বোধের দুর্বোধ্যতা

বাবুল কান্তি দাশ | সোমবার , ২৯ নভেম্বর, ২০২১ at ৮:০৬ পূর্বাহ্ণ

কোনো কিছু সম্বন্ধে জ্ঞানলাভ করতে হলেই দর্শক ও দৃশ্য বস্তুর প্রয়োজন। বস্তুবিহীন বস্তু জ্ঞান অসম্পূর্ণ বা কল্পনা মাত্র।সুখে স্বচ্ছন্দে জীবনযাত্রা নির্বাহ করে জীবনকে সার্থক করতে হলে বা সফলতায় পর্যবসিত করতে চাইলে চিন্তা ও কর্মের সামঞ্জস্য আবশ্যক। তদ্ব্যতীত সাধনায় সিদ্ধি লাভ অসম্ভব। চিন্তা ও কর্মের যথার্থ মেলবন্ধনের অভাবে ক্ষেত্রবিশেষে বিব্রত বিভ্রান্ত প্রতারিত। সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দুরদর্শিতার অভাব ঘটলে বিপর্যয় তখন অনিবার্য হয়ে ওঠে। সমাজ, রাষ্ট্রে বিশৃঙ্খলা ও অস্থিরতা প্রকট হয়ে দাঁড়ায়। বিষয়টি যখন শিক্ষা নিয়ে হয় তখন তা উদ্বেগের কারণ। ২০২০ সাল থেকে অদ্যাবধি আমরা এক কঠিন সময় পার করছি কোভিড-১৯ ভাইরাসের সংক্রমণজনিত কারণে। ২০২০ সালের মাচের্র মাঝামাঝি সময় থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। শিক্ষার্থীদের সরাসরি পাঠদান দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকার পর এবছর ১২ সেপ্টেম্বর থেকে স্বাস্‌হ্যবিধি মেনে এবং বিবিধ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরাসরি পাঠদান শুরু হয়। ধীরে ধীরে শিক্ষার্থীরা ফিরতে থাকে স্বাভাবিকতায়।
কোভিড-১৯ এর কারণে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত প্রাথমিক মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা।যা হোক ইতোমধ্যে সরাসরি শ্রেণি পাঠদান শুরু করে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তর। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বাংলা ইংরেজি এবং গণিত এই তিন বিষয়ে পরীক্ষা গ্রহণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নির্দ্দেশনা এবং প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য বলা হয়। চিন্তা ও কমের্র যে সামঞ্জস্যতা এক্ষেত্রে তা বড় ধরনের হোঁচট খাচ্ছে বলে প্রতীয়মান হয়। ২০১৯ সালে যে শিক্ষার্থী অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল বর্তমানে সে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী এবং ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী। যে বিষয়টি এখানে উল্লেখ্যনীয় তা হলো – বিজ্ঞান, মানবিক এবং ব্যবসা শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থীদের বাংলা ইংরেজি গণিত বিষয়ে পাঠদান পরীক্ষা গ্রহণ তাদের লক্ষ্য পূরণে কতটুকু সহায়ক? বিশেষত বিজ্ঞান শিক্ষার্থীদের মানসিক অবস্থা এবং বিজ্ঞান বিষয়ে তাদের শিক্ষা কতটুকু সফল হবে। দুইবছর পরে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা যখন এসএসসি পরীক্ষায় বসতে যাবে তখন বিভাগভিত্তিক বিষয় গুলো নিয়ে তাদের অবস্থা কী হবে তা কি আমরা অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারক মহল ভাবনায় নিতে সক্ষম হলেন।বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের প্রচন্ড চাপে পরতে হবে এবং সেক্ষেত্রে উচ্চ শিক্ষায় বিরূপ প্রভাব পড়বে। আমরা যদি বাস্তবতা বিচার না করে খেয়ালখুশিমত সিদ্ধান্ত গ্রহণে সচেষ্ট হই তাহলে সেখান থেকে উত্তরণের পথ খুঁজে পাওয়া মুশকিল হয়ে দাঁড়াবে। তাই এক্ষেত্রে মনীষী বার্ট্রাণ্ড রাসেল’র দুটো কথা উল্লেখ করার লোভ সংবরণ করতে পারলাম না।তিনি বলেছেন রাজার প্রদত্ত শিক্ষা,ধর্মশিক্ষা,স্কুলের শিক্ষা বা পিতামাতার শিক্ষা,ইহার কোনটারই উপর ছেলেমেয়েদের মঙ্গলের জন্য সম্পূর্ণ নির্ভর করা যায় না,কেননা প্রত্যেকটাই কোন-না-কোন একটা লক্ষ্যের সাধনের জন্য ছেলেমেয়েদের তৈয়ারি করে। কিন্তু ছেলেমেয়েদের নিজের মঙ্গলসাধনের চেষ্টা করে না। রাজা চান ছেলেরা জাতীয় ধনবৃদ্ধির সাহায্য করুক এবং বর্তমান শাসনবিধির পোষণ করুক। যাজক চান ছেলেরা পৌরহিত্যের শক্তি বর্দ্ধিত করুক। স্কুলমাষ্টার চান ছেলে স্কুলের মুখ উজ্জ্বল করুক।
পিতামাতা চান ছেলেরা বংশের মুখ উজ্জ্বল করুক। আমাদের শিক্ষার্থীরা এমন চেতনার পীড়নক হলে আমরা ক্রমশ নিকষ কালো অন্ধকারের অতল গহ্বরে পতিত হবো।বাস্তবতা বিবর্জিত হয়ে কর্তাদের মর্জিমাফিক অবাস্তব অদূরদর্শী সিদ্ধান্ত পরিকল্পনা শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন ব্যাহত হবে নিশ্চিত। শিক্ষাক্ষেত্রে যেকোনো সিদ্ধান্ত ধীরস্থির থেকে নিজ নিজ বৈশিষ্ট্যের উপর দাঁড়িয়ে তা গ্রহণে সচেষ্ট হলে জাতির মঙ্গল। শিক্ষা যেন জীবসত্তাকে মানবসত্তায় উন্নীত করতে সক্ষম হয়। অন্তর্নিহিত মানবিক গুণাবলীকে পোষণ দিতে পারে। তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণ,সুগভীর মনোনিবেশ, নিষ্ঠানন্দিত তপশ্চর্য্যা,সহানুভূতি ও সহযোগী মনোভাবাপন্ন, চিন্তা ও কম্মের্র মেলবন্ধন ঘটুক শিক্ষায়। প্রজন্ম হোক আলোকিত, দেশ হোক স্থিতিশীল উন্নত সমৃদ্ধ।।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজীবন কত ঠুনকো!
পরবর্তী নিবন্ধমাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি আবেদন