করোনাভাইরাস মহামারীর ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকার বড় উদ্যোক্তাদের জন্য ৩০ হাজার কোটি টাকার যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছিল, তা বাড়িয়ে ৪০ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেছেন, প্রণোদনার পরিমাণ কেবল বাড়ালে হবে না, এই ঋণ যেনো সঠিক সময়ে আদায় হয়, তাও নিশ্চিত করতে হবে। গত মার্চে দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর ৫ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম দফায় পাঁচটি প্যাকেজের আওতায় মোট ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেন।
এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ৩০ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ ছিল শিল্প ও সার্ভিস সেক্টরের (বড় উদ্যোক্তাদের) ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল জোগানের জন্য। পরে এই তহবিলের পরিমাণ আরও তিন হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে ৩৩ হাজার কোটি টাকা করা হয়। বৃহস্পতিবার তা আরও সাত হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে ৪০ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ গতকাল বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে একটি সার্কুলার জারি করেছে। খবর বিডিনিউজের।
সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো ওই সার্কুলারে বলা হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সার্ভিস সেক্টরের প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হিসেবে ঋণ সুবিধা প্রদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত আর্থিক সহায়তা প্যাকেজটি ৩৩ হাজার কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ৪০ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। এই প্যাকেজের আওতায় বাড়তি সাত হাজার কোটি টাকা বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ-বেজা, বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ-বেপজা এবং বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের এলাকায় অবস্থিত ‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’ টাইপ শিল্প প্রতিষ্ঠানকে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হিসেবে ঋণ দেওয়া হবে। এই ঋণের সুদের হারও হবে ৯ শতাংশ। যার মধ্যে সরকার ৪ দশমিক ৫০ শতাংশ ভর্তুকি হিসেবে দেবে। এ বিষয়ে আগে জারি করা সার্কুলারগুলোর শর্ত এক্ষেত্রেও অনুসরণীয় হবে। এর আওতায় ঋণ নিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরবরাহ করা ফরমে আগামী ৫ নভেম্বর বিকাল ৪টার মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগে আবেদন করতে হবে।
দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে প্রণোদনা প্যাকেজের পরিমাণ বাড়ানোর বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ। তবে এই ঋণ যেন যথাসময়ে আদায় হয়, সে ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের কড়া নজরদারির পরামর্শ দিয়েছে তিনি। তিনি বলেন, এমনিতেই আমাদের ব্যাংকগুলোর অবস্থা ভালো না। এরপর ঋণ খেলাপীদের একটার পর একটা অযৌক্তিক সুযোগ-সুবিধা দিয়ে ব্যাংকিং খাত তথা আর্থিক খাতকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রণোদনার ঋণ যদি ঠিকমত আদায় না হয়, খেলাপি ঋণ যদি আরও বেড়ে যায়, তাহলে কিন্তু ব্যাংকিং খাতের অবস্থা আরও খারাপ হবে।
ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ইতোমধ্যে অনেক উদ্যোক্তা প্রণোদনা প্যাকজের ঋণ পরিশোধের সময় বাড়ানোর দাবি তুলেছেন। এ ব্যাপারে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া ঠিক হবে না বলে আমি মনে করি।