কয়েক দিন আগে টোকেন দেওয়া ছাড়াও কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করে আটকেপড়া সৌদি গমনেচ্ছুদের কাছে ফ্লাইটের টিকেট হস্তান্তরে কিছুটা শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনেছে এয়ারলাইন্সগুলো। তবে সময়মতো সঠিক তথ্য না পাওয়ায় দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ঢাকায় টিকেটের জন্য এসে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে অনেককে। সৌদিতে কাজ হারানোর উদ্বেগের কারণে গতকাল শুক্রবার ছুটির দিনেও মতিঝিলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বুকিং কাউন্টার এবং কারওয়ানবাজারে সৌদি এয়ারলাইন্সের বুকিং কাউন্টারের বাইরে কয়েকশ যাত্রীর ভিড় দেখা গেছে। তবে গত সপ্তাহের মতো এদিন কোনো মিছিল–হট্টগোল হয়নি। খবর বিডিনিউজের।
গত মার্চে হাতে টিকেট পেয়েও মহামারীর কারণে আকস্মিকভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়া ফ্লাইটের যাত্রীদের গত ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে বিমানের বিশেষ ফ্লাইটে সৌদি আরব নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। দুপুরে মতিঝিল বকচত্বরে বলাকা ভবনের সামনে গিয়ে দেখা যায়, ভবনের দুটি প্রবেশপথের কলাপসিবল গেইট বন্ধ, সেখানে পাহারায় রয়েছেন একদল পুলিশ। আগেই টোকেন সংগ্রহ করা যাত্রীদের পালা করে কাউন্টারে ডেকে নিয়ে যাচাই–বাছাই শেষে দেওয়া হচ্ছে টিকেট। এদিকে টোকেন কিংবা আশ্বাস ছাড়াই ভবনের বাইরে লাইন ধরেছেন যাত্রীরা। তাদের একটি লাইনের শেষ প্রান্তে অবস্থান করছিলেন নরসিংদী থেকে আসা বেলায়েত হোসেন।
তিনি বলেন, কয়েক দফায় ছুটির মেয়াদ বাড়ানোর পর গত ৩০ সেপ্টেম্বর আমার ভিসার মেয়াদ শেষ হয়। ওই দেশের কফিলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কিছু টাকার বিনিময়ে ভিসার মেয়াদ আরও এক মাস বাড়িয়ে দেন। তখন বলেছিলেন যত দ্রুত সম্ভব চলে আস। কিন্তু এখন বিমানের অফিসাররা বলছেন, যাদের ভিসার মেয়াদ খুবই কম তাদেরকে তারা অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। যারা টোকেন সংগ্রহ করেছিলেন তারাও ধীরে ধীরে টিকেট পাচ্ছেন। আর আমাকে বলেছে, আগামী ৮ অক্টোবর আমি যেন এখানে এসে টোকেন সংগ্রহ করি।
টিকেটের জন্য আগে টোকেন সংগ্রহ করতে হবে, সেই নিয়ম না জেনে সরাসরি টিকেটের জন্য দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এসে ভোগান্তিতে পড়েছেন অনেকে।টিকেটের জন্য আগে টোকেন সংগ্রহ করতে হবে, সেই নিয়ম না জেনে সরাসরি টিকেটের জন্য দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এসে ভোগান্তিতে পড়েছেন অনেকে।একই ধরনের অভিযোগ করেন মুন্সীগঞ্জ, কুমিল্লা থেকে আসা কয়েকজন। গত ২৬ সেপ্টম্বর থেকেই টিকেটের আশায় রাস্তায় দিনরাত পার করছেন বলে দাবি তাদের।
কারওয়ানবাজারে হোটেল সোনারগাঁও এলাকায় সৌদি এয়ারলাইন্সের কাউন্টারে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে হোটেলের সীমানা দেওয়ালের ভেতরে টোকেনধারী প্রায় একশ যাত্রী অপেক্ষা করছেন। আর ফটকের বাইরে রয়েছেন আরও জনা পঞ্চাশেক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নিজের ভিসার অনুবাদ কপি দেখিয়ে বলেন, গত ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে সৌদি এয়ারলাইন্সের বাইরে অপেক্ষা করছি। আমি টোকেনও সংগ্রহ করতে পারিনি, ফলে আমাকে কাউন্টারের দিকে যেতে দেয়নি আনসার সদস্যরা।
তবে আগামী ৮ সেপ্টেম্বরের সৌদি এয়ারলাইন্সের টিকেট পাওয়া লক্ষ্মীপুরের মোহম্মদ আলী বলেন, গত মার্চে আমার টিকেট কাটা ছিল। কিন্তু মহামারীর কারণে ফ্লাইট বাতিল হয়ে যায়। ৪–৫ দিন আগে টোকেন সংগ্রহ করেছিলাম। তখন বলেছিল আগামী ১২ অক্টোবর এই টোকেন নিয়ে আসতে। আজকে এসে দেখি ভিড় কম। ভেতরে গেলে ওরা আগামী ৮ অক্টোবরের টিকেট বুঝিয়ে দেয়। মালিকের কাছ থেকে এক বছরের ছুটি নিয়ে এসেছিলাম। ভিসার মেয়াদও বেশ কয়েক মাস বাকি ছিল। কিন্তু কী থেকে কী হয় তা ভেবে এখনই চলে যাচ্ছি।
এদিকে সৌদি এয়ারলাইন্স থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর টিকেট হাতে পেয়েছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার শাহীদুল। শুক্রবার মধ্যরাতেই তার সৌদি এয়ারলাইন্সের বিমানে ভ্রমণ করার কথা ছিল। কিন্তু সকালেই তার করোনাভাইরাস পরীক্ষায় ফলাফল পজিটিভ এসেছে। তাই তিনি চলে এসেছেন টিকেট বাতিল করতে। ‘আমার কোনো শারীরিক সমস্যা নেই। তবুও যেহেতু পজিটিভ এসেছে তাই আমাকে বিমানে তুলবে না। সেজন্য এসেছিলাম ভিসা বাতিল করতে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ বলেছে, আমার সঙ্গে কথা বলবে না। একজন আত্মীয়ের মাধ্যমে যেন বিষয়টি সুরাহার জন্য পাঠাই।
টিকেট ব্যবস্থাপনার সার্বিক বিষয় নিয়ে সৌদি এয়ারলাইন্সের কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তারা মুখ খুলতে রাজি হননি। কোম্পানির পক্ষ থেকে কথা বলার অনুমতি নেই বলে অজুহাত দেখান তারা। তবে ফটকের বাইরে টাঙানো এক নোটিশে সৌদি এয়ারলাইন্স জানিয়েছে, আগামী ৪ অক্টোবর সকাল ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্ত সময়ে আগের মতো করেই টোকেন বিতরণ করা হবে। আপাতত দেওয়া হচ্ছে আগের টোকেনের যাত্রীদের টিকেট। করোনাভাইরাসের কারণে প্রায় ছয় মাস বন্ধ থাকার পর ঢাকা থেকে বিমান বাংলাদেশ ও সৌদি এয়ারলাইন্স সপ্তাহে ১০টি করে মোট ২০টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে সৌদি আরবে।