এমন মজা হয় না, গায়ে সোনার গয়না,/বুবুমনির বিয়ে হবে, বাজবে কত বাজনা। ষাটের দশকে স্বনামধন্য চিত্র পরিচালক প্রয়াত সুভাষ দত্তের পরিচালনায় নির্মিত ‘সুতরাং’ ছবির জনপ্রিয় একটি গানের প্রথম দু’টি লাইন। সেকালে ছবিটি পূর্ব পাকিস্তানের সিনেমাপ্রেমী দর্শকের মাঝে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছিল। গানটি আমরা আমাদের ছোটবেলায় সকল শ্রেণির মানুষের মুখে মুখে গীত হতে শুনেছি। ঐ ছবিতেই প্রথম নায়িকা হিসেবে সুভাষ দত্তের বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর পোপাদিয়া গ্রামে জন্ম নেওয়া চলচ্চিত্র জগতের মিষ্টি মেয়ে হিসেবে পরিচিত ‘কবরী’। পরবর্তীতে বাংলা চলচ্চিত্রের আরেক দিকপাল খান আতাউর রহমানের ‘সাত ভাই চম্পা’ ছবিতে পারুল চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে উঠে আসেন তিনি। এরপর ময়নামতি, আবির্ভাব, নীল আকাশের নীচে, সুজন সখি, রংবাজ, সারেংবউ, বধুবিদায় এবং তিতাস একটি নদীর নাম সহ অসংখ্য ছবিতে অভিনয় করে তিনি বাংলা ছবির দর্শকদের হৃদয়ের মনিকোঠায় স্থান করে নিয়েছিলেন।
১৯৭১ এর ২৫ মার্চ যখন বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাংলার নিরস্ত্র, নিরীহ মানুষের উপর হায়েনার মত ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, তখন মিষ্টি মেয়ে ‘কবরী’ তাঁর গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন এবং একসময় অনেক কষ্টে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মিত্র শক্তি ভারতে পাড়ি জমান। ঐ দেশে অবস্থান করেই তিনি ক্ষান্ত ছিলেন না, ভারতের আনাচে-কানাচে চারণের মত ঘুরে বেড়িয়ে মুক্তিযুদ্ধের তহবিল সংগ্রহে প্রাণপণ চেষ্টা করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাংবাদিকদের কাছে বর্বর পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংস হত্যা, নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর স্বাধীন মাতৃভূমিতে এসে আবারও চলচ্চিত্রে অভিনয় এবং প্রযোজনায় মনোনিবেশ করেন। একসময় তিনি বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে নারায়ণগঞ্জ থেকে সরাসরি ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। রাজনীতি, সামাজিক কর্মকান্ডসহ চলচ্চিত্র পরিচালনাও তিনি সমানতালে চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু বিশ্বব্যাপী মহামারীরূপে আবির্ভূত করোনার কাছে হার মেনে লাখো ভক্তের হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসার এই তারকা শিল্পী না ফেরার দেশে চলে গেলেন। আমরা তার আত্মার শান্তি কামনা করে শোক সন্তপ্ত পরিবারকে সমবেদনা জানাই।
শেখ মোজাফফর আহমদ, ফোররক সেন্টার, নজুমিয়া হাট, চট্টগ্রাম।