ইউক্রেনে রুশ হামলার আশঙ্কায় চলমান উত্তেজনার মধ্যে কৌশলগত পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র মহড়া শুরু করেছে রাশিয়া। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই মহড়া তদারক করছেন। ওয়াশিংটন বলছে, ইউক্রেন সীমান্তের কাছে জড়ো হওয়া রুশ সেনারা আগ্রাসন চালাতে প্রস্তুত হয়ে আছে। যে কোনও সময়ই তাদেরকে সেই নির্দেশ দিতে পারেন পুতিন। এ পরিস্থিতিতে রাশিয়াকে হুঁশিয়ার করে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস বলেছেন, ইউক্রেইনে আগ্রাসন হলে মস্কো চটজলদি এবং মারাত্মক পরিণতি ভোগ করবে।
ক্রেমলিন জানায়, মহড়ায় সাগরে এবং স্থলভাগের নিশানায় হাইপারসনিক ও ক্রুজ- দুই ধরনের ক্ষেপণাস্ত্রেরই সফল পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ করেছে রাশিয়ার বাহিনী। প্রতিবেশী বেলারুশের প্রেসিডেন্টকে পাশে নিয়ে স্ক্রিনে সেই মহড়া দেখেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন। যুক্তরাষ্ট্র পূর্ব ইউরোপে সেনা উপস্থিতি বাড়ানোর এই সময়ে রাশিয়া এমন ক্ষেপণাস্ত্র মহড়া শুরু করল।
তবে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, এ মহড়া নিয়মিত প্রশিক্ষণের অংশ। এতে উদ্বেগের কোনো কারণ নেই। তাছাড়া, গুরুত্বপূর্ণ এ মহড়া পুতিন ‘সিচুয়েশন সেন্টার’ থেকে পর্যবেক্ষণ করছেন বলেও জানান পেসকভ। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ মহড়ার মাধ্যমে সামরিক কমান্ড ও নিয়ন্ত্রণ, সেনা, যুদ্ধজাহাজ, ক্ষেপণাস্ত্র কতটা প্রস্তুত তা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। সেইসঙ্গে পারমাণবিক এবং অপারমাণবিক অস্ত্রের নির্ভরযোগ্যতাও যাচাই করা হবে এ মহড়ায়। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, শক্তি প্রদর্শন করতেই রাশিয়া এ মহড়া চালাচ্ছে… পারমাণবিক শক্তির
মহড়া চালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এই বার্তা হস্তক্ষেপ না করতে বলা নয়, বরং সমস্যাটা ইউক্রেন নয়, আদতে এটি আরও বড় পরিসরের সমস্যা- সেই ইঙ্গিতই এর মধ্য দিয়ে রাশিয়া দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন এক বিশ্লেষক।
উত্তপ্ত হয়ে উঠছে ইউক্রেনের ডনবাস : ইউক্রেনে জাতিগত রুশ অধ্যুষিত ডনবাস অঞ্চলে রুশ সমর্থিত বিদ্রোহী নেতারা সম্ভাব্য যুদ্ধের জন্য তাদের যোদ্ধাদের পূর্ণমাত্রায় প্রস্তুত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। ইউক্রেন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া দনিয়েস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে যুদ্ধ করতে সমর্থ এমন সব পুরুষকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নারী, শিশু ও বয়স্কদের নিরাপদে সরানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। অনেকেই সীমান্ত পেরিয়ে রাশিয়ার রস্তভ-অন-ডন অঞ্চলে আশ্রয় নিয়েছে। প্রচুর শরণার্থী ঢুকতে পারে- এ সম্ভাবনায় রাশিয়া সীমান্তবর্তী ঐ অঞ্চলে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে।
ওদিকে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী বলছে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে আজ (শনিবার) সকালে রুশ সমর্থিত বিদ্রোহীদের চালানো এক হামলায় গোলার আঘাতে তাদের একজন সৈন্য মারা গেছে। অনেকদিন পর গোলাগুলিতে সরকারি সৈন্য নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটলো। ইউক্রেনের সেনাবাহিনীও তাদের বিবৃতিতে বলেছে, বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কাছ থেকে এসব হামলা রাশিয়ার নির্দেশে পরিচালিত হচ্ছে। রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীরা তাদের প্ররোচিত করার চেষ্টা করছে যাতে তারা পাল্টা গুলি চালায় এবং এতে বেসামরিক লোকজনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।
যুদ্ধ শুরুর ভয়ে ইউক্রেনের বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত লুহানস্ক থেকে অনেক নারী, শিশু ও বয়স্ক লোকজন রাশিয়ার ভেতরে ঢুকতে শুরু করেছে। তাদের জন্য শরণার্থী শিবির খোলা হচ্ছে। ডনবাসে বিদ্রোহী যোদ্ধা এবং ইউক্রেনের সৈন্যদের মধ্যে হওয়া যুদ্ধবিরতি ভেঙ্গে পড়ার বেশ কিছু লক্ষণ স্পষ্ট হয়ে উঠছে। গত কদিন ধরে যুদ্ধবিরতি রেখার দুপাশ থেকেই গোলাবর্ষণের খবর আসছে। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরাও বলছেন, গত কয়েকদিনে ওই এলাকায় যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের ঘটনায় নাটকীয়ভাবে বেড়ে গেছে।
দনিয়েস্ক আর লুহানস্কে বিচ্ছিন্নতাবাদী যোদ্ধাদের নেতারা বলছেন, পরিস্থিতি অত্যন্ত গুরুতর। তারা সম্পূর্ণ সামরিক প্রস্তুতি নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তারা দাবি করছেন ইউক্রেন তাদের ওপর হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছে। শিশু, নারী এবং বয়স্কদের নিরাপদে, এমনকি রাশিয়ার ভেতর পাঠানোর পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছেন বিদ্রোহী কম্যান্ডাররা। তবে অনেক পর্যবেক্ষক বলছেন, ইউক্রেনের সীমান্তে রাশিয়া এত ব্যাপক সংখ্যক সৈন্য জড়ো করেছে যে ডনবাসে হামলা চালানোর কোনো সাহস ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর এখন নেই। সেটা করলে ইউক্রেনের জন্য তা আত্মঘাতী হবে।
এদিকে জার্মানির মিউনিখে চলা নিরাপত্তা সম্মেলনে যোগ দিয়ে গতকাল শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস বলেন, আজ আমরা সবাই এ বিষয়ে অবগত যে, ইউক্রেনকে ঘিরে চলমান উত্তেজনায় ইউরোপীয় নিরাপত্তার ভিত সরাসরি হুমকির মুখে পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে পশ্চিমাদের ঐক্যকেই শক্তি হিসাবে উল্লেখ করে হ্যারিস বলেন, হামলা ঘটলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে আমরা প্রস্তুত। হামলা চালালে রাশিয়াকে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।










