পথিক, তুমি পথ হারাইয়াছ

শিউলী নাথ | সোমবার , ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৫:৫৩ পূর্বাহ্ণ

পথ হারাব বলেই এবার পথে নেমেছি’ কিংবা ‘আমিও পথের মত হারিয়ে যাব’এসব কালজয়ী গানের সম্মোহনী সুরে আমাদের মনে অজানা পথ সম্পর্কে কৌতুহলী করে তুলে। আমরা প্রতিনিয়ত কোন না কোন পথ দিয়ে হাঁটি। এই হাঁটার পথগুলো কেউ না কেউ তৈরি করেছেন যারা নিজের ও দশের প্রয়োজন অনুভব করেছেন। বন জঙ্গল, পাহাড় ঘেরা এই পৃথিবীর কণ্টকাকীর্ণ পথ মসৃণ ও গতিশীল করতে আমরা সেই সকল পথস্রষ্টার কাছে চিরকৃতজ্ঞ। তাই কেউ পথ সৃষ্টি করেন, অন্যরা সেই পথে চলার আনন্দ খুঁজে পান। হাঁটার পথ তো তৈরি হলো, কিন্তু জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য প্রতি বাঁকে রয়েছে আরো নানান পথ। সেই পথগুলোশিক্ষা, সমাজব্যবস্থা, মানবতা, নৈতিকতা ও ধর্মীয় মূল্যবোধের দ্বারা আচ্ছাদিত। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর ‘নবকুমার’ গহীন বনে হারিয়েছিল বলে বাংলা সাহিত্য পেয়েছে এক অমর সংলাপ। ‘পথিক, তুমি পথ হারাইয়াছ’? যদিও বঙ্কিমবাবুর নবকুমার নামে সেই পথিক পথের সন্ধান করে নিয়েছিলেন। কথিত আছে ‘পথ পথিকের সৃষ্টি করে না, পথিকই পথের সৃষ্টি করে’। উপন্যাস জীবনের প্রতিচ্ছবি হলেও বাস্তবতার প্রেক্ষিতে অন্যান্য পথগুলো থেকে একবার হারিয়ে গেলে সেই পথ খুঁজে পাওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে পরে। সন্তানকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে অভিভাবক ও শিক্ষকদের উচিত যেমন সৎ চিন্তাভাবনা ও আদর্শের পথ তৈরি করে দেওয়া তেমনি সমাজের উচ্চপদস্থ শ্রেণির উচিৎ ব্যক্তিকে ইতিবাচক দিকে অগ্রসর হওয়ার পথে নিরপেক্ষতা, মানবতা, নৈতিকতা ও বিচার বিবেচনার পথ উন্মোচন রাখা। এবং ধর্মীয় বিশ্বাসকে পুঁজি না করে মানবকল্যানের জন্য সঠিক ধর্মীয় পথগুলোকে অবমুক্ত করা।

বৃহৎ এই জগৎ সংসারের দিকে তাকালে দেখা যায়, কোনো মানুষই তার সৃষ্টিকর্মকে ভোগ করে যেতে পারেন না। তা কবি, সাহিত্যিক, ঐতিহাসিক বা সমাজতাত্ত্বিক যিনিই হোন না কেন? প্রজন্ম থেকে প্রজন্মই এসবের ফলভোগ করে। মহাজ্ঞানী মহাজনেরা যদি পথ হারিয়ে ফেলতেন তবে আজকের আমরা এই পর্যন্ত এসে পৌঁছাতে পারতাম না। যদিও রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘অপরের কোলে পিঠে চড়িয়া অগ্রসর হওয়ার কোন মাহাত্ম্য নাই। কারণ চলিবার শক্তিলাভই যথার্থ লাভ, অগ্রসর হওয়া মাত্র লাভ নহে’। তবুও আশঙ্কা, সঠিক দিক নির্দেশনার অভাবে যদি আমাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে পরে? তবে সবশেষে উইলিয়াম পেন এর যুক্তিই অনস্বীকার্য – ‘আত্মসম্মান রক্ষায় তোমার ভালোর জন্য তোমাকেই পথ ধরতে হবে’।