নূরজাহান বেগম (১৯২৫ – ২০১৬)। বাংলাদেশে নারী সাংবাদিকতার অগ্রদূত এবং সাহিত্যিক। তিনি ভারত উপমহাদেশের প্রথম নারী সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘বেগম’ পত্রিকার সূচনালগ্ন থেকে এর সম্পাদনার কাজে জড়িত ছিলেন এবং ছয় দশক ধরে বেগম পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। নূরজাহান বেগম ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দের ৪ঠা জুন চাঁদপুর জেলার চালিতাতলী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার ডাক নাম ছিল নূরী। পিতা সওগাত পত্রিকার সম্পাদক মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন ও মাতা ফাতেমা বেগম। সাখাওয়াত মেমোরিয়াল বিদ্যালয়ে শিশু শ্রেণীতে ভর্তির মাধ্যমে তিনি তার শিক্ষাজীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে বেলতলা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন কিন্তু সেখান থেকে পুনরায় আগের বিদ্যালয়ে ফিরে আসেন। ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। কলকাতার লেডি ব্রেবোর্ণ কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হন এবং ১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। একই কলেজ থেকে ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে বিএ ডিগ্রি লাভ করেন। বেগম পত্রিকার প্রকাশনা শুরু হয় ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের ২০শে জুলাই যখন নূরজাহান বেগম বিএ শ্রেণিতে পড়তেন। তার বাবা নাসিরুদ্দীন প্রতিষ্ঠিত বেগম পত্রিকার প্রথম সম্পাদক ছিলেন সুফিয়া কামাল। প্রথম চার মাস সম্পাদক হিসেবে এর দায়িত্ব পালন করেন তিনি। নূরজাহান বেগমের মতো যারা সাখাওয়াত মেমোরিয়াল স্কুল ও লেডি বেবোর্ন কলেজে পড়তেন তারা সবাই মিলে বেগম–এর জন্য কাজ করতেন। বেগমের শুরু থেকে নূরজাহান বেগম ছিলেন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক। তিনি বিয়ে করেন রোকনুজ্জামান খানকে (দাদা ভাই)। তিনি ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে তারা বাংলাদেশে চলে আসেন। প্রথমদিকে পুরুষরাও এতে লিখতেন। তবে এখন এতে শুধুমাত্র নারীরাই লিখে থাকেন। নারী জাগরণ, নতুন লেখক সৃষ্টি, সাহিত্য ও সৃজনশীলতায় নারীকে উৎসাহী করাই ছিল তাঁর মূল লক্ষ্য। নূরজাহান বেগম বলেনঃ ‘মেয়েরা এখন হরহামেশা বাইরে পড়তে যাচ্ছে। উচ্চ ডিগ্রি নিয়ে দেশে ফিরছে। তারপরও আমার মনে হয় নারীকে আরও সুযোগ–সুবিধা দেওয়া উচিত। তাহলে সামাজিক উন্নয়ন দ্রুত ঘটবে। যোগ্যতার সুবিচার করতে হবে তাঁদের’। পত্রিকার বাইরে তিনি আপওয়া, জোনটা ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশ শিশু কল্যাণ পরিষদ, মহিলা পরিষদ, বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের সদস্য হিসেবে সমাজসেবা করেছেন। তিনি কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব হিসেবে নন্দিনী সাহিত্য ও পাঠ চক্রের সম্মাননা লাভ করেন। ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ সরকার থেকে রোকেয়া পদক, ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে গেন্ডারিয়া মহিলা সমিতি থেকে শুভেচ্ছা ক্রেস্ট, ২০০২ খ্রিষ্টাব্দে অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৩শে মে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।