বাড়ছে মাস্কসহ করোনা সুরক্ষা সামগ্রীর দাম

জাহেদুল কবির | মঙ্গলবার , ১৭ জুন, ২০২৫ at ৪:৪৮ পূর্বাহ্ণ

করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে বাধ্যতামূলক মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তাই দীর্ঘ সময় পর অনেকে আবার মাস্ক কেনার দিকে ঝুঁকছেন। তবে মাস্ক কিনতে গিয়ে হতাশ হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। সরবরাহ সংকটের অজুহাতে প্রতি বাক্স মাস্কের দাম ৮০ থেকে ৯০ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে মাস্কের দাম বৃদ্ধি করায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন ক্রেতারা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, মাস্কের দাম দীর্ঘ সময় স্থিতিশীল ছিল। এখন হঠাৎ করে মাস্কের চাহিদা বাড়ায় কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে আমরা আগের দামে মাস্ক পাচ্ছি না। যে পরিমাণ মাস্কের চাহিদা দিচ্ছি, তারা তার অর্ধেক মাস্কও আমাদের সরবরাহ দিচ্ছে না। এদিকে শুধু মাস্ক নয়, অনেক দোকানে মিলছে না হ্যান্ড স্যানিটাইজারও। অনেক দোকানদার বাড়তি দামে বিক্রির আশায় স্যানিটাইজার ‘নাই’ বলে ক্রেতাদের ফেরত দেয়ার অভিযোগও পাওয়া যাচ্ছে। আবার যা পাওয়া যাচ্ছে তাও বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে।

গতকাল সোমবার নগরীর সার্জিক্যাল পণ্য বিক্রির বৃহৎ পাইকারী বাজার হাজারী লেন এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ এলাকার বিভিন্ন ফার্মেসিতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোরবানির ঈদের পর দেশে নতুন করে করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ায় মাস্কসহ সুরক্ষা সামগ্রীর দাম বাড়িয়ে দেন ব্যবসায়ীরা। অথচ করোনার চলমান এই ভ্যারিয়েন্ট অতি সংক্রামক হওয়ায় মাস্ক পড়াটা বাধ্যতামূলক বলছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু বরাবরের মতো ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট তৈরি রাতারাতি দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। ঈদের আগে দেশের বাজারে ভালো মানের গেটওয়েল ব্র্যান্ডের মাস্ক প্রতি বাক্সের বিক্রি হয়েছিল ১৩০ টাকায়। দুইদিনের ব্যবধানে সেই মাস্ক বাড়তে বাড়তে ২২০ টাকায় গিয়ে ঠেকে। এছাড়া সাধারণ মানুষের যেসব মাস্ক বক্সপ্রতি ১০০ থেকে ১১০ টাকা বিক্রি হতো, সেই মাস্ক এখন বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত ৫ বছর আগে দেশে যখন প্রথম করোনা শনাক্ত হয়, তখনও একশ্রেণীর ব্যবসায়ী তাদের হাতে মজুদ থাকা করোনার সুরক্ষা সামগ্রী বেশি দামে বিক্রি করেন। ৪০ টাকার হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিক্রি হয় তিনগুণ দামে। আতঙ্কিত হয়ে অনেক মানুষ এসব পণ্য কিনেন। মাস্ক ও হ্যান্ড গ্লাভসের বাজারেও তৈরি হয় নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি। এবার করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়তে থাকায় সেই সিন্ডিকেট আবারও সক্রিয় হয়েছে। প্রশাসন এখন থেকে তদারকি না করলে এবারও দাম আকাশচুম্বী হয়ে যাবে।

হাজারী লেন এলাকার কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ায় হঠাৎ করে মাস্কের দাম বেড়ে গেছে। সরবরাহ ঠিক না থাকলে দামও আরো বাড়তে পারে। আমরা মাস্ক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে পণ্যের চাহিদা দিয়েছি। কিন্তু তারা আমাদের চাহিদা মতো পণ্য দিতে পারছে না। এতে তো আমাদের তেমন কিছু করার নাই। এখন ক্রেতারা মাস্ক চাচ্ছেন আমরা বিক্রি করতে পারছি না।

হাজারী লেইনের অর্কিড প্লাজার বেসিক সার্জিক্যালের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ আবু সালেহ দৈনিক আজাদীকে বলেন, কোনো পণ্যের যখন দাম বাড়ে, তখন ব্যবসায়ীদের দিকে আঙ্গুল উঠে। বিশেষ করে কৃত্রিম সংকট বা সিন্ডিকেট কারসাজির অভিযোগ করা হয়। বাস্তবতা হচ্ছেকোনো পণ্যের যখন হঠাৎ করে চাহিদা বেড়ে যায় তখন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকেও পণ্য সরবরাহ দিতে হিমশিম খেতে হয়। কিন্তু সাধারণ মানুষ ব্যবসায়ীদের কাঠগড়ায় তোলেন।

আসিফুল হক নামের এক ক্রেতা জানান, করোনার প্রকোপ বাড়ার পর থেকে যেসব মাস্কের দাম বাড়ানো হয়েছে, এগুলোতে কম দামে কেনা। প্রতিটি বাক্সে যদি ব্যবসায়ীরা ৮০৯০ টাকা লাভ করেন, তাহলে এটাকে তো নৈরাজ্য বলতে হবে। লাভ করার তো একটা সীমা আছে। তাই প্রশাসনকে এদিকে নজর দিতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধইরানে বাংলাদেশি ও স্বজনদের জন্য হটলাইন
পরবর্তী নিবন্ধখালে গোসল করতে নেমে ডুবে নানি-নাতনির মৃত্যু