মাথায় ৮ থেকে ১০টি সেলাই। পুরো শরীরে জখমের চিহ্ন। ভালো করে কথা বলতে পারছেন না। নাড়াতে পারছেন না ভেঙে যাওয়া হাত। ঘটনার পর থেকেই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের শয্যায় জিতেন কান্তি গুহ। পটিয়ার হাইদগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি জিতেন কান্তি গুহকে গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধর করার ঘটনায় মামলার প্রধান আসামি ইউপি চেয়ারম্যান বি এম জসিম (৫৫) ও তার ছেলে মুশফিক উদ্দিন ওয়াসিকে (২৪) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গতকাল শনিবার ভোরে হাইদগাঁওয়ের নিজ বাড়ি থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে পটিয়া থানা পুলিশ। এ সময় বাউন্ডারি দেয়াল টপকে পালাতে গিয়ে পায়ে আঘাত পান চেয়ারম্যান জসিম। বর্তমানে তিনি পুলিশ হেফাজতে চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। গত শুক্রবার বিকালে হাইদগাঁও গাউছিয়া কমিউনিটি সেন্টারে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ইফতার মাহফিলের ব্যানারে চেয়ারম্যানের নাম না থাকায় জিতেন কান্তি গুহকে রাস্তার পাশে গাছের সঙ্গে বেঁধে বেদম মারধর করেন বিএম জসিম ও তার ছেলে ওয়াসিসহ ১৫–২০ জন। হাত পিছমোড়া করে বাঁধা, গায়ে জামা নেই, রক্তাক্ত জিতেন গুহ’র এ ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এতে দেশব্যাপী দলের নেতাকর্মীসহ নানা শ্রেণি–পেশার মানুষের মাঝে নিন্দার ঝড় ওঠে। পটিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রেজাউল করিম মজুমদার আজাদীকে বলেন, হাইদগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি জিতেন কান্তি গুহকে মারধরের ঘটনায় ২ জনকে শনিবার ভোরে গ্রেপ্তার করা করা হয়েছে। তারা হলেন হাইদগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বদরুউদ্দিন জসীম ও তার ছেলে ওয়াসি। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।
ওসি জানান, এই ঘটনায় আহত জিতেন কান্তি গুহ’র ভাই তাপস কান্তি গুহ বাদী হয়ে শুক্রবার রাতে ইউপি চেয়ারম্যন বিএম জসিমকে প্রধান আসামি করে সাতজনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার অন্য আসামিরা হলেন বিএম জসিমের পুত্র মুসফিক উদ্দিন ওয়াসি (২৪), হাজি নবাব মিয়ার পুত্র রবিউল হোসেন রবি (৩৪), মৃত নেপাল চন্দ্র চৌধুরীর পুত্র ইন্দ্রজিত চৌধুরী লিও (৪৫), মো. ইসমাইলের পুত্র মো. সাকিব (২৪), রফিক আহমদের পুত্র মো. হাকিম (২১), জাহেদুল হকের পুত্র রিমন চৌধুরী (২৬)। এতে আরো ৪–৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।
এদিকে জিতেন কান্তি গুহ’র ভাই তাপস কান্তি গুহ জানান, তার ভাইয়ের মাথা ফেটে যাওয়ায় কয়েকটি সেলাই দিতে হয়েছে। এছাড়া দুই হাত ভেঙে গেছে। ডান পা জখম হয়েছে। তিনি চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
উল্লেখ্য, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে হাইদগাঁওয়ে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপে দীর্ঘদিন ধরে বেশ কয়েকবার হামলা পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটে। সর্বশেষ এ হামলার শিকার জিতেন কান্তি গুহ। অভিযোগ রয়েছে, ইফতার মাহফিলের দাওয়াত ও ব্যানারে ইউপি চেয়ারম্যান জসিমের নাম না থাকায় জিতেনকে মারধর করা হয়।
পটিয়া উপজেলা আ লীগের সংবাদ সম্মেলন : জিতেন কান্তি গুহকে মারধরের ঘটনায় পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ গতকাল স্থানীয় একটি কমিউনিটি সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করেছে। এতে হামলাকারীদের গ্রেপ্তারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ তৃণমূলের দীর্ঘদিনের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা জিতেন গুহ’র ওপর চেয়ারম্যান বিএম জসিমের নেতৃত্বে তার ছেলেসহ যারা ন্যাক্কারজনক হামলা চালিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান। হামলার সাথে জড়িত প্রত্যেককে দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান নেতৃবৃন্দ।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক প্রদীপ দাশ, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. তিমির বরণ চৌধুরী, সদস্য বিজন চক্রবর্ত্তী, জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান দেবব্রত দাশ দেবু, পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ.ক.ম. শামসুজ্জামান চৌধুরী, সাবেক সভাপতি রাশেদ মনোয়ার, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক হারুনুর রশিদ, যুগ্ম সম্পাদক আলমগীর খালেদ, রতন চক্রবর্ত্তী, চেয়ারম্যান মুহাম্মদ ছৈয়দ, ইঞ্জিনিয়ার ছৈয়দ মোরশেদ, হাইদগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মাহফুজুল হক হাফেজ, যুগ্ম আহ্বায়ক শহীদুল ইসলাম জুলু, ফয়সাল আহমেদ ও টিটু দেব মেম্বার।
পূজা পরিষদের প্রতিবাদ : দক্ষিণ জেলা পূজা পরিষদের সাবেক সভাপতি জিতেন কান্তি গুহ’র ওপর হামলার প্রতিবাদে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ মহানগর, দক্ষিণ ও উত্তর জেলার উদ্যোগে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব চত্বরে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে। উত্তর জেলা পূজা পরিষদের সভাপতি নটু ঘোষের সভাপতিত্বে ও দক্ষিণ জেলা পূজা পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক পরিমল দেবের সঞ্চালনায় সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি লায়ন আশীষ কুমার ভট্টাচার্য। বক্তব্য রাখেন বদিউল আলম বদি, চৌধুরী ফরিদ, হিল্লোল সেন উজ্জ্বল, অ্যাডভোকেট চন্দন তালুকদার, অরবিন্দ পাল অরুন, অধ্যাপক অর্পণ কান্তি ব্যানার্জী, লায়ন দুলাল চন্দ্র দে, অ্যাডভোকেট কবিশেখর নাথ পিন্টু, ড. বিপ্লব গাঙ্গুলী, সুমন দেবনাথ, রত্নাকর দাশ টুনু, শ্রীপ্রকাশ দাশ অসিত, আবু আহামদ চৌধুরী ঝুনু, রণবীর ঘোষ টুটুন, অরূপ রতন চক্রবর্তী, প্রদীপ শীল, মিলন শর্মা, লায়ন শংকর সেনগুপ্ত, মো. নাছির উদ্দীন, মিথুন মল্লিক, বিমল মিত্র প্রমুখ।
জিতেনকে দেখতে গেলেন রানা দাশগুপ্ত : চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জিতেন গুহকে গতকাল বিকালে দেখতে যান বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত। তিনি জিতেন গুহ’র চিকিৎসার খোঁজ নেন এবং তার স্ত্রী–পুত্রের সঙ্গে কথা বলে সান্ত্বনা দেন। এ সময় রানা দাশগুপ্ত বলেন, জিতেন গুহ’র ওপর বর্বরোচিত ও অমানবিক হামলার ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ঐক্য পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামল কুমার পালিত, দক্ষিণ জেলার সভাপতি লায়ন তাপস হোড়, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট প্রদীপ কুমার চৌধুরী, অ্যাডভোকেট চন্দন বিশ্বাস, শুভ্রদেব কর, বিশ্বজিত পালিত, লায়ন শেখর দত্ত, সাগর মিত্র, অশোক চক্রবর্তী ও নিউটন সরকার।