বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্যে সিপাহি মোহাম্মদ হামিদুর রহমানকে ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। ১৯৭১ সালের ২৮শে অক্টোবর পাকিস্তানি শত্রুসেনার গুলিতে অকুতোভয় এই বীর শহীদ হন।
মোহাম্মদ হামিদুর রহমানের জন্ম ১৯৪৫ সালে চব্বিশ পরগণার ডুমুরিয়া গ্রামে। পৈত্রিক নিবাস ছিল যশোর ও খুলনা জেলার সীমান্তবর্তী খোরদা খালিশপুর গ্রাম। বাবার নাম আব্বাস আলী , মা মোসাম্মৎ কায়সুন্নেসা। ১৯৭১ সালের শুরুর দিকে তিনি সেনাবাহিনিতে যোগ দেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে জীবন বাজি রেখে শপথ নেন যুদ্ধ জয়ের। ২৮শে অক্টোবর তিনি ছিলেন মুক্তিবাহিনির একটি বিশেষ ইউনিটের সাথে।
এই ইউনিটের দায়িত্ব ছিল সিলেটের ধলই সীমান্তে অবস্থানরত শত্রুপক্ষের ঘাঁটি দখল করা। মুক্তিবাহিনির দলটি ছিল শত্রুসেনাদের তুলনায় অপেক্ষাকৃত ছোট। কিন্তু সকলেই অসম সাহসী, বিশেষ করে সদ্য সেনাবাহিনিতে যোগ দেওয়া তরুণ সিপাহি হামিদুর। ভোরবেলা শত্রুঘাঁটি আক্রমণের জন্য যখন মুক্তিসেনারা অধিনায়কের নির্দেশের অপেক্ষায়, তখনই শত্রুপক্ষের কামান গর্জে উঠলো। বাঙালি গোলন্দাজ বাহিনির কামানও থেমে রইলো না। শত্রুঘাঁটিতে ধরে গেল আগুন। হতাহত হল প্রচুর। কিন্তু একটা মেশিনগান থেকে বেরিয়ে আসতে থাকলো ঝাঁকে ঝাঁকে বুলেট। হামিদুরের ওপর দায়িত্ব পড়লো ঐ মেশিনগানটি থামানোর। নির্ভিক হামিদুর শত্রুর চোখ এড়িয়ে একা এগিয়ে চললেন বুকে হেঁটে। মেশিনগানের কাছে ছিল দুজন শত্রুসেনা। একেবারে কাছ থেকে তিনি দুজনকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়লেন। দুজনই নিহত হলো। কিন্তু হামিদুরও লুটিয়ে পড়লেন শত্রুর গুলিতে। মেশিনগান থেমে গেল। দুর্ভেদ্য ধলই সীমান্ত ঘাঁটি দখল করে নিল দুঃসাহসী মুক্তিসেনারা। হামিদুরের রক্তে রঞ্জিত হলো ধলইয়ের মাটি। এই অসম সাহসিকতার জন্য স্বাধীনতার পর হামিদুরকে বীরশ্রেষ্ঠ উপাধি দেওয়া হয়।