এক তরুণীকে নির্যাতনের ভিডিও সমপ্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর বাংলাদেশে তার বাবা ভেবেছিলেন, মেয়ে তার চাঁদপুরের শ্বশুরবাড়িতে রয়েছেন। কিন্তু বহু দূরে ভারতের কোনো এক রাজ্যে ঘটনাটি ঘটেছে জানার পর মেয়েকে ফিরে পাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়েছেন। পাশাপাশি জড়িতদের বিচারের দাবি জানিয়েছেন ঢাকার ফুটপাতের এই দোকানদার। গতকাল শুক্রবার তিনি বলেন, যেভাবেই হোক আমার মেয়েকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিন। আমার মেয়ে এত দূর, অন্য দেশে আছে তা কল্পনাও করতে পারিনি। খবর বিডিনিউজের।
কিশোরগঞ্জের বাসিন্দা এই ব্যক্তি জানান, তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করা তার মেয়েটি মগবাজার এলাকার বাসিন্দা চাঁদপুরের এক ছেলের সঙ্গে প্রেম করে সাত বছর আগে বিয়ে করে। তাদের তিন বছর বয়সী এক মেয়ে আছে। সাড়ে তিন বছর আগে জামাই কুয়েতে গেলে মেয়েটি মাঝে মধ্যে ঢাকায় এসে থাকত। তার জীবন ভালোই চলছিল। দেড় বছর আগে মেয়েটি মগবাজারে তার স্বামীর বন্ধু হৃদয়ের মাধ্যমে দুবাই যাওয়ার ভাবনার কথা জানালে তিনি নিষেধ করেছিলেন মেয়েকে। তারপরও মেয়েটি নাছোড়বান্দা ভাব প্রকাশ করে বলে তিনি জানান।
মেয়েকে নির্যাতনের ঘটনায় ঢাকার হাতিরঝিল থানায় মানবপাচার ও পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে নির্যাতনের শিকার মেয়েটির বাবা ‘টিকটকার’ হৃদয় বাবুসহ কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করেছেন। নিজের অসহায়ত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, ফুটপাতে জুস বিক্রি করি, পড়াশোনাও করিনি। কতকিছু বুঝি না। ছোট্ট নাতনিকে আমার কাছে রাখতাম আর মেয়ে চাঁদপুরেই থাকত। এক বছর ধরে মেয়ের কোনো খবর নেই। মনে করেছিলাম, মেয়ে চাঁদপুরে শ্বশুরবাড়িতে আছে। কিন্তু এখন দেখি মেয়ে আমার ভারতে, কেমন একটা নির্যাতনের শিকার।
মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার দুই মেয়ে এক ছেলে। মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি আর স্ত্রীসহ চারজনকে নিয়ে মগবাজার এলাকায় বসবাস করছি। কিন্তু করোনাভাইরাসের সময় সব এলোমেলো হয়ে যায়। সংসার আর চলছিল না বলে পুরো পরিবারকে গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জ পাঠিয়ে দিই। ঢাকায় একা থাকতে গিয়ে মাঝে মধ্যে অসুস্থ হয়ে যাই। তাই এর মাঝে আর মেয়ের খবর নেওয়া হয়নি।
তার মেয়ে ছোটবেলা থেকে একটু চঞ্চল প্রকৃতির ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, তার পড়াশোনা না জানা মেয়ে এভাবে ভারতে যেতে পারে না। তাকে ফুঁসলিয়ে পাচারের উদ্দেশ্যে নিয়ে গেছে।
ডিএমপির তেজগাঁওয়ের উপকমিশনার মো. শহীদুল্লাহ বলেন, অভিযুক্ত এবং ঘটনার শিকার তরুণীকে যথাযথ প্রক্রিয়ায় দেশে ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ নেবে পুলিশ।