কিশোর গ্যাংয়ের ব্যাপারে সজাগ হওয়া জরুরি

দীপান্বিতা চৌধুরী | সোমবার , ৮ নভেম্বর, ২০২১ at ৯:০৫ পূর্বাহ্ণ

হারবো জেনেও ভোরের প্রতিজ্ঞার পথে আমরা দৌড়াচ্ছি। এবং আমাদের জয় স্বপ্নের সে সময়গুলোতে আমাদের মায়েরা সিলিয়ে দিয়েছেন আমাদের খেলার পোশাক। আর পারিবারিক স্নেহ দিয়েছে শপথ মাঠের স্কুল পতাকা। আর যারা এই শপথ মাঠের স্কুল পাইনি তাদের জীবনে আদুরেপনার সমাপ্তি ঘটে খুব তাড়াতাড়ি। তাদের মধ্যে সৃষ্টি হয় হতাশা, বিকৃত মানসিকতা যার রূপ আজকের কিশোর গ্যাং। বর্তমানে কিশোর গ্যাং খুব ভয়াবহ একটি শব্দ। এক গ্রুপ আরেক গ্রুপকে মারছে, এর বোনকে ওর ভাই র‌্যাপ করছে। আর ফেসবুকের বদৌলতে তো সামান্য কারণকে ইস্যু করে শেষ মেশ প্রাণের বদলে প্রাণ নিয়ে এরা ক্ষান্ত হয়। বুঝতে পারছেন অবস্থাটা কতটা খারাপ। এই কিশোর গুলোই ভবিষ্যতের সন্ত্রাস, এবং টেরোরিস্ট। পুলিশ প্রধান বলেছেন, এর জন্য সম্পূর্ণ ভাবেই পরিবার দায়ী। যেহেতু লালন পালনের দায়ভার তো পিতামাতার উপর পড়ে। কথাটা অবশ্যই ঠিক। কিন্তুু দরিদ্র পরিবারগুলোর কথা কী বলবেন। তাদের পিতামাতারা তো অসহায়। পেটের ভাত যেখানে যোগাড় হয় না মূল্যবোধের কথা সেখানে তেতো শোনায়। সেক্ষেত্রে কী বলবেন? অপ্রিয় হলেও সত্যি প্রতিটি কিশোর গ্যাং এর পেছনে এবং তাদের খারাপ কাজের উৎসাহ প্রদানের জন্য আমরা একজন থাকি। আমরা দীপ্ত কন্ঠে বলি কিশোর গ্যাং নির্মূল করা হোক আর অন্যদিকে বলছি ‘মামু খতম কইরা দে’। এই মামু তো আর একদিনে জন্মায় না। তাই আগে আমাদের মানবিকতা জাগানো বেশি প্রয়োজন। সুযোগ নয় সাহায্য করি এমন মনোভাব আগে আসুক। কেননা একটি নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলের বা মেয়ের দারিদ্র্যতার সুযোগ নেয়াটা খুব কঠিন কাজ নয়। পানি পান করার চেয়েও সোজা। কিশোর গ্যাং যদি সত্যি নির্মূল করতেই চান তবে বড় বৃক্ষগুলোদের সুযোগ নেয়াটা বন্ধ করতে বলুন। এরপর আসি ধনী পরিবারের কিশোর কিশোরীর কথায়। তাদের বিগড়ানোর সম্পূর্ণ দোষ তাদের পিতামাতার। ইদানীং তো ডিভোর্স, পরকীয়া, নাইট ক্লাব এসব না করলে ঠিক জাতে উঠেনা বলে মনে করেন ধনী পরিবারের ব্যক্তিরা। মাথামোটা অভিভাবক বুঝেন না যে তাদের জাতে উঠার প্রতিযোগিতার বলির পাঠা হয় তাদের সন্তানরা। ড্রাগ, খুনের মতো কাজ করতেও পেছ পা হয় না। কারণ পিতামাতার কুশিক্ষার প্রভাব। আবার অনেকেই বলতে শুনি, ধনীদের পাপ নেই। যা করে তাই পূণ্য। এমন ধারণা পোষণ করে যিনি তার সন্তান মানুষ করেন তাদের সন্তানই কিশোর গ্যাং থেকে টেরোরিস্ট এ পরিণত হয়। এমন ধারণা ত্যাগ করুন। সন্তানকে মানুষ করে তৈরি করুন। প্রয়োজনে হাতে লাঠি নিন। কেননা সব কাঁঠাল আদরে পাকে না। আবার সব কাঁঠাল আদর বুঝেও না। লাঠিরও প্রয়োজন হয়। পারিবারিক বাতাসে ভালোবাসার গন্ধ না থাকে এবং আমরা কারো সাহায্যের বদলে সুযোগ নিয়ে যায় তবে কিশোর অপরাধ কখনও কমবে না। তাই প্রথমে নিজেদের বিবেককে জাগায়। এবং পরিবারে ভালোবাসার বাতাস আনি।
লেখক : কবি

পূর্ববর্তী নিবন্ধফার্স্ট ক্লাসদের কারিগর!
পরবর্তী নিবন্ধচিকিৎসা শ্রমিকের পথচলা : উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসা সরঞ্জাম সংকটের কারণ ও প্রতিকার