চট্টগ্রাম নগরীর ফুসফুস এই সিআরবি। সেই ছোটবেলা থেকেই আমরা দেখা এই সবুজের শতদল বনানী। আমরা সিআরবিকে হারাতে চাই না। বিট্রিশ আমল থেকেই সুন্দর প্রাণকেন্দ্র আমাদের চট্টগ্রামের এই প্রাচীন স্থান। সিআরবির নির্মল বাতাস গায়ে মেখে নিতে চাই। বন্ধ হোক এই হাসপাতাল নির্মাণ! এই সিআরবির সবুজের ছায়া-গালিচার জায়গাগুলো আমাদের নিঃশ্বাস নেওয়ার ফ্যাক্টরি, সবুজের কারখানা। বাচ্চা বুড়ো, সবার নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্য কোথাও কোনো খালি জায়গা নেই, মাঠ, পার্ক রাখা হচ্ছে না। আমরা বিদেশে গেলে দেখি এঁরা তাদের বন-জঙ্গলে, বাগানে খুব সুন্দর পরিবেশ বজায় রাখেন এবং প্রতিটি গাছের সাথে সাথে পাখিদের জন্য বাসা তৈরি করে রাখে। পাখিরা যেন ঘুরে ফিরে এসে এই নীড়ে ফিরতে পারে। পাখিদের কিচিরমিচির কোলাহলে মুখরিত হয়ে উঠে এই পার্ক সবুজের বাগানগুলো। পথিক বসার জন্য বসার জায়গা আর বেঞ্চ বানিয়ে রাখে। একটা গাছের পাতাও কেউ ধরতে পারে না। সুন্দর অনুভব করতে পারবেন কিন্তু পরিবেশ বজায় রেখে। আর আমাদের বড় জনেরা প্রতি বছর ঘুরতে যান এসব জায়গায়। ব্যাগে করে নানান কিছু আনেন কিন্তু মনের বাক্সে এই নিয়মগুলো নিতে ভুলে যান এটাই আমাদের দুঃখ। রক্ষক যখন ভক্ষক হয়ে যায়।
আমাদের এই সিআরবিকে টিকিয়ে রাখতে হলে দল মত নির্বিশেষে জাতি বর্ণ ভেদাভেদ ভুলে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে এই ঐতিহ্যবাহী সিআরবিকে রক্ষা করতে। সিআরবি আমাদের প্রকৃতির অবদানের এক বিশাল ঐশ্বর্য্য। এখানে হাঁটতে আসলেই মানুষের কিছুটা সময় পার করা হয়, মনের প্রশান্তি পাওয়া যায়। এই সিআরবি কেন্দ্রটি প্রাচীন ঐতিহ্য বহন করে আমাদের। সিআরবিকে টিকিয়ে রাখা সকলের দায়িত্ব। এই শহরটি জনবহুল ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় পরিণত হয়েছে। এখানে শান্তির নিঃশ্বাস নেওয়ার তিল পরিমাণ জায়গা কোথাও নেই। কিছু দূর পর পর সব বড় বড় দালান, সব স্থাপনাগুলো। গাছ আমাদেরকে বিনামূল্যে অক্সিজেন দিচ্ছে। এখানে বাঁচার জন্য খোলা আকাশ, খেলার মাঠ ও সবুজের সমারোহ হাওয়া খুবই জরুরি। অন্যতায় এটা এক ধরনের পরিবেশ প্রকৃতির উপর নির্মম নির্যাতন। গাছ কাটা একটা জীবন হত্যার সমান। এমবুলেন্সের অস্তিরতায় পরিণত হয়েছে মানুষের দৈনন্দিন জীবনটুকু। নিঃশ্বাস নেওয়ার ও ফেলার জন্য মাত্র কয়েকটা জায়গা রয়েছে তার মধ্যে সিআরবি উল্লেখযোগ্য। এটি সবার মিলন কেন্দ্র। তার উপর কেন চোখ পড়লো? যেখানে পরিবেশে ভারসাম্য প্রকৃতি রক্ষা করার জন্য
বৃক্ষরোপণ করা হয় সেখানে আবার বৃক্ষ কেটে পরিবেশ প্রকৃতি নষ্ট করে হাসপাতাল তৈরির চিন্তা ভাবনা আসে কেমন করে? সবুজ সমারোহ নিঃশ্বাসের ছায়াপথ, এই সবুজ বনায়নকে হাসপাতাল তৈরির নামে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে নষ্ট করার একটা চমৎকার কৌশল ছাড়া আর কিছুই নয়। চট্টগ্রামে অনেক হাসপাতাল রয়েছে যতনহীন জীর্ণশীর্ণ পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। ঐ সব হাসপাতালেই নির্মাণ করুন সুপরিকল্পিতভাবে বহুতল ভবন এবং ওখানে তৈরি করুন আপনাদের পরিকল্পনার হাসপাতালটি। জীবনের প্রয়োজনে দরকার চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র। তাই পুরানো যে সব হাসপাতালগুলো অভিভাবক হীন অবস্থায় পড়ে আছে সেগুলোর দিকে নজর দিন। যেসব সেবা কেন্দ্র রয়েছে সেসব দিকে মেধা শক্তি কাজে লাগিয়ে নিবিড় সেবা পরিচর্যা কেন্দ্রে পরিণত করুন। আমাদের যা যা ঘাটতি রয়েছে তাই নিয়ে চিন্তা করে এই হাসপাতালগুলোকে পরিচর্যা করে তৈরি করুন বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেবা কেন্দ্র স্থান চট্টগ্রাম। এই ঘনবসতিতে নতুন করে কোনো স্থাপনা নয়। আসুন মানবিক হই। মন মানসিকতার পরিবর্তন করে সুন্দর নিদর্শন হিসেবে মাইল ফলক হয়ে ইতিহাসের পাতায় লিখা থাকুক আমাদের নাম।