প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার (১৯১১–১৯৩২)। ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামের সশস্ত্র বিপ্লবী ও শহিদ বীরকন্যা। ডাকনাম রাণী, ছদ্মনাম ফুলতারা, ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নারী মুক্তিযোদ্ধা ও প্রথম বিপ্লবী মহিলা শহিদ ব্যক্তিত্ব। প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ১৯১১ খ্রিষ্টাব্দের ৫ই মে চট্টগ্রামের বর্তমান পটিয়া উপজেলার ধলঘাট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম জগদ্বন্ধু ওয়াদ্দেদার এবং মাতা প্রতিভাদেবী। চট্টগ্রামের ডা. খাস্তগীর স্কুলের মেধাবী ছাত্রী প্রীতিলতা ১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম বিভাগে প্রবেশিকা পাস করেন। ঢাকা ইডেন কলেজ থেকে ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় সমগ্র ঢাকা বোর্ডে আই.এ. পরীক্ষায় তিনি মেয়েদের মধ্যে প্রথম এবং সবার মধ্যে পঞ্চম স্থান লাভ করেন। ডিসটিংশান নিয়ে তিনি বি.এ. পাশ করেন। কিন্তু, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে সম্পৃক্ত থাকায় কৃতিত্বের সাথে স্নাতক পাস করলেও তিনি এবং তার সঙ্গী বীণা দাশগুপ্তর পরীক্ষার ফল স্থগিত রাখা হয়। অবশেষে তাদেরকে ২২ মার্চ, ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে মরণোত্তর স্নাতক ডিগ্রি প্রদান করা হয়। চট্টগ্রামের অপর্ণাচরণ বালিকা বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব গ্রহণের মাধ্যমে তিনি তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। ঢাকার বিপ্লবী দল ‘দীপালী সংঘ’ এবং কলকাতার ‘ছাত্রী সংঘে’র সক্রিয় কর্মী ছিলেন তিনি। সূর্যসেন সহ অন্যান্য বিপ্লবীদের সাথে প্রীতিলতার নিয়মিত যোগাযোগ হতো। বিপ্লবীদের জন্য তাঁরা অর্থ সংগ্রহ ও সরবরাহ করতেন। তিনি দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ অসীম সাহসী প্রীতিলতা ১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে সূর্যসেনের নির্দেশে কয়েকজন বিপ্লবী সহযোদ্ধা সহ পূর্ণ সামরিক বেশে চট্টগ্রামের পাহাড়তলিতে অবস্থিত তৎকালীন ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণে যান। এই আক্রমণ সফল হলেও এক ইংরেজের গুলিতে আহত হন প্রীতিলতা। শত্রুর হাতে ধরা পড়ার আগেই নিজের পোশাকের ভেতর লুকিয়ে রাখা মারাত্মক বিষ পটাশিয়াম সায়েনাইড মুখে ঢেলে আত্মাহুতি দেন নিজেকে। প্রীতিলতার এই আত্মদান যুগ যুগ ধরে দেশপ্রেম আর সাহসিকতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে রয়েছে। ১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দের ২৪শে সেপ্টেম্বর প্রথম প্রহরে অকুতভয়ী বীরকন্যা প্রীতিলতা মৃত্যুবরণ করেন।