পটিয়াতে একুশে বইমেলা! পটিয়ার ইতিহাসে অনন্য অর্জন

আবদুল্লাহ ফারুক রবি | শনিবার , ২ মার্চ, ২০২৪ at ৭:১০ পূর্বাহ্ণ

গত ২২, ২৩ ও ২৪ ফেব্রুয়ারি পটিয়া বইমেলা পরিষদের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হলো ‘একুশে বই মেলা’। পটিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও নান্দনিক এই মেলা সাড়া ফেলেছে হাজারো বই প্রেমীদের মনে। একুশে বই মেলা শুধু বই বিকিকিনির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি, রূপ নিয়ে উৎসবে। ২২ট বইয়ের স্টলের পাশাপাশি মেলায় ছিল নানান সাংস্কৃতিক আয়োজন। আলোচনা ও কথামালা, নতুন বই এর মোড়ক উন্মোচন, ৩৫টি সংগঠনের দলীয় পরিবেশনা, দলীয় সংগীত, নৃত্য, আবৃত্তি, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, সাধারণ জ্ঞান প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ, পাপেট শো, কবিগান, নাটক, চারুকারু প্রদর্শনী, খাবারের স্টল সহ বহুমাত্রিক নানান আয়োজন। মেলায় চট্টগ্রামের স্বনামধন্য লেখক, প্রকাশক, কবি সাহিত্যিকদের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী, সাধারণ বইপ্রেমী, সংস্কৃতি কর্মী, নানান পেশার মানুষদের পদচারণায় মেলা প্রাঙ্গণ উৎসবমুখর ছিল। দেশসেরা প্রকাশনা সংস্থা প্রথমা ও বাতিঘরের সাথে ছিলো চট্টগ্রামের স্বনামধন্য শৈলী, খড়িমাটি, বলাকা, নন্দন, প্রজ্ঞালোক, চন্দ্রবিন্দু, ইতিহাসের খসড়া, রঞ্জনসহ অনেক প্রকাশনা সংস্থা। তারা বিক্রি করেছে প্রায় ৩ লক্ষ টাকার বই। টাকার পরিমাণে কম হলেও জনসচেতনতা তৈরি ও নতুন পাঠক তৈরিতে এই মেলার অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ৩ দিনের বই মেলায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পটিয়ার সংসদ সদস্য মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, সমাজবিজ্ঞানী ড. অনুপম সেন, সাহিত্যিক হরিশংকর জলদাস, জাতীয় মহিলা পরিষদের চেয়ারম্যান চেমন আরা তৈয়ব, কবি রাশেদ রউফসহ অনেক কবি, সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ ও সাংস্কৃতিক সংগঠক। বইমেলা উৎযাপন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সাবেক মেয়র অধ্যাপক হারুনর রশীদ ও সদস্য সচিব মুহাম্মদ ছৈয়দের নেতৃত্বে কাজ করেছে পটিয়া সর্বস্তরের সংস্কৃতিকর্মী ও বইপ্রেমীরা। এছাড়াও নেপথ্যের অন্যতম কারিগর ছিলেন অধ্যাপক অভিজিৎ বড়ুয়া মানু ও অধ্যাপক ভগিরৎ দাশ। সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এই বই মেলা আলোর মুখ দেখেছে। সফল ও সার্থক হয়েছে পটিয়ার সর্বসাধারণের উপস্থিতিতে। বইমেলায় দলীয় পরিবেশনা নিয়ে উপস্থিত হয়েছিলো সাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, বোধন আবৃত্তি পরিষদ, প্রমা আবৃত্তি সংগঠন, প্রত্যয় শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক একাডেমিসহ পটিয়ার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন। পটিয়ার মতো উপজেলা শহরে বইমেলার আয়োজন শুধু বই বিক্রির জন্য নয়। বই এর প্রতি পাঠকের আগ্রহ ফিরিয়ে আনা, সচেতনতা তৈরি, নতুন পাঠক তৈরি বইসহ ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সাময়িক মিলনের কেন্দ্রস্থল হল এই বইমেলা। তাই পটিয়ার মতো উপজেলা শহরে বইমেলার আলাদা গুরুত্ব ও প্রাসঙ্গিকতা রয়েছে। গতানুগতিক বিভিন্ন ধরনের মেলা থেকে বইমেলার বিস্তর ফারাক রয়েছে। বইমেলা মানে প্রিয়জন ও বন্ধুবান্ধবদের সাথে ঘোরা ও আলাপচারিতার পাশাপাশি অচেনা বইয়ের সন্ধান, কিছু অপ্রত্যাশিত বই হঠাৎ কোন স্টলে পেয়ে যাওয়া, নতুন কিছু বইয়ের মোড়ক উন্মোচন, লেখক পাঠকদের মধ্যে সরাসরি ভাব বিনিময়, নতুন পাঠক তৈরি করা, শিক্ষার্থীদের বইয়ের সাথে পরিচয় করে দেওয়া, বিভিন্ন প্রকাশনী সংস্থার প্রতিনিধির সাথে বিভিন্ন বই সম্পর্কে খোঁজ খবর নেওয়াসহ বহুবিধ উদ্দেশ্য একসাথে সাধিত হতে পারে বইমেলায়। তদুপরি উপরি পাওনা হিসেবে সাংস্কৃতিক মঞ্চে বিভিন্ন শিল্পী ও সংগঠনের মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। তাছাড়া ক্ষুদে পড়ুয়াদের নিত্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন বই ছাড়াও নানান ধরনের বই তারা নিজ চোখে পরক করার সুযোগ রয়েছে বই মেলায়। তাই দেশের প্রতিটি উপজেলায় সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় বই মেলা আয়োজনের জন্য সরকারের সুনজর ও প্রচেষ্টা জ্ঞাননির্ভর জাতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআহারে জীবন!
পরবর্তী নিবন্ধঅটিজম শিশুর মা-বাবার ডিনাইল মুড বা অস্বীকারের ধাঁধা