লালখান বাজার এলাকার মতিঝর্ণা বস্তির টিনশেডের একটি খুপড়ি ঘরে ভাড়া থাকেন রিকশা চালক আবদুর রহিম। স্ত্রী, তিন কন্যা ও দুই পুত্রসহ ছয়জনের সংসার। রিকশা চালিয়ে সংসার চলছে না, তাই স্ত্রীও কয়েকটি মেসে রান্নার কাজ করেন। তারপরেও সংসারের ঘানি টানতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে। কারণ একটাই নিত্যপণ্যের বাজারে ঊর্ধ্বমুখী। গত দুই বছরের ব্যবধানে সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের বাজার বেড়েছে ৩০ শতাংশ মতো। কিন্তু তার সাথে পাল্লা দিয়ে আয় বাড়েনি। এছাড়া প্রতি বছর বাড়ছে ঘর ভাড়া। শুধু আবদুর রহিম নয়, তার মতো প্রায় সব নিম্নবিত্তশ্রেণীর মানুষের নুন আনতে পান্তা ফুরানোর অবস্থা। শীতের এই ভরপুর সবজির মৌসুমেও ৪০-৫০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই। ফলে নিম্নবিত্ত মানুষের খাবার তালিকা থেকে ধীরে ধীরে বাদ পড়ছে সবজি। দিনমজুর আবুল হোসেন জানান, বাজারে সবজি ছাড়াও সব কিছুর দাম বাড়তি। একমাত্র কেজি ২০-২৫ টাকায় আলু পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া ডাল-ডিমের দামও বেড়েছে। অন্যদিকে সবজি ব্যবসায়ীরা বলছেন, সবজির পরিবহন ব্যয় আগের চেয়ে বেড়েছে। এছাড়া বৈরি আবহাওয়ার কারণে কৃষকের উৎপাদিত সবজি খেতে নষ্ট হয়ে গেছে। যার ফলে সবজির সরবরাহ ব্যবস্থাও ভেঙে পড়ে। গতকাল শুক্রবার নগরীর কাজীর দেউড়ি ও ২ নম্বর গেট কর্ণফুলী কমপ্লেঙ কাঁচাবাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে শীতকালীন সবজি ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫০ টাকায়। বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৪০ টাকায়। এছাড়া টমেটো প্রতিকেজি ৯০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, বেগুন ৫০ টাকা, লাউ ৩০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া কাঁচা ৩৫ টাকা, চিচিঙ্গা বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। অন্যদিকে মুলা প্রতি কেজি ৪০ টাকা, শিম ৫০ টাকা, পটল ৪০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, কচুর লতি ৬০ টাকা এবং পেঁপে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়।
কাজীর দেউড়ি বাজারের সবজি বিক্রেতা মোহাম্মদ আজম দৈনিক আজাদীকে জানান, কিছুদিন আগে ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে টানা বৃষ্টি হয়। বৃষ্টিপাতে অনেক কৃষকের সবজি খেতে নষ্ট হয়ে যায়। তাই সবজির দাম কমছে না।
ক্যাব, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এসএম নাজের হোসেন দৈনিক আজাদীকে বলেন, সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের বাজারই আসলে অস্থির। বৃষ্টি এক ফোঁটা হলে সবজি বিক্রেতারা দাম বাড়িয়ে দেন। অথচ উত্তরাঞ্চল থেকে সবজি আসতে দুই তিনদিন সময় লাগে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা বৃষ্টির অজুহাতে সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে দেন। কিছুদিন আগে যেমন, ডিজেলের দাম বৃদ্ধিতে পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধির অজুহাতে দাম বাড়িয়ে দেন। প্রশাসন কেবল রমজান মাস এলে সবজির বাজারে অভিযান চালান।