর্মসংস্থানের স্বার্থেই সরকার এটি করছে। মীরসরাই ইকোনমিক জোনে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, এখানে মাথার উপর দিয়ে জোয়ারের পানি যেত। এখন আপনি এখানে দাঁড়িয়ে আছেন। চমৎকার শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘর হয়েছে। এই ভূমি উন্নয়ন করতে সরকারের কোটি কোটি টাকা খরচ হয়েছে। ভূমি মালিকদের তিন গুণ দাম পরিশোধ করতে হয়েছে। রাস্তাঘাট এবং অবকাঠামো গড়ে তুলে এই ভূমিকে ব্যবহার উপযোগী করা হচ্ছে। প্রতি একর ভূমির ক্ষতিপূরণ এবং উন্নয়ন বাবদ সরকারের অন্তত চার কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। অথচ আমরা প্রতি একর ভূমি এক কোটি টাকায় শিল্প উদ্যোক্তাদের বরাদ্দ দিচ্ছি। এটি ভর্তুকি মূল্য নয়, উৎসাহ মূল্য।
ত্রিশ হাজার একর ভূমিতে এই বিশেষ উৎসাহ দিতে সরকারকে ৯০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। দেশের লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান এবং হাজার হাজার কোটি ডলারের রপ্তানি আয়ের মাধ্যমে এই উৎসাহ ভাতার সুফল সরকারের ঘরে উঠবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।