বন্যপ্রাণীর বন্ধুত্ব

রুদ্র দাস | বুধবার , ১৯ মার্চ, ২০২৫ at ৪:৫০ পূর্বাহ্ণ

বনের জীবনে যেমন প্রতিযোগিতা আর বিপদ আছে, তেমনই আছে বন্ধুত্ব আর সহমর্মিতার গল্পও। যখন আমরা বন্যপ্রাণীদের জীবন সম্পর্কে ভাবি, তখন প্রথমেই শিকারি ও শিকারের সম্পর্ক মনে আসে। তবে প্রকৃতির গভীরে আরও আছে অদ্ভুত বন্ধুত্বের গল্প, যেগুলো আমাদের শেখায় সহনশীলতা ও সহযোগিতার মূল্য। বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী কীভাবে একে অপরের সান্নিধ্যে এসে বন্ধুত্ব গড়ে তোলে, তা মুগ্ধ করে তোলে যে কাউকে।

বনের মাঝে হরিণ আর বানরের বন্ধুত্ব বেশ পরিচিত। বানর গাছের উপর থেকে ফল পেড়ে খায়, কিন্তু অনেক সময় ফলের কিছু অংশ মাটিতে পড়ে যায়, যা হরিণ খেতে পারে। বানর যখন গাছের ডালে ডালে ঘুরে বেড়ায়, তখন হরিণও তার সাথে চলে, যেন দুই বন্ধুর একসঙ্গে পথচলা। তারা একে অপরের খাদ্য উৎসের অংশীদার হয়ে ওঠে, যা একে অপরকে আরও নির্ভরশীল করে তোলে। এই বন্ধুত্ব কেবল খাবারের জন্য নয়, বরং বেঁচে থাকার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।

অন্যদিকে, হাতি আর ছোট পাখিদের মধ্যেও গড়ে ওঠে এক ধরনের সম্পর্ক। পাখিরা হাতির পিঠে বসে তাদের শরীর থেকে ছোট ছোট পোকামাকড় খেয়ে ফেলে। হাতিরা জ্বালা থেকে মুক্তি পায়, আর পাখিরা তাদের খাবার পায়। একে বলা চলে, বাঁচা ও বাঁচানোর সম্পর্ক, যেখানে দুই প্রাণীই উপকৃত হয়। একটি ছোট পাখি হাতির মতো বিশাল প্রাণীর ওপর ভরসা করে, আর হাতি তার মতো বিশাল প্রাণীও এক ছোট্ট পাখির সাহায্যকে গুরুত্ব দেয়। এমন বন্ধুত্ব আমাদের মানব সমাজে বিরল হলেও প্রকৃতির মাঝে এরকমই সহাবস্থান দেখা যায়।

ভল্লুক ও গরিলার মধ্যে যেমন দেখেছি, বন্ধুত্বের সম্পর্ক কখনো কখনো নির্ভরতার মাধ্যমে গড়ে ওঠে। ভল্লুক গরিলার আশ্রয়স্থলকে সুরক্ষিত রাখে, এবং গরিলা ভল্লুককে সতর্ক করে বিভিন্ন শত্রুর বিপদ থেকে। দুটি শক্তিশালী প্রাণীর এই পারস্পরিক নির্ভরতা বন্ধুত্বের এক সুন্দর উদাহরণ।

ডলফিন আর হাঙ্গরের মধ্যেও দেখা যায় এক ধরনের বন্ধুত্ব। ডলফিন, যা তার বুদ্ধিমত্তার জন্য পরিচিত, প্রায়ই সাগরের গভীরতায় বিপদ থেকে হাঙ্গরকে সতর্ক করে। আবার হাঙ্গরও প্রায়ই শিকারি প্রাণীদের আক্রমণ থেকে ডলফিনকে রক্ষা করে। সামুদ্রিক এই বন্ধুত্ব সাগরের পরিবেশে ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। শক্তিশালী এই দুটি প্রাণীর সম্পর্ক থেকে আমরা বুঝতে পারি, বন্ধুত্ব মানে কেবল দুর্বলকে সাহায্য করা নয়, বরং শক্তিশালী হয়েও একে অপরের প্রয়োজনীয়তা মেনে নেওয়া।

এই বন্যপ্রাণীদের বন্ধুত্ব আমাদের জীবনেও অনেক শিক্ষা দেয়। যেমন প্রাণীরা একে অপরের খাদ্য, আশ্রয় এবং সুরক্ষার জন্য নির্ভর করে, তেমন আমরাও জীবনে একে অপরকে সাহায্য করতে পারি। প্রকৃতির এই সহজ, সরল সম্পর্কগুলো আমাদের শেখায় যে, প্রকৃত বন্ধুত্বের মধ্যে থাকে পারস্পরিক নির্ভরতা, সহযোগিতা ও সহমর্মিতা। প্রকৃতির এই বন্ধুত্বের গল্পগুলো আমাদের জন্যও এক বড় উদাহরণ। আমরা যদি বন্যপ্রাণীদের মতো একে অপরের প্রতি সহানুভূতি দেখিয়ে চলতে পারি, তবে আমাদের সমাজও হবে আরও সুখী, আরও সমৃদ্ধ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাদাম খেলো কে
পরবর্তী নিবন্ধগরম পিঠা