বিএনপি একটা জালিয়াত রাজনৈতিক দল উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, আপনাদের মনে আছে গতবছর ২৮ অক্টোবর জো বাইডেনের ভুয়া উপদেষ্টাকে বিএনপি হাজির করেছিল। ভুয়া উপদেষ্টা যখন বিএনপি কার্যালয়ে, তখন দেখি শুধু ইংরেজি বলে। পুলিশ যখন ধরে নিয়ে গেল তখন দেখি গড়গড়াইয়া বাংলা বলে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তার আগে বিএনপি কংগ্রেসম্যানদের সই জাল করেছিল। সেই সময়ে বলেছিল ভারতের অমিত শাহ ফোন করেছিল। অমিত শাহ’র অফিস থেকে বলা হলো তিনি কাউকে ফোন করেননি, যে আওয়াজ ছাড়া হয়েছিল সেটা অমিত শাহ’র নয়। তাদের এসব জালিয়াতি সবাই বুঝে গেছে। এ কারণে তাদের কেউ বিশ্বাস করে না। দেশের উন্নয়ন অগ্রগতি দেখে বিএনপি ও তাদের দোসরদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। মাঝেমধ্যে দেখি জিএম কাদেরেরও মাথা খারাপ হয়ে যায়।
গতকাল শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত কাজীর দেউড়িস্থ একটি কনভেনশন হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৪৪তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। হাছান মাহমুদ বলেন, নির্বাচনের আগে আমরা দেখেছি বিএনপি প্রতিদিন বিভিন্ন অ্যাম্বেসিতে ঘুরে বেড়াত আর দেন দরবার করত, নির্বাচনটা যাতে বন্ধ করা যায়, কোনো লাভ হয় নাই। নির্বাচন হয়েছে, ৪২ শতাংশ মানুষ ভোট দিয়েছে। যদি নির্বাচনের দিন কুয়াশা এবং প্রচন্ড ঠান্ডা না থাকত তাহলে আরো বেশি মানুষ ভোট দিত। আর বিএনপি যদি নির্বাচন প্রতিহতের ঘোষণা, মানুষের উপর হামলা, ট্রেনের মধ্যে শিশুসন্তানসহ পুরো পরিবারকে জ্বালিয়ে হত্যা না করত তাহলে ভোটের হার ৬০ শতাংশের বেশি হত। গত দু’তিন বছরে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত অনেক দেশে নির্বাচন হয়েছে, সেখানে অনেক দেশে ৪০ শতাংশের কম ভোট পড়েছে। যদিওবা সেখানে নির্বাচনে বর্জন ও প্রতিহতের কোনো হুমকি ছিল না।
মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহাতাব উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন। বাংলাদেশে অত্যন্ত চমৎকার নির্বাচন হয়েছে উল্লেখ করে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, নির্বাচন যদি চমৎকার না হত তাহলে পৃথিবীর ৮০টা দেশের সরকার কিংবা রাষ্ট্র প্রধান আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানাতেন না। সর্বশেষ দুদিন আগে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীও আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছে। এজন্য বিএনপির মাথা খারাপ। সম্ভবত সেজন্য বিএনপি নেতা ড. মঈন খান ইদানিং জ্যোতিষীর মতো কথা বলছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসেছিলেন, তারা বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যই এই সফরে এসেছিলেন। এবং আমার সাথে দ্বি–পাক্ষিক বৈঠকে কিভাবে সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাব, সেটি নিয়ে কথা বলেছেন। এমনকি আমরা যদি কোনো কোনো ক্ষেত্রে কিছু রিফর্ম করি তাহলে আমাদেরকে জিএসপি সুবিধাও ফিরিয়ে দেয়ার অভিপ্রায়ও তারা ব্যক্ত করেছেন। একইসাথে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা থেকে কাটিয়ে উঠার লক্ষ্যে তাদের একটি বিশেষ তহবিল আছে। সেখান থেকে তারা সাহায্য করার কথাও বলেছেন। সুতরাং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত চমৎকার। আমরা সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যেই কাজ করছি। এজন্যই বিএনপির মাথাটা বেশি খারাপ।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আজকে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে, বাংলাদেশের মানুষের স্বপ্নের বাস্তবায়ন ঘটাতে হলে, জননেত্রী শেখ হাসিনার বিকল্প একমাত্র শেখ হাসিনা, এইদেশে আর কোনো বিকল্প নাই। তিনি জাতিকে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন ডিজিটাল বাংলাদেশের। এবং সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন ঘটেছে। ২০১৮ সালে আমাদের স্লোগান ছিল আমার গ্রাম আমার শহর। আজকে গ্রামগুলো শহরের মত হয়ে গেছে, গ্রাম আর শহরের মধ্যে কোনো পার্থক্য নাই। তিনি বলেন, এবার আমরা স্লোগান দিয়েছি ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’। স্মার্ট বাংলাদেশ বলতে, স্মার্ট সোসাইটি, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নেন্স এবং স্মার্ট পিপলস। এই চারটি অনুষঙ্গকে আমরা সাথে নিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ রচনা করতে চাই। ইনশাল্লাহ জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা এই অভিযাত্রায়ও বিজয়ী হব। কিন্তু আমাদের অভিযাত্রাকে আটকে দিতে চায় বিএনপি এবং তাদের দোসররা। সেই কারণেই নানা ষড়যন্ত্র।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন বলেছেন, বাংলাদেশের দুটি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণমণ্ডিত। একটি হল ১৯৭২ এর বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন এবং আরেকটি ১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন। এ দুটি দিনের অপূর্ব মিল ও সমন্বয় রয়েছে। এদের একজন পিতা, আরেকজন কন্যা। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় পরিপূর্ণতা পেয়েছিল এবং বাংলাদেশের মানুষ অর্থনৈতিক মুক্তির স্বপ্ন বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখেছিল। ঠিক একইভাবে বঙ্গবন্ধু হত্যার শিংকলিত বাঙালি শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে ঘুরে দাঁড়াবার শক্তি অর্জন করেছিল। আজ বাংলাদেশ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঘুরেই শুধু দাঁড়ায়নি; সকল আর্থসামাজিক, বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধনে একটি অবিনাশী শক্তির উৎসে পরিণত হয়েছে।
মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেছেন, যারা বাংলাদেশ চায়নি, এখনো চায় না এবং ভবিষ্যতেও চায়বে না তাদের মুখ্য শক্তি বিএনপি ও তার মিত্ররা মনে করেছিল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়ে গেলেও সরকার টিকবে না। তাদের সে আশা পূর্ণ হয়নি। নির্বাচিত শেখ হাসিনার সরকার টিকে আছে এবং মেয়াদ উত্তীর্ণ পর্যন্ত টিকে থাকবে। কারণ বিএনপির বিদেশি মুরব্বীরাও বুঝে গেছেন বিএনপি একটি কাগজে বাঘ; হুংকার দিতে জানে শুধু কিন্তু কাজের কাজ তাদের দ্বারা কোনো হয়নি, হবেও না। কারণ তারা অকাজ ও অঘটনের খলনায়ক।
সভাপতির বক্তব্যে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেছেন, শেখ হাসিনার হারাবার কিছু নেই। তিনি মা–বাবাসহ স্বজন হারালেও বাংলাদেশের আপামর জনগণ এখন তার আপনস্বজন। এখন তার সামনে আছে সমগ্র পৃথিবী জয় করার প্রত্যয়।
মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনীর সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহ–সভাপতি অ্যাড. ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, খোরশেদ আলম সুজন, আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শফিক আদনান, শফিকুল ইসলাম ফারুক, অ্যাড. শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, চন্দন ধর, মশিউর রহমান চৌধুরী, চট্টগ্রাম–১০ আসনের সংসদ সদস্য মো. মহিউদ্দিন বাচ্চু, কার্যনির্বাহী সদস্য সাইফুদ্দিন খালেদ বাহার, রোটারিয়ান মো. ইলিয়াছ, ড. নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু, থানা আওয়ামী লীগের সিদ্দিক আলম, সাহাবউদ্দিন আহমেদ, কাজী আলতাফ হোসেন, এ এস এম ইসলাম, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের মো. ইকবাল হাসান, প্যানেল মেয়র ও ২৫নং রামপুর ওয়ার্ডের আহ্বায়ক আবদুস সবুর লিটন, জানে আলম, ফারুক আহমেদ, জহুরুল আলম জসিম, শেখ সরওয়ার্দী, দিদারুল আলম মাসুম, মো. ইলিয়াছ সরকার, মো. রিদুয়ান।
সভামঞ্চে উপস্থিত ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহ–সভাপতি নঈম উদ্দিন চৌধুরী, উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য একেএম বেলায়েত হোসেন, শফর আলী, শেখ মাহমুদ ইছহাক, চট্টগ্রাম–৮ আসনের সংসদ সদস্য আবদুচ ছালাম, মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক এমপি নোমান আল মাহমুদ, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক হাজী মো. ইসহাক, মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা জুবাইরা নার্গিস খান, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী প্রমুখ।
এরপর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে নগরীর কদম মোবারক এতিমখানায় আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ উপ কমিটির উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে সুবিধা বঞ্চিতদের মাঝে সুষম খাবার বিতরণ করেন। আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিনের সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি শাহজাদা মহিউদ্দিন প্রমুখ।