.নগেন্দ্রনাথ বসু বাংলা ভাষায় প্রথম বিশ্বকোষ প্রণেতা। দীর্ঘ ২৭ বছরের সাধনা ও অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল ২২ খণ্ডের বিশ্বকোষ রচনা করে তিনি বাংলা সাহিত্যে বিশেষ স্থান অধিকার করে নিয়েছেন। প্রাচীন পুঁথি ও পুরাতত্ত্বের প্রতিও ছিল তাঁর গভীর আকর্ষণ।
নগেন্দ্রনাথ বসুর জন্ম ১৮৬৬ সালের ৬ জুলাই কলকাতায়। সাহিত্যের প্রতি প্রবল আকর্ষণে তিনি প্রথম জীবনে ছদ্মনামে কবিতা লিখতেন। পরবর্তীসময়ে পত্রিকা সম্পাদনা ও লেখালেখিকেই পেশা হিসেবে বেছে নেন। বেশ কিছু কাব্যনাট্য ও নাটক রচনার পাশাপাশি শেকসপিয়রের ‘হ্যামলেট’ ও ‘ম্যাকবেথ’ অনুবাদ করেন। ‘শব্দেন্দু মহাকোষ’ নামে বাংলায় ও ইংরেজিতে অভিধান প্রকাশে তিনিই প্রথম সংকলকের ভূমিকা পালন করেন। তাঁর অপর অনন্য সৃষ্টি ‘বঙ্গের জাতীয় ইতিহাস’। পুরাতাত্ত্বিক আবিষ্কার ও পুঁথি সংগ্রহের জন্য তিনি ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে ভ্রমণ করেছেন। সংগৃহীত তাম্রশাসন, শিলালিপি ও পুথির ভিত্তিতে ‘নাগরাক্ষর উৎপত্তি’ নামে একটি ঐতিহাসিক ও আকর্ষণীয় প্রবন্ধ লেখেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ খোলা হয়েছিল তাঁর সংগৃহীত ব্যক্তিগত পুঁথি সম্বল করে। ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিষয়ে অসাধারণ অবদানের জন্য তাঁকে ‘প্রাচ্যবিদ্যা মহার্নব’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। পিতাম্বর দাসের ‘রসমঞ্জরী’, জয়ানন্দের ‘চৈতন্যমঙ্গল’, চণ্ডীদাসের অপ্রকাশিত ‘পদাবলী’ সহ বেশ কিছু প্রাচীন গ্রন্থের সম্পাদনাও তাঁর উল্লেখযোগ্য কীর্তি। তবে ‘বিশ্বকোষ’ প্রণয়ন করে নগেন্দ্রনাথ বসু বাংলা সাহিত্যাঙ্গনে বিখ্যাত হয়েছেন। ১৯৩৮ সালের ১১ অক্টোবর এই সাহিত্যসেবীর জীবনাবসান ঘটে।