শিক্ষকতা একটি মহান পেশা। টাকা পয়সা, পদ-পদবীর বাহার কোনটায় দিয়ে এই মহৎ পেশা, কাজটিকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। পড়ালেখা করেছি বিধায় মনের তাগিদে, দায়িত্ব মনে করেছি মানুষকে জ্ঞানদান করা আবশ্যক। আলোকিত মানুষ তৈরি করা সামাজিক দায়বদ্ধতা, রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব।
দেশকে সুশিক্ষিত জাতি উপহার দেয়া মানে উন্নত দেশ। আমরা মনের আনন্দে কাজ করেছি। দিনরাত পরিশ্রম করছি সচেতনতায় পরিবর্তনে ঢেউ তুলতে। বদলাতে পারছি আপন আলোতে, ছড়াচ্ছি মেধার স্ফুরণ। আমাদের হাতেকলমে শিক্ষা, সন্তানের মতো আদর শাসনে বড় করছি শিক্ষার্থীদের। তারা একসময় আমাদেরও ছাড়িয়ে যাবে এই প্রত্যাশায়।
আমাদের হাতেই যদি ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার আর আমলারা তৈরি হয়ে ফার্স্ট ক্লাস হয় তাহলে আমি শিক্ষক ওদের মানুষ করে, জায়গা মতো পৌঁছে দিয়ে থার্ট ক্লাস হয়ে রইলাম আজন্ম কেমনে? কী অপরাধে? কী লজ্জা! যখন লিখতে হয় আমরা অভাগা শিক্ষক সেই হিসাবের তালিকায়, চোখে জল গড়ায়। শিক্ষকদের যারা নিয়ম করে নীচে ফেলে রাখে, যাঁদের হাতে অবোধ শিশুর ফাউন্ডেশন তৈরি হচ্ছে তাঁদেরই চরম অবহেলা, অবমাননা কেন করা হচ্ছে সুধী মহলের কাছে প্রশ্ন রেখে গেলাম। মানে সম্মানে বাঁচতে হলে পদ পদবী আর গ্রেডও খুবই গুরুত্ব বহন করে। এহেন মর্যাদাহীন, অপ্রতুল বেতনে ভবিষ্যতে আমাদের সন্তানদের শিক্ষকতা পেশায় আনবো কিনা কয়েকবার ভাবা লাগবে। নতুন প্রজন্ম শিক্ষকতা পেশাকে অন্তর থেকে ভালোবাসবে না যদি তাদের ফার্স্ট ক্লাস লেখাপড়া করে থার্ট ক্লাস চাকরি করতে হয়। এই অকদর্য নিয়মে ভালো কিছু আশা করা কি সম্ভব? সবসময় যদি পেশাগত টেনশন, গ্রেডের, ক্লাসের গ্লানি নিয়ে থাকতে হয় তখন মনটা ভারাক্রান্ত কোণঠাসা থাকে সর্বদা। টিফিন ভাতা মাত্র দুইশত টাকা ভাবা যায়! আমরা কতটা গুরুতর অপমানের শিকার সুশীল সমাজ একবার ভেবে দেখবেন।
লেখক : কবি ও শিক্ষক