চট্টগ্রামে বিপিএলের টিকেট গত বুধবার থেকে বিক্রি শুরু হয়েছে। প্রথম দিনেই টিকেট বিক্রির বুথগুলো দর্শকদের ভিড় জানান দিচ্ছিল এবারের বিপিএলের চট্টগ্রাম পর্বে দর্শকের ঢল নামবে। তার অবশ্য একাধিক কারণও রয়েছে। যার একটি এবারের বিপিএলের চট্টগ্রাম দলের মালিকানা আবার ফিরে এসেছে চট্টগ্রামের মানুষের হাতে। সে সাথে দলটি বিপিএলে বেশ ভাল করছে। তাই নিজেদের দল নিয়ে আগ্রহটা বেশ বাড়ছিল চট্টগ্রামের দর্শকদের। আরো একটি কারণ রয়েছে এবারের বিপিএলে দর্শক আগ্রহের। তা হচ্ছে সদ্য জাতীয় দলকে বিদায় বলে দেওয়া তামিম ইকবালও রয়েছেন বেশ ভাল ফর্মে।
জাতীয় দল হোক বা ঘরোয়া ক্রিকেটের দল, তামিম মানেই ক্রেজ। যে অনুমান করা হয়েছিল তার বাস্তবতা দেখা গেল গতকাল বিপিএলের চট্টগ্রাম পর্বের প্রথম দিনে। বলা যায় গতকাল চট্টগ্রামের দর্শকদের জন্য ছিল ডাবল আনন্দের উপলক্ষ্য। কারণ দিনের প্রথম ম্যাচে ছিলেন তামিম। আর তামিমতো দর্শকদের চাহিদা পূরণ করে দিয়েছে। দ্বিতীয় ম্যাচে ছিল চিটাগাং কিংস। আর সে ডাবল আনন্দ নিতে সেই দুপুরের আগে থেকেই দর্শকরা ছুটতে থাকে সাগরিকার দিকে। দুপুর দেড়টায় বরিশাল এবং ঢাকার ম্যাচটা যখন শুরু হয় তখন থেকেই দর্শকরা গ্যালারি ভর্তি করতে থাকে। তামিমের কারণে সে সময় বরিশালের সমর্থকই ছিল বেশি। তাইতো বেশিরভাগ দর্শকের গায়ে ছিল বরিশালের লাল জার্সি। সময় যতই গড়াচ্ছিল ততই বাড়তে থাকে দর্শকের সংখ্যা। বলা যায় দিনের প্রথম ম্যাচ দেখতে আসা দর্শকদের কষ্টটা সফল হয়েছে। কারণ একদিকে তামিমের দুর্দান্ত ব্যাটিং আর অন্য দিকে তার দল বরিশালের জয়, এ যেন ডাবল প্রাপ্তি।
বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা হতেই বাড়তে থাকে দর্শকদের উপস্থিতি। কারণ পরের ম্যাচটি যে ছিল চট্টগ্রামের। তাই দর্শকরা আসতে থাকে দল বেধে। যদিও দূর–দূরান্ত থেকে আসা দর্শকদের অবশ্য ভোগান্তির যেন শেষ ছিলনা। বিশেষ করে টিকেট প্রাপ্তির ক্ষেত্রে। আগেরদিনতো টিকেটের দামের সাথে সংযুক্ত ১৫% ভ্যাট নিয়ে তুলকালাম কাণ্ড হয়েছে। তারপরও টিকেট পেতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে।
কারণ দুটি কাউন্টারে টিকেট দেওয়া হলেও সেখানে টিকেট প্রত্যাশিদের ভীড় ছিল খুব বেশি। তারপরও সব কষ্ট ভুলে সোনার হরিণ একটি টিকেট পেয়েই যেন তৃপ্ত দর্শকরা। দিনের প্রথম ম্যাচ শেষে মাঝখানের বিরতিতে অনুশীলনে নেমেছিল পরের ম্যাচের দুই দল চিটাগাং কিংস এবং খুলনা টাইগার্স। তখনই জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের গ্যালারি অনেকটাই পরিপূর্ণ হয়ে যায়। চিটাগাং কিংসের ক্রিকেটারদের অনুশীলন দেখেই গ্যালারিতে গর্জন তুলছিল দর্শকরা কিংস কিংস বলে। যদিও আগে থেকেই ঘোষণা করা হয়েছিল স্টেডিয়ামে ঢুকতে গেলে কি কি জিনিস নেওয়া যাবে না। তারপরও অনেকেই নিষিদ্ধ জিনিস পত্র সঙ্গে নিয়ে আসে। ফলে গেইটে চেক করে ঢুকাতে কিছুটা সময় বেশি লাগে। যে কারণে স্টেডিয়ামের বাইরে দর্শকদের লাইনটা ক্রমশ দীর্ঘ হতে থাকে। বরাবরের মত কালোবাজারির দৌরাত্ম্যতো ছিলই। কাউন্টারে প্রত্যাশিত টিকেট পাওয়া না গেলেও স্টেডিয়ামে যাওয়ার পথে বা নগরীর বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে টিকেট কালোবাজারিদের দেখা যায়।
যারা বেশ চড়া দামে টিকেট বিক্রি করে। অথচ বিসিবি নানা ঘোষণা দিয়েও কালোবাজারি ঠেকাতে পারছে না। আর এ নিয়ে দর্শকরা ক্ষোভও প্রকাশ করেন। তারপরও নানা ভোগান্তি পেরিয়ে যারা মাঠে প্রবেশ করতে পেরেছে বা খেলা দেখতে পেরেছে তাদের আনন্দের যেন শেষ নেই। চট্টগ্রাম বরাবরই সবদিক থেকে এগিয়ে। সেটা দেখা গেছে নানা সময়। আগের আসর গুলোতে দেখা গেছে ঢাকা কিংবা সিলেটে দর্শক খরায় ভুগেছে বিপিএল। অথচ চট্টগ্রামে এসে দর্শকরা ভরিয়ে দিয়েছে স্টেডিয়াম। আর এবারেতো প্রথম দিন থেকেই দর্শকে টুইটম্বুর চট্টগ্রাম। যদিও প্রতিবারের মতো নানা ভোগান্তি রয়ে গেছে। তারপরও চট্টগ্রামের ক্রিকেট প্রেমীরা ক্রিকেটের টানে গ্যালারি ভরিয়ে, গলা ফাটিয়ে আনন্দ, হৈ, হুল্লোড় করে ঘরে ফিরেছে।