নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, আজকের বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিকভাবে এটাকে অনেকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে বাংলাদেশ এগিয়ে গেছে। এই চট্টগ্রাম কিভাবে বদলে যাচ্ছে আমরা বুঝতে পারছি না, এই বন্দর কিভাবে বদলে যাচ্ছে আমরা বুঝতে পারছি না। এই চট্টগ্রাম বন্দর শুধু আমাদের দেশে না, এই বন্দরকে ঘিরে আন্তর্জাতিক ভাবেও বিশাল একটা আঞ্চলিক চাহিদা তৈরি হয়েছে।
গতকাল রোববার দুপুরে নগরীর রেডিসন ব্লু বে ভিউ হোটেলে ‘ফ্রেইট ফরওয়ার্ডিং এবং লজিস্টিক সেক্টরের দক্ষতা উন্নয়ন’ ও ‘ইন্ডাস্ট্রি অ্যাকাডেমিয়া কোলাবোরেশন’ শীর্ষক লজিস্টিক ডিপ্লোমা কোর্সের প্রি-লঞ্চিং অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী আজকে একটা পরিকল্পিত উন্নয়নের কথা বলছেন। বাংলাদেশের কোনো মানুষ এখন অভাবে নাই। আমি উত্তরবঙ্গের মানুষ। আমি দেখেছি, দেশের মানুষ কিভাবে অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটিয়েছে। না খেয়ে মারা গেছে। কয়েকদিন ধরে বাংলাদেশে মানবাধিকার নিয়ে খুব কথা হচ্ছে। মানবাধিকার নিয়ে নানা কথা বলে বাংলাদেশকে খাটো করা হচ্ছে। জাতিসংঘের একজন কর্মকর্তাও এসে মানবাধিকার নিয়ে কথা বলে গেছেন। আমার তাদের কাছে জানতে ইচ্ছে করে- মানবাধিকার আসলে কি ? শুধু মিছিল-মিটিং করার অধিকারই কি মানবাধিকার? দেশে তো বাকস্বাধীনতা আছে, মানবাধিকার বিষয়ে জাতিসংঘের যেসব নির্দেশনা আছে বাংলাদেশ সেগুলো প্রতিপালন করছে, তাহলে মানবাধিকারের কথা বলে বাংলাদেশকে খাটো করা হচ্ছে কেন?’ মানবাধিকার হচ্ছে সেই অধিকার যা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু আমাদের সংবিধানে মৌলিক অধিকার হিসেবে সন্নিবেশিত করে গেছেন। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা একজন নাগরিকের জন্য এগুলোই মৌলিক অধিকার।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আপনারা জানেন, এই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সময় শিক্ষার চেয়ে অস্ত্রবাজি বেশি হতো। এটি সে সময়ের বাংলাদেশের চিত্র ছিল। সেই পরিবেশ কি এখন আছে, না নাই, পরিবর্তন হয়ে গেছে। বছরের পর বছর ধরে সেশন জট আমাদের হতাশ করে দিতো। সেই হতাশা থেকে আমরা শিক্ষার্থীদের তুলে এনেছি। বর্তমানে বাংলাদেশে আমরা একটা টার্নিং পয়েন্টে আছি। আমাদের ১৫ থেকে ৩০ বছর বয়সী প্রায় ৪ কোটি মানুষ আছে। আমাদের ৬০ শতাংশের ওপরে তরুণ প্রজন্ম।
বাফার কোর্সের প্রসঙ্গে নৌ প্রতিমন্ত্রী বলেন, সঠিক সময়ে বাপা যে পদক্ষেপ নিয়েছে এটি নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। দক্ষ জনসম্পদ তৈরিতে আপনারা পর্দার পেছন থেকে কাজ করছেন, এটা অনেকে বুঝতে পারছে না। আমি যদি এই সেক্টরে না আসতাম আমিও বুঝতাম না। আজকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাওয়ার পেছনে প্রাইভেট সেক্টরের বিশাল একটা অবদান রয়েছে। আমি আশা করি, দক্ষতা উন্নয়নের জন্য আপনারা যে কোর্স চালু করছেন, আপনাদের সে উদ্যোগ অনেক ফলপ্রসু হবে।
অনুষ্ঠানে আয়োজকরা জানিয়েছেন, বাফা ও চিটাগং ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি যৌথভাবে ডিপ্লোমা ইন লজিস্টিকস অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট কোর্স চালু করতে যাচ্ছে। এতে সহযোগিতা দিচ্ছে ফিড দ্য ফিউচার বাংলাদেশ ট্রেড অ্যাক্টিভিটি।
বাফা সভাপতি কবির আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্যে রাখেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান, বাফার সিনিয়র সহ সভাপতি আমিরুল ইসলাম চৌধুরী মিজান, জাপান বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আসিফ এ চৌধুরী, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর, ইস্ট ডেল্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মু. সিকান্দার খান, বিজিএমইএ’র প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ কে এম আকতার হোসেন, ফিড দ্য ফিউচার বাংলাদেশ ট্রেড অ্যাক্টিভিটির চিফ অব পার্টি মার্ক শাইম্যান অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। এ ছাড়া প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের অধ্যাপক ড. মো. মামুন হাবিব ও চিটাগং ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. ইমন কল্যাণ চৌধুরী।
এর আগে সকালে চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনাল পরিদর্শন করেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। তিনি এ সময় বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের অর্থনীতির লাইফ লাইন। এর নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার জন্য স্ক্যানার বসানোর কার্যক্রম চলমান আছে। বন্দরের প্রত্যেক গেটে আমদানি-রপ্তানির জন্য স্ক্যানার বসানো হবে। চট্টগ্রাম বন্দরে যাতে স্ক্যানার বসানো না হয়; এখানে যাতে ডিজিটাল বাংলাদেশের ছোঁয়া না লাগে সেজন্য সংঘবদ্ধ চক্র জোরালো ভূমিকা রাখছে। চট্টগ্রাম বন্দরকে বিশ্বমানের ডিজিটাল করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যা যা করণীয় তা করা হবে। শুধু চট্টগ্রাম বন্দর নয়, মোংলা বন্দরসহ স্থলবন্দরগুলোতেও স্ক্যানার বসানোর কাজ চলমান রয়েছে। তিনি আরো বলেন, ভারতের সাথে চুক্তি অনুসারে তাদের দেশের জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করতে পারবে এবং সেখান থেকে সড়ক পথে ভারতের অন্যান্য রাজ্যে মালামাল যেতে পারবে। এ জন্য চট্টগ্রাম বন্দরে ভারতের জাহাজের ট্রায়াল রান হয়েছে। আরো ট্রায়াল হবে। চট্টগ্রাম বন্দরকে আরো আপগ্রেড করা হচ্ছে। পতেঙ্গা কন্টেনার টার্মিনাল, ওভারফ্লো ইয়ার্ড নির্মিত হয়েছে। অধিক জাহাজ বাড়ার চাপ সামাল দেয়ার জন্য চট্টগ্রাম বন্দর প্রস্তুত আছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে এসআরও হয়ে গেলে নিয়মিতভাবে ভারতীয় জাহাজ আসা শুরু করবে। এ সময় অন্যদের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান, সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) মো. জাফর আলম, সদস্য (প্রকৌশল) ক্যাপ্টেন মো. মাহবুবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।