বেক্সিমকোর অস্তিত্বহীন ১৬ প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ ১২ হাজার কোটি টাকা

৪০ শতাংশ কর্মীর অস্তিত্ব নেই : বাণিজ্য উপদেষ্টা সালমান পরিবারের ২৫০ কোটি টাকার সম্পত্তি ক্রোক

| শুক্রবার , ২৪ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৮:২৩ পূর্বাহ্ণ

বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে মোট ৩২টি ফ্যাক্টরির মধ্যে ১৬টিরই কোনো অস্তিত্ব নেই। অস্তিত্বহীন এই ১৬ কোম্পানির বিপরীতে ১২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে। বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রম ও ব্যবসায় পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি এমনটি বলেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা এবং বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রম ও ব্যবসায় পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির আহ্বায়ক অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাখাওয়াত হোসেন।

এদিকে পুলিশর অপরাধ ও তদন্ত বিভাগসিআইডি সালমান এফ রহমান এবং তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা প্রায় ২৫০ কোটি টাকার সম্পত্তি ক্রোক করার কথা জানিয়েছে। সিআইডির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার জজ আদালত সমপ্রতি ওইসব সম্পত্তি ক্রোক করার আদেশ দেয়। খবর বাংলানিউজ ও বিডিনিউজের।

অপরদিকে বেক্সিমকোর ৪০ হাজার শ্রমিকের যে তথ্য দেওয়া হচ্ছে প্রাথমিক তদন্তে তার প্রায় ৪০ শতাংশের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, বলা হচ্ছে বেক্সিমকোতে ৪০ হাজার শ্রমিক রয়েছে। কিন্তু প্রাথমিক তদন্তে আমরা এর প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষের অস্তিত্ব পাইনি। অনেক তথ্য তৈরি করা হচ্ছে উত্তেজনার সৃষ্টি করার উদ্দেশে।

শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা বলেন, গত ২১ জানুয়ারি বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের কর্মচারী ও শ্রমিকরা গাজীপুরের শ্রীপুর মায়ানগর মাঠে জমায়েত হয়ে লেঅফ প্রত্যাহার করে ফ্যাক্টরিগুলো খুলে দেওয়ার দাবি জানান। তারা ঘোষণা দেন, ২২ জানুয়ারি বিকেল ৩টার মধ্যে ফ্যাক্টরি খুলে না দিলে ঢাকাটাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধসহ শাটডাউন কর্মসূচি নেবেন। তিনি বলেন, বেক্সিমকোর কর্মকর্তা, কর্মচারী, শ্রমিক ও দেশবাসীকে জানানো যাচ্ছে যে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে মোট ৩২টি ফ্যাক্টরির মধ্যে ১৬টি ফ্যাক্টরির কোনো অস্তিত্ব নেই। কিন্তু এই ১৬ কোম্পানির বিপরীতে ১২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে। ১২টি ফ্যাক্টরি ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে লেঅফ করা হয়েছে, যা সরকারের কোনো সিদ্ধান্ত নয়।

সালমান পরিবারের ২৫০ কোটি টাকার সম্পত্তি ক্রোক: এদিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা প্রায় ২৫০ কোটি টাকার সম্পত্তি ক্রোক করার কথা জানিয়েছে পুলিশর অপরাধ ও তদন্ত বিভাগসিআইডি। সিআইডির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার জজ আদালত সমপ্রতি ওইসব সম্পত্তি ক্রোক করার আদেশ দেয়। রপ্তানি বাণিজ্যের আড়ালে মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগে গত ১৮ সেপ্টেম্বর বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমানসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে ১৭টি মামলা করে সিআইডি। সালমানের ভাই বেক্সিমকো গ্রুপের চেয়ারম্যান সোহাইল এফ রহমান, সালমানের ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান এবং সোহাইলের ছেলে আহমেদ শাহরিয়ার রহমানও সেসব মামলার আসামি। সেসব মামলার তদন্তের স্বার্থে সালমান এফ রহমান ও তার পরিবারের নামে থাকা সম্পদ ক্রোকের আবেদন করেছিল সিআইডি, আদালত তা মঞ্জুর করে। কী কী সম্পদ ক্রোক করা হয়েছে, তার একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট দিয়েছে। বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা জেলার দোহার থানা এলাকায় থাকা প্রায় দুই হাজার শতাংশ জমি এবং ভূমির উপর নির্মিত স্থাপনা, গুলশানের দ্য এনভয় নামের ভবন, আহমেদ শাহরিয়ার রহমানের নামে ৬ হাজার ১৮৯ দশমিক ৫৪ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট এবং গুলশান আবাসিক এলাকার ৬৮/এ নম্বর সড়কের ৩১নম্বর প্লটের ওপর নির্মিত ট্রিপ্লেটস নামের ছয় তলা ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় (ডুপ্লেক্স) ২ হাজার ৭১৩ দশমিক ১০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট আদালতের আদেশে ক্রোক করা হয়েছে। ক্রোক হওয়া এসব সম্পত্তির বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ২৫০ কোটি টাকা বলে সিআইডির ভাষ্য।

মামলার বিবরণ দিয়ে সিআইডি বলেছে, সালমান এফ রহমান ২০২০ সাল থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে অ্যাপোলো অ্যাপারেল লিমিটেড এবং কাঁচপুর অ্যাপারেল লিমিটেড নামের দুটি কোম্পানির নামে ২১টি এলসির মাধ্যমে দুবাইতে তার ছেলের মালিকানাধীন কোম্পানি আর আর গ্লোবাল ট্রেডিংয়ে ২ কোটি ৬০ লাখ ৯৮৪ ডলারের পণ্য রপ্তানির নামে ‘অর্থ পাচার’ করেন। আসামিরা সংঘবদ্ধভাবে বৈদেশিক বাণিজ্যের আড়ালে বিদেশে টাকা পাচারের অসৎ উদ্দেশ্যে নিজেদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে পণ্য রপ্তানি করে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ১৩ অগাস্ট সালমান এফ রহমানকে গ্রেপ্তারের কথা জানায় পুলিশ। তখন থেকেই তিনি কারাগারে আছেন। তবে তার ছেলে, ভাই ও ভাইয়ের ছেলের বিদেশে থাকার খবর সংবাদম্যমে এসেছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবোতলে ভরা হচ্ছিল নোংরা পানি, হাতেনাতে ধরা ইভাইন ড্রিংকিং
পরবর্তী নিবন্ধসাবেক প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লালসহ তিনজনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা