কামরুল হাসান একজন বরেণ্য চিত্রশিল্পী। তাঁর আঁকা চিত্রকর্মের নিজস্ব রীতি ছিল লৌকিকতা আর আধুনিকতার মিশেল। তাই তিনি ‘পটুয়া’ নামে খ্যাতি লাভ করেন। শিল্পের এই মাধ্যমটিতে কামরুল হাসান আবহমান বাংলার ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, রাজনীতি – এক কথায় বাংলার সামগ্রিক রূপ ফুটিয়ে তুলেছেন।
কামরুল হাসানের জন্ম ১৯২১ সালের ২রা ডিসেম্বর কলকাতায়। সেখানে গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্টস থেকে ১৯৪৭ সালে চিত্রকলায় স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন তিনি। দেশবিভাগের পর চলে আসেন ঢাকায়। এখানে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের সাথে যুক্ত হয়ে একটি আর্ট স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলাদেশের স্বাধীকার ও অসহযোগ আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন সহ যেকোনো সংকটময় পরিস্থিতিতে, অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে শিল্পী ছিলেন প্রতিবাদে সোচ্চার। তাঁর চিত্রকর্ম গণতান্ত্রিক চেতনা, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আর স্বদেশপ্রেমেরই পরিচয়বাহী। শিল্পীর আঁকা বেশ কিছু চিত্রকলা দেশের বিভিন্ন জাতীয় সংকটে জনসাধারণকে প্রতিবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছে। তেমনি একটি ছবির শিরোনাম ‘এই জানোয়ারকে হত্যা করতে হবে’। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সামরিক শাসক ইয়াহিয়ার রক্তপিপাসু, হিংস্র মুখমণ্ডল নিয়ে আঁকা একটি পোস্টারের শিরোনাম ছিল এটি। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার চূড়ান্ত নকশা এবং বাংলাদেশ সরকারের মনোগ্রাম তৈরির সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন। তাঁর আঁকা ‘তিন কন্যা’ ও ‘নাইওর’ শিরোনামের দুটি চিত্রকর্ম অবলম্বনে যুগোস্লাভিয়া ও বাংলাদেশ দুটি স্মারক ডাকটিকেট প্রকাশ করে। ১৯৮৮ সালের ২রা ফেব্রুয়ারি ঢাকায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেনতিনি। মৃত্যুর কয়েক মিনিট আগে কামরুল হাসান এঁকেছিলেন স্বৈরাচার বিরোধী পোস্টার ‘দেশ আজ বিশ্ববেহায়ার খপ্পরে’। এ সময় তিনি দ্বিতীয় জাতীয় কবিতা উৎসবের অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করছিলেন।