ভাঙনের কবলে শত শত বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন একমাত্র সড়কটিও

চকরিয়ার কোনাখালী

ছোটন কান্তি নাথ, চকরিয়া | শনিবার , ২৮ জুন, ২০২৫ at ১১:২১ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজারের চকরিয়ায় মাতামুহুরী নদীর ভয়াবহ ভাঙনের কবলে পড়ে হুমকির মুখে পড়েছে তিনটি ওয়ার্ডের অর্ধ লক্ষাধিক মানুষের যাতায়াতের জনগুরুত্বপূর্ণ একটি সড়ক, নদী তীরের কয়েকশত বসতবাড়ি। এমনকি নদী তীরের সড়কটির বিভিন্ন পয়েন্টে বিশাল অংশ নদীগর্ভে তলিয়ে গিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে রয়েছে। শুধু তাই নয়, বর্তমানে অব্যাহত ভারী বর্ষণের সাথে ভাঙন অব্যাহত থাকায় নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে তীরের শত শত বসতিও। এ অবস্থায় ভুক্তভোগী পরিবারের মানুষগুলো চরম অনিশ্চয়তায় দিনাতিপাত করছেন।

চকরিয়ার মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলার অধীনস্থ কোনাখালী ইউনিয়নের ৫, ৬ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ড এবং পুরুত্যাখালী বাজারের উত্তর পাশের জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কটির মাঝির কাটা ও জাফরের টেক পয়েন্টে নদী তীরে এই সড়কটির অবস্থান। সরেজমিন দেখা গেছে, ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের পুরুত্যাখালী বাজারের উত্তর পাশের মাতামুহুরী নদী তীরের এই সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন চলাচল করে থাকেন হাজারো মানুষ এবং বিভিন্ন স্কুলমাদ্রাসায় পড়ুয়া শত শত শিক্ষার্থী। কিন্তু ভারী বর্ষণের সঙ্গে অব্যাহতভাবে নদী তীরে ভয়াবহ ভাঙন শুরু হওয়ায় কার্যত সড়কটি দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। পায়ে হেঁটেও এই সড়ক দিয়ে চলাচল করা মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এই অবস্থায় ভুক্তভোগী শত শত পরিবারের লোকজন মাতামুহুরী নদী তীরের ভাঙন রোধকল্পে সরকারিভাবে দ্রুত প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণপূর্বক সড়কটি এবং শত শত বসতবাড়ি রক্ষার জোর দাবি জানিয়েছেন।

ভাঙনের কবলে পড়ে ভুক্তভোগী কোনাখালী ইউনিয়ন বিএনপির সদস্যসচিব মোহাম্মদ ইউনূস দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমাদের কোনাখালী ইউনিয়নে এমন এমন এলাকা রয়েছে যেখানে অতীতে কোনো উন্নয়নের ছোঁয়াও লাগেনি। যার কারণে প্রত্যন্ত এলাকার মানুষগুলো যাতায়াতের ক্ষেত্রে চরম দুর্ভোগের শিকার হয়ে আসছেন।

বিএনপি নেতা মোহাম্মদ ইউনূসের ভাষ্যবিগত ১৭ বছর ধরে কোনাখালী ইউনিয়নের তিনটি ওয়ার্ডের অন্তত লাখো মানুষ অনুন্নত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ও মাতামুহুরী নদীর অব্যাহত ভাঙনের কবলে পড়ে চরম দুর্ভোগের শিকার হয়েছে। কয়েকশত বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে বাস্তুচ্যুত হয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন। তাই বর্তমান সরকারের কাছে এসব ওয়ার্ডের ভুক্তভোগী মানুষের চাওয়া হচ্ছে, অচিরেই নদীর ভাঙন রোধকল্পে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এজন্য আমরা দলের পক্ষ থেকে উপজেলা বিএনপির কাছে এই বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছি।

চকরিয়ার মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও শিক্ষক মোহাম্মদ শোয়াইবুল ইসলাম দৈনিক আজাদীকে বলেন, কোনাখালী ইউনিয়নের মানুষগুলো প্রতিনিয়ত উন্নয়নবঞ্চিত হয়ে চরম অবহেলার শিকার হয়েছেন বিগত সময়ে। বিশেষ করে মাতামুহুরী নদী তীরবর্তী তিনটি ওয়ার্ডের হাজারো পরিবার বর্তমান বর্ষায় আরও বেশি দুর্ভোগে নিপতিত হয়েছেন। এই তিনটি ওয়ার্ডকে স্থায়ীভাবে রক্ষা করতে হলে অবশ্যই মাতামুহুরী নদীর তীরকে টেকসইভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। এজন্য নদীতীরের সড়ক এবং বসতবাড়ি রক্ষায় জরুরি ভিত্তিতে অন্তত ১৫ চেইন তীর কাম সড়কটি সিসি ব্লক স্থাপন করতে হবে। এই সিসি ব্লক দ্বারা নদীর তীর সংরক্ষণ করা হলে দীর্ঘদিনের এই সমস্যা একেবারে সমাধান হতে পারে। তাই কোনাখালী ইউনিয়ন বিএনপির পক্ষ থেকে জনগুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টি সমাধান করার দাবি জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবর আবেদন করা হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পওর বিভাগ) চকরিয়ার শাখা প্রকৌশলী মো. জামিল মোর্শেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, কোনাখালী ইউনিয়নের মাতামুহুরী নদী তীরের ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরা হবে।

এদিকে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আতিকুর রহমান দৈনিক আজাদীকে বলেন, বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার পর মাতামুহুরী নদী তীরবর্তী শত শত বসতবাড়ি, জনগুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, বিভিন্ন সড়ক ভাঙনের কবলে পড়া নিয়ে আমি অবগত হওয়ার পর তা পরিদর্শনও করা হয়েছে। ইতোমধ্যে দুই এলাকার সমস্যা সমাধানকল্পে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং কাজও শুরু করা হয়েছে। তিনি বলেন, একইভাবে কোনাখালী ইউনিয়নের তিন ওয়ার্ডের সমস্যা নিয়েও একটি আবেদন আমার কাছে দিয়েছেন ভুক্তভোগীপক্ষ। সেই আবেদন ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসক বরাবর পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ড কক্সবাজারের কাছে প্রেরিত হবে আবেদনটি। এর পর পানি উন্নয়ন বোর্ড কোনাখালী ইউনিয়নের তিন ওয়ার্ডের ভাঙন কবলিত সমস্যা রোধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঘুমের ওষুধ খেলেন হিরো আলম, হাসপাতালে নিয়ে গেলেন রিয়া মনি
পরবর্তী নিবন্ধঘোষিত সময়ের মধ্যে স্থানীয় নির্বাচন করা অসম্ভব : সালাহউদ্দিন