বহির্নোঙরে অলস বসে আছে ১৪ জাহাজ

চট্টগ্রাম বন্দরে ভয়াবহ জট, বাড়তি জেটি বরাদ্দের দাবি

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ৪ মে, ২০২১ at ৫:৫০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেনার জাহাজের ভয়াবহ জটে পড়েছে। গতকাল সোমবার ১৪টি কন্টেনার জাহাজ অলস বসেছিল বহির্নোঙরে। গড়ে পাঁচদিন অপেক্ষা না করে বার্থিং জুটছে না কোনো জাহাজের কপালে। খোলা পণ্যবাহী জাহাজের জট না থাকলেও কন্টেনার জাহাজের জট বৃদ্ধি সংশ্লিষ্টদের শংকিত করে তুলেছে। এমন পরিস্থিতিতে কন্টেনার জাহাজের জন্য জেটি বাড়ানোর জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষকে গতকাল চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ কন্টেনার শিপিং এসোসিয়েশন। ঈদের এক সপ্তাহ পর পর্যন্ত জেটি বাড়তি বরাদ্দের তাগাদা দেয়া হয়েছে।
বন্দর সূত্র জানায়, দেশের আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যের প্রবেশদ্বার চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ এবং পণ্য হ্যান্ডলিং পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে নানামুখী উদ্যোগ নেয়া হয়। ইয়ার্ড থেকে দ্রুত কন্টেনার সরিয়ে নেয়া, সিনিয়র কর্মকর্তারা ইয়ার্ড এবং জেটিতে উপস্থিত থেকে কাজের তদারকিসহ সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়। বিগত সময়কার লকডাউন পরিস্থিতিতে যেসব সীমাবদ্ধতা ছিল সেগুলো কাটিয়ে উঠারও চেষ্টা করা হয়। কিন্তু সব উদ্যোগ এবং চেষ্টার পরও মারাত্মক জাহাজ জটের কবলে পড়ল চট্টগ্রাম বন্দর। বিশেষ করে কন্টেনার জাহাজের জট চরম আকার ধারণ করেছে। একেকটি জাহাজকে গড়ে পাঁচদিন অপেক্ষা করে জেটিতে ভিড়তে হচ্ছে। গতকাল ১৪টি কন্টেনার জাহাজ বহির্নোঙরে অলস বসে ছিল। জাহাজগুলোতে ১৬ হাজার ৮৭৮ টিইইউএস কন্টেনার রয়েছে।
ইয়ার্ড ম্যানেজমেন্ট এবং ধারণক্ষমতা বেশি হওয়ার পরও বন্দরের জেটিতে জাহাজ ভিড়ানো যাচ্ছে না। চট্টগ্রাম বন্দরে বহুদিন পর একই সাথে এতগুলো কন্টেনার জাহাজ অলস বসে থাকতে দেখা গেছে বলে সূত্র মন্তব্য করেছে।
কন্টেনার জাহাজের জট তৈরি হওয়া এবং বার্থিংয়ের জন্য চার পাঁচদিন অলস বসে থাকার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ কন্টেনার শিপিং এসোসিয়েশন। এসোসিয়েশনের সেক্রেটারি ক্যাপ্টেন এ এস চৌধুরী গতকাল বন্দর কর্তৃপক্ষের চেযারম্যান বরাবরে লিখিত পত্রে ঈদের এক সপ্তাহ পর পর্যন্ত কন্টেনার জাহাজের জন্য বাড়তি জেটি বরাদ্দের দাবি জানিয়েছেন। যাতে একই সাথে বেশি কন্টেনার জাহাজ বার্থিং দিয়ে জট সামাল দেয়া যায়। বন্দরের সংশ্লিষ্ট একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বিষয়টি নিয়ে চিন্তা ভাবনা চলছে বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, জাহাজ জট পরিস্থিতি সামলে উঠার জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ চেষ্টা করছে। বন্দর ব্যবহারকারী বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের সহায়তা নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে।
উল্লেখ্য, একটি জাহাজ একদিন অলস বসে থাকলে প্রায় বিশ হাজার ডলার ফিঙড অপারেটিং কস্ট বা এফওসি বাবদ গচ্ছা দিতে হয়। বিপুল অংকের এই টাকার যোগান বৈদেশিক মুদ্রায় আমদানিকারককেই যোগান দিতে হয়। ১৪টি জাহাজের জন্য প্রতিদিন দুই কোটি টাকারও বেশি বৈদেশিক মুদ্রা গচ্ছা দিতে হচ্ছে। বন্দরের বহির্নোঙরে অলস বসে থাকা জাহাজগুলোর মধ্যে গত চারদিন ধরে অপেক্ষা করছে এমন রয়েছে তিনটি জাহাজ। চারটি জাহাজ অপেক্ষা করছে তিনদিন ধরে। বাকি জাহাজগুলো দুদিন এবং একদিন। জাহাজগুলোর মধ্যে পাঁচদিন অপেক্ষা না করে কোনটিরই জেটিতে আসার সুযোগ হবে না বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে চট্টগ্রাম বন্দরের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, আমরা বহুভাবে চেষ্টা করেছি, বহুমুখী কাজ করেছি। কিন্তু কন্টেনার জাহাজের জট ঠেকানো গেল না। ১৪টি জাহাজ অলস বসে থাকার পরিস্থিতি আমাদের উদ্বিগ্ন করছে। কিন্তু এই মুহূর্তে বিষয়টি মেনে নেয়া ছাড়া আমাদের হাতে আর কোনো বিকল্প নেই। কন্টেনার জাহাজের জন্য জেটি বরাদ্দ বাড়ানো গেলে পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি হবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসিসিইউতে খালেদা অবস্থা ‘স্থিতিশীল’
পরবর্তী নিবন্ধহাটহাজারীতে গাছে ব্যবসায়ীর ঝুলন্ত লাশ