ফুটবলারের দিন কাটছে হাজতে প্রকৃত আসামিও কারাগারে বন্দী

পুলিশের ‘ত্রুটিপূর্ণ’ চার্জশিট, নিরপরাধ

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৬:০৯ পূর্বাহ্ণ

পুলিশের ‘ত্রুটিপূর্ণ’ চার্জশিটের ফলে নিরপরাধ এক ফুটবলারের দিন কাটছে হাজতে। গত ২৮ জানুয়ারি থেকে হাজতবাস করে আসা ওই ফুটবলারের পক্ষে প্রতিকার চেয়ে করা একটি আবেদনে চাঞ্চল্যকর এ তথ্য উঠে এসেছে। গত ৭ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সরোয়ার জাহানের আদালতে

 

আবেদনটি করা হয়। তাতে বলা হয়, সংশ্লিষ্ট মামলার (কর্ণফুলী থানার মামলা নম্বর (১২()১৯) তদন্তকারী কর্মকর্তা এজাহারভুক্ত আসামির নাম সোহেল বড়ুয়া, পিতামিলন বড়ুয়ার স্থলে দিলিপ বড়ুয়া নামে চার্জশিট দাখিল করেন। অথচ এজাহারে আসামির নাম সোহেল বড়ুয়া এবং তার পিতার নাম মিলন বড়ুয়া স্পষ্টভাবে লিপিবদ্ধ রয়েছে।

যা তদন্ত কর্মকর্তা ও কর্ণফুলী থানার তৎকালীন এসআই কাজী মনিরুল করিম উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে করেছেন। মূলত এজাহারভুক্ত প্রকৃত আসামি মিলন বড়ুয়ার ছেলে সোহেল বড়ুয়াকে গ্রেপ্তার না করে দিলিপ বড়ুয়ার ছেলে সোহেল বড়ুয়াকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

এদিকে সোহেল বড়ুয়া, পিতামিলন বড়ুয়া এবং গ্রেপ্তারকৃত সোহেল বড়ুয়া, পিতাদিলিপ বড়ুয়া একই ব্যক্তি নয় তা আপাতদৃষ্টিতে প্রতীয়মান হলেও উক্ত দুই ব্যক্তি ভিন্ন ভিন্ন কিনা এবং প্রকৃত আসামি কে তা খতিয়ে দেখতে আদালত কর্ণফুলী থানাকে নির্দেশ দেন। ভুক্তভোগী দাবি করা ফুটবলারের পক্ষের

আইনজীবীর আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালতের পক্ষ থেকে নির্দেশনাটি দেওয়া হয়। নির্দেশনা অনুযায়ী থানা পুলিশ বিষয়টি তদন্তও করেছে এবং সম্প্রতি তদন্ত প্রতিবেদনও জমা দিয়েছে। এসআই মোহাম্মদ আবুল বশর কর্তৃক প্রস্তুতকৃত সেই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘উক্ত দুই ব্যক্তি একই ব্যক্তি নয়। একই গ্রামের হলেও

দুজনের আলাদা পরিচয় রয়েছে। এর মধ্যে প্রতিকার চেয়ে করা ব্যক্তি অর্থাৎ দিলিপ বড়ুয়ার ছেলে সোহেল বড়ুয়া একজন ফুটবলার। তিনি রামু থানার ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাবের হয়ে ফুটবল খেলেন। অপরদিকে এজাহারভুক্ত আসামি মিলন বড়ুয়ার ছেলে সোহেল বড়ুয়া একজন পেশাদার মাদক ব্যবসায়ী এবং এলাকায়

তিনি নিক্কন বড়ুয়া নামেও পরিচিত। তার বিরুদ্ধে ঢাকা, চট্টগ্রাম কুমিল্লার বগুড়ায় একাধিক মাদক মামলা রয়েছে। এর মধ্যে বগুড়ার মামলাটিতে গ্রেপ্তার হয়ে সে এখন বগুড়ার কারাগারে রয়েছে।’

এদিকে আদালত সূত্র জানায়, কর্ণফুলী থানা কর্তৃক দাখিলকৃত প্রতিবেদনের উপর আজ সোমবার শুনানি হতে পারে।

দিলিপ বড়ুয়ার ছেলে সোহেল বড়ুয়ার আইনজীবী রিগান কান্তি দাশ আজাদীকে বলেন, ‘আমার মক্কেল বর্তমানে কঙবাজার কারাগারে রয়েছেন। গত ২৮ জানুয়ারি রামু থানা পুলিশ রামুর ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের মেরুংলোয়া এলাকার নিজ বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে। প্রকৃত আসামির বাড়িও একই গ্রামে।

কোনো অপরাধ কর্মের সাথে জড়িত না থাকা সত্বেও পুলিশ আমার মক্কেলকে প্রকৃত আসামির জায়গায় গ্রেপ্তার করেছে। মূলত কর্ণফুলী থানার সংশ্লিষ্ট মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তার তদন্তে ত্রুটির কারণে আমার মক্কেলকে দীর্ঘদিন ধরে হাজতবাস করতে হচ্ছে। এজাহারভুক্ত আসামির পিতার নাম ‘মিলন বড়ুয়ার

স্থলে দিলিপ বড়ুয়া’ যুক্ত করলেও এর ব্যাখ্যায় তিনি কিছুই বলেননি। আদালতকে আমরা পুরো বিষয়টি অবগত করেছি এবং আমার মক্কেলের অব্যাহতি চেয়ে এবং প্রকৃত আসামিকে উক্ত মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেছি। এছাড়া তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা চেয়েও আবেদন করেছি আমরা। এর মধ্যে

আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী তদন্ত কর্মকর্তার ত্রুটির বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দিয়েছে কর্ণফুলী থানা পুলিশ। তদন্তে প্রকৃত আসামি যে একজন মাদক ব্যবসায়ী তা উঠে এসেছে। পাশাপাশি আমার মক্কেল যে নিরপরাধ তাও স্পষ্ট হয়েছে। যাইহোক, উক্ত প্রতিবেদন এবং আমাদের আবেদনগুলোর বিষয়ে আগামীকাল (আজ সোমবার) শুনানি হবে।’

আইনজীবী রিগান কান্তি দাশ বলেন, আমার মক্কেল সোহেল বড়ুয়া, পিতাদিলিপ বড়ুয়ার পক্ষে প্রতিকার চেয়ে অর্থাৎ জামিন চেয়ে করা আবেদনের সাথে আমরা অনেকগুলো কাগজপত্র দাখিল করেছি। এর মধ্যে কঙবাজার৩ আসনের সংসদ সদস্য, সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান,কঙবাজার জেলা ক্রীড়া

সংস্থার সাধারণ সম্পাদক, রামু উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক, রামু ব্রাদার্স ইউনিয়নের সভাপতির প্রত্যয়ন পত্র ও অবগতিপত্র রয়েছে। কঙবাজার৩ আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমলের অবগতিপত্রে তিনি উল্লেখ করেছেন, তথ্যগত ভুল ও ত্রুটিপূর্ণ তদন্তে আটককৃত সোহেল বড়ুয়া,

পিতাদিলিপ বড়ুয়াকে পূর্ণ তদন্তের মাধ্যমে অব্যাহতি দেওয়া হোক। তিনি আরো উল্লেখ করেছেন, সোহেল বড়ুয়া, পিতামিলন বড়ুয়া নামে যে ব্যক্তিটির নাম এজাহারে উল্লেখ রয়েছে সে বর্তমানে অন্য ইয়াবা মামলায় জেল হাজতে রয়েছে। ভুলবশত ২০১৯ সালের ৩০ জুন তারিখে দাখিলকৃত চার্জশিট মূলে নিরপরাধ

সোহেল বড়ুয়াকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। উক্ত চার্জশিটে সোহেল বড়ুয়ার পিতার নাম মিলন বড়ুয়ার স্থলে দিলিপ বড়ুয়া উল্লেখ করাতেই নিরপরাধ সোহেল বড়ুয়াকে হাজতবাস করতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে জেলা পিপি শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী বলেন, এজাহারের বাইরে কিছু লিখতে হলে অবশ্যই ব্যাখ্যা দিতে হবে। তদন্ত কর্মকর্তা এজাহার নামীয় আসামির পিতার নামের জায়গায় চার্জশিটে ‘মিলন বড়ুয়া স্থলে দিলিপ বড়ুয়া’ যুক্ত করলেও ব্যাখ্যায় কিছু বলেননি। এটা ঠিক হয়নি। আমি কখনো এ ধরনের চার্জশিট দেখিনি। যাইহোক, আদালত নিশ্চয়ই বিষয়টি দেখবেন এবং নির্দোষ হয়ে থাকলে ভুক্তভোগীকে অব্যাহতি দিবেন।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ৭ মে কর্ণফুলী থানাধীন মইজ্যারটেক এলাকার টোলপ্লাজা সংলগ্ন মসজিদের সামনের ফুটপাতের উপর থেকে ২ হাজার পিস ইয়াবাসহ রোপন বড়ুয়া ও নান্টু বড়ুয়া নামের দুজনকে গ্রেপ্তার করে কর্ণফুলী থানা পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে তখন তারা জানায়, রামুর ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের মেরংলোয়া

এলাকার সোহেল বড়ুয়া, পিতামিলন বড়ুয়াসহ পরস্পর যোগসাজসে তারা দীর্ঘদিন যাবৎ মাদক ব্যবসা করে আসছে। এ ঘটনায় মামলাটি দায়ের করেন কর্ণফুলী থানার এসআই তুষার শুভ্র দাশ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধযেভাবে হ্যাক করতো জন্ম নিবন্ধন সার্ভার
পরবর্তী নিবন্ধবাংলাদেশেও ভুল খবর দিয়েছে, পুলিশ তো বিবিসি অফিসে যায়নি : তথ্যমন্ত্রী