মরণব্যাধি লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হয়েছিলেন বিএনপি নেতা শাহজাহান মনির। এজন্য গত ছয়মাসের বেশিসময় ধরে তাকে সুস্থ করে তুলতে পরিবারের চেষ্টার কমতি ছিল না। তাকে নিয়ে চট্টগ্রাম, ঢাকার বিশেষজ্ঞদের কাছে ধরনাও দেন। দুইবার নিয়ে যাওয়া হয় ভারতেও। আত্মীয়–স্বজন, রাজনৈতিক সহকর্মী থেকে শুরু করে ভিন্ন দলের অনেকেও তার চিকিৎসায় যথাসাধ্য পাশে ছিলেন। কিন্তু সবাইকে কাঁদিয়ে গত বৃহস্পতিবার রাতে তিনি পাড়ি জমান না ফেরার দেশে। পরদিন শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে চকরিয়া পৌরসভার তিন নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ লক্ষ্যারচর সিকদারপাড়া জামে মসজিদ মাঠে নামাজে জানাজা শেষে তার দাফন সম্পন্ন হয়। পিতার দাফনের ৮ ঘণ্টা পরই পৃথিবীর আলোয় আসে ফুটফুটে এক কন্যা সন্তান। বাবা–মেয়ে কারও মুখ দেখল না কেউ।
শাহজাহান মনিরের মৃত্যুর তারিখ ২৭ জানুয়ারি। ২০১৯ সালের একই তারিখেই বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। সঙ্গী হিসেবে গাঁটছড়া বাধেন রুশনী জান্নাতের সঙ্গে। সেই তারিখেই মৃত্যু হল তার। তাদের সংসারে রয়েছে আড়াই বছর বয়সী সানজিদা হক রাফা নামের এক কন্যা সন্তান। শাহজাহান মনির চকরিয়া পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি।
তার আগে তিনি চকরিয়া কলেজ ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক এবং চকরিয়া পৌরসভা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তার বাল্যবন্ধু ও একই ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. মইন উদ্দিন জানান, শাহজাহান মনির মারা যাওয়ার পরদিন শুক্রবার সকাল ১১টায় জানাজা শেষে লাশ দাফন করা হয়। এর পরই প্রসব বেদনা শুরু হয় রেখে যাওয়া সন্তানসম্ভবা স্ত্রীর।
তখন চকরিয়া পৌরশহরের একটি প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে জন্ম দেন আরেক কন্যা সন্তানের। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, বাবা এবং সদ্যজাত মেয়ে কেউই কারো মুখ দেখতে পারেনি। কবরস্থ হওয়ার মাত্র ৮ ঘণ্টার ব্যবধানে দ্বিতীয় কন্যা সন্তানের জন্মের ঘটনায় সবাই বিস্মিত হয়েছি।
সদ্য স্বামীহারা রুশনী জান্নাতকে এখন পড়তে হয়েছে আর্থিক টানাপোড়েনে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি স্বামীর মৃত্যুতে দুই কন্যা সন্তান নিয়ে কোথায় যাবেন, এ নিয়ে তিনি দিশেহারা। নিজেদের অর্জিত যা ছিল সবটুকুই শেষ হয়ে গেছে চিকিৎসায়। রাজনীতির পাশাপাশি শাহজাহান মনিরের ফার্নিচারের দোকান থাকলেও তা এখন কে দেখভাল করবে, তাদের ভবিষ্যত কীভাবে চলবে সেই হতাশা ভর করেছে। এমনটাই জানালেন স্ত্রী রুশনী জান্নাত।