বিএনপির নেতারা জোশে এখন হুঁশ হারিয়ে ফেলেছেন বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ এমপি। তিনি বলেছেন, আমি শুধু একটা কথাই বলব, জোশে হুঁশ হারায়েন না। বেহুঁশ হইয়েন না। রফিকুল ইসলাম মাদানীকে (শিশু বক্তা) দেখছেন না, ওর হুঁশ ফিরে আসার পর তো পা জড়ায় ধরছে সকলের। আর আপনাদের হুঁশ ফিরে আসলে হয়ত ওর মতো পা জড়ায় ধরতে পারেন।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে নগরীর কাজির দেউড়ির ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে কেন্দ্রীয় যুবলীগ আয়োজিত চট্টগ্রাম বিভাগের প্রস্তুতি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
আগামী ৪ ডিসেম্বর পলোগ্রাউন্ডে এবং ৭ ডিসেম্বর কঙবাজারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভা সফল করার লক্ষ্যে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলাসহ ১১ জেলা যুবলীগের এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
মির্জা ফখরুল ইসলামকে মিথ্যাবাদী উল্লেখ করে হানিফ বলেন, মির্জা ফখরুল শিক্ষক ছিলেন। শিক্ষকরা চমৎকারভাবে ছাত্রদের বুঝিয়ে বলতে পারেন। তিনি এখন রাজনীতির মাঠে চমৎকারভাবে মিথ্যাচার করেন। তিনি যেভাবে মিথ্যাকে বর্ণনা করেন তাতে তার জুড়ি মেলা ভার। বিএনপির মহাসচিব বিভিন্ন সমাবেশে দেশের বিদ্যুৎ ও রিজার্ভ নিয়ে মিথ্যাচার করছেন। অথচ বর্তমানে দেশের রিজার্ভ আছে ৪৯ বিলিয়ন ডলার। অপরদিকে, বিএনপির আমলে রিজার্ভ ছিল মাত্র সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলার। দেশের শতভাগ মানুষকে বিদ্যুতের আওতায় আনা হয়েছে। মির্জা ফখরুল এখন মিথ্যা শেখানোর শিক্ষক। তারা জ্বলন্ত ল্যাম্পপোস্টের নিচে হারিকেন হাতে নিয়ে বিদ্যুৎ সংকটের মিছিল করে।
মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, বিএনপির সেই আগের কথার জোর কিন্তু নেই। এখন সুরটা কিছু নরম হয়ে গেছে। মিউমিউ শব্দ এসেছে এখন তাদের। এর একটাই কারণ, আওয়ামী যুবলীগের ১১ তারিখের জনসভা। যুবলীগের এক সমাবেশ দেখে বিএনপির অনেকের হুঁশ ফিরে আসছে। তবে বিএনপির মিথ্যা বলার জুড়ি নেই। মিথ্যাচার করে জাতিকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে বিএনপি।
হানিফ বলেন, আপনারা ভেবে দেখুন কী ছিল বাংলাদেশ আর এখন কী হয়েছে। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। জননেত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে তিন বছরের মধ্যে আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছি। আর বিএনপির আমলে পরপর পাঁচবার দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ান হয়েছে।
তিনি বলেন, তাদের নেতা বেগম খালেদা জিয়া দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি এখন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবিকতায় জেলের সেই কয়েদি এখন বাসায় আছেন। তাদের আরেক নেতা তারেক রহমান মুচলেকা দিয়ে দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছে। পলাতক আসামি, এখন আবার প্রধানমন্ত্রী হতে চায়। তাদের স্বপ্ন কোনোদিন পূরণ হবে না। এই বাংলার মাটিতে এই দুর্নীতিবাজ, খুনিদের জনগণ দেখতে চায় না।
প্রস্তুতি সভায় সভাপতিত্ব করেন যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ। সঞ্চালনায় ছিলেন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল। সভাপতির বক্তব্যে যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিএনপির কোনো নেতার রাষ্ট্র পরিচালনা করার কোনো যোগ্যতা নেই। না আছে খালেদা জিয়ার, না আছে তার গুণধর পুত্র তারেকের। এই যোগ্যতা শুধু বঙ্গবন্ধুর কন্যারই আছে। আওয়ামী লীগের সরকার মানুষকে স্বপ্ন দেখিয়ে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার যোগ্যতা রাখে। এই যোগ্যতা অর্জন করতে হলে দুর্নীতি পরিহার করতে হবে। এই যোগ্যতা অর্জন করতে হলে রাষ্ট্র পরিচালনার দক্ষতা থাকতে হয়। বিএনপির এই দক্ষতা নেই বলে আজ তারা এ দেশকে ধ্বংস করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। দক্ষতা নেই বলে নেতিবাচক রাজনীতির দিকে বিএনপি ধাবমান। কোনো বিদেশি প্রভুর হস্তক্ষেপে বা নির্দেশনায় বাংলাদেশে নির্বাচনও হবে না, সরকারও পরিবর্তন হবে না।
তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আজ অতুলনীয় জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। এমন কোনো ক্ষেত্র নেই, এমন কোনো গোত্রের মানুষ নেই যেখানে তাঁর সেবার সুফল পৌঁছায়নি। আজকে পদ্মা সেতুর পর চট্টগ্রামবাসীর স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু টানেল দৃশ্যমান এবং চালু হওয়ার জন্য অপেক্ষমাণ। এই টানেল দেশের অর্থনীতিতে বড় প্রভাব রাখবে। দেশের জিডিপিতে প্রবৃদ্ধি বাড়াতে সাহায্য করবে। টানেল নির্মাণ শেষ হলে চট্টগ্রাম শহর চীনের সাংহাই শহরের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ এর মডেলে গড়ে তোলা হবে।
মিথ্যার উপর ভিত্তি করে রাজনীতি করা বিএনপির জন্মগত বৈশিষ্ট্য বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিএনপি আমাদের প্রজন্মকে বিকৃত ইতিহাস শেখানোর চেষ্টা করেছে। বিএনপিকে উদ্দেশ্যে করে পরশ বলেন, ক্ষমতায় আসতে হলে প্রথমে তাদের দেশের মানুষের কাছে মাফ চাইতে হবে। ২০০৬ সাল পর্যন্ত এদেশের মানুষের ওপর অত্যাচার চালিয়েছে। ভয়ভীতি দেখিয়ে বোমাবাজি করে দেশ চালানো যায় না।
সভায় ৪ ডিসেম্বরের জনসভাকে জনসমুদ্রে পরিণত করতে যুবলীগের চেয়ারম্যান চট্টগ্রাম বিভাগের যুবলীগের নেতাদের দিকনির্দেশনা দেন। ৪ ডিসেম্বর পলোগ্রাউন্ডের জনসভায় সকাল ১১টার মধ্যে যুবলীগের নেতাকর্মীদের সুশৃঙ্খলভাবে প্রবেশ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী না যাওয়া পর্যন্ত সমাবেশস্থলে থাকার নির্দেশ। জনসভায় যুবলীগের নেতাকর্মীদের আলাদাভাবে চেনার জন্য মাথায় লাল টুপি, হাতে যুবলীগের ছোট্ট পতাকা নিয়ে যেতে হবে। ব্যানার নিয়ে গেলেও ব্যানার নিয়ে মাঠে প্রবেশ করা যাবে না। জননেত্রী শেখ হাসিনা, বঙ্গবন্ধু ও শেখ ফজলুল হক মনির ছবি ছাড়া কারো ছবি ও স্লোগান দেয়া যাবে না।
পলোগ্রাউন্ডে মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা যুবলীগের পক্ষ থেকে ২ লাখ নেতাকর্মী উপস্থিত থাকবেন বলে জানান যুবলীগের চেয়ারম্যান। সভার এক পর্যায়ে তিনি মহানগর যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীদের কাছ থেকে কে কত নেতাকর্মী জনসভায় নিয়ে আসতে পারবেন তা জানতে চাইলে মহানগরীর নেতারা ১ লাখ নেতাকর্মী নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। দক্ষিণ জেলার সভাপতি দিদারুল ইসলাম ৫০ হাজার এবং উত্তর জেলা যুবলীগের নেতারা ৫০ হাজার নেতাকর্মী নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
প্রস্তুতি সভায় বক্তব্য রাখেন যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মঞ্জুর আলম শাহীন, মুজিবুর রহমান চৌধুরী নিঙন এমপি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নাঈম ও মুহাম্মদ বদিউল আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক গাজী মাজহারুল ইসলাম, মো. সাইফুর রহমান সোহাগ, মশিউর রহমান চপল, আবু মনির মো. শহিদুল হক রাসেল, মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ, মীর মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, জহিরুল ইসলাম মিল্টন, দেলোয়ার হোসেন শাহজাদা, এনআই সৈকত, নবীরউজ্জামান বাবু, আদিত্য নন্দী, আবদুর রহমান, নাসির উদ্দিন মিন্টু, গিয়াস উদ্দিন আজম, আবুল কালাম আজাদ, মোক্তাদির চৌধুরী কামাল, মোনায়েম খান, মঈনুল ইসলাম মামুন, রেজাউল করিম বাপ্পী, নিয়াজ মোর্শেদ এলিট প্রমুখ।