কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে রামপুরায় বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবনে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় গ্রেপ্তার জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার এবং বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুসহ ছয়জনকে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। ঢাকার মহানগর হাকিম আরোবিয়া খানম গতকাল শুক্রবার জামিন আবেদন নাকচ করে তাদের কারাগারে পাঠানো আদেশ দেন।
গোলাম পরওয়ার ও টুকুছাড়া বাকি চারজন হলেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সায়েদুল আলম বাবুল, বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক, এমএ সালাম ও মাহমুদুস সালেহীন। রামপুরার ঘটনায় গ্রেপ্তারের পর গত রোববার তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের পুলিশ রিমান্ডে পাঠিয়েছিল আদালত। সেই রিমান্ড শেষে গতকাল তাদের আদালতে হাজির করে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। অন্যদিকে আসামিদের আইনজীবী জামিন চেয়ে আবেদন করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক ছয় আসামির জামিন নাকচ করে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বলে আসামিপক্ষের অন্যতম আইনজীবী আবুল কালাম খান জানান। খবর বিডিনিউজের।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, গত ১৮ জুলাই বেলা সাড়ে ১১টার সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে শিক্ষার্থীরা ডিআইটি রোডগামী রামপুরা ট্রাফিক পুলিশ বক্স ও বিটিভি ভবনের সামনের সড়কে অবস্থান নেয়। এক পর্যায়ে পুলিশ সদস্যরা তাদের বুঝিয়ে সেখান থেকে সরিয়ে দেয়। এরপর বিএনপি ও জামায়াত–শিবিরের ‘শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের নির্দেশে ও সক্রিয় অংশগ্রহণে’ অজ্ঞাতনামা তিন–চার হাজার কর্মী দলবদ্ধ হয়ে সরকারবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেয়। আসামিরা দায়িত্বরত পুলিশ ও আনসার সদস্যদের বাধা উপেক্ষা করে অবৈধভাবে বিটিভি ভবনের প্রধান চারটি গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। এরপর তারা ভবনের ভেতর ব্যাপক ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায়। টেলিভিশন ভবনে কর্মরত বিভিন্ন কর্মকর্তাদের নাম ও পদবি উল্লেখ করে খোঁজাখুঁজি করে প্রাণনাশের হুমকি দেয়।
এজাহারে বলা হয়, সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পরিকল্পিতভাবে সন্ত্রাসী কার্যকলাপের মাধ্যমে তারা বাংলাদেশ টেলিভিশনের ভেতরে থাকা সরকারি মালামাল ভাঙচুর ও ক্ষতিসাধন করে। যার ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক ৫০ কোটি টাকা। একপর্যায়ে পুলিশ ও বিজিবি রাত ৯টার দিকে সেখানকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
সেদিনের হামলায় বিটিভির পোর্টেবল ডিএসএনজি সিস্টেমের সব সমপ্রচার যন্ত্রপাতি, এসব যন্ত্রপাতি পরিবহন কাজে ব্যবহৃত মাইক্রোবাস এবং কেন্দ্রীয় শীতাতপ ব্যবস্থার ক্ষতি হয়। ১৭টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ এবং ৯টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। কর্মকর্তা–কর্মচারীদের ২১টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। বিটিভির মূল ভবনের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, ঢাকা কেন্দ্রের রিসিপশনে অগ্নিসংযোগ, ট্রান্সপোর্ট ভবনে অগ্নিসংযোগ, ক্যান্টিনে, অডিটোরিয়ামে অগ্নিসংযোগ, মেকআপ শাখা ভাঙচুর, ডিজাইন শাখার মেকআপ (ওয়ার্কশপ, স্টোর, ওয়ারড্রব ও গ্রাফিক্স রুম) রুমে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করা হয় বলে অভিযোগ করা হয়েছে মামলায়।