নগরে সড়কের নিরাপত্তা বাড়াতে একসঙ্গে কাজ করবে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। এর অংশ হিসেবে সংস্থা দুটো গতকাল চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। ফলে এখন থেকে উভয় সংস্থাই নগরে সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার জন্য পারষ্পরিক তথ্য আদান–প্রদান এবং সমন্বয় করে কাজ করবে। চুক্তির আওতায় চসিক ও সিএমপি দুর্ঘটনার তথ্য–প্রমাণ বিশ্লেষণ করে নগরে দুর্ঘটনা ও হতাহতের ঘটনা কমিয়ে আনতে একটি সমন্বিত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। শহরের সড়ক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ স্থান এবং রোড চিহ্নিত করতে একত্রে কাজ করবে, যেখানে নকশা পরিবর্তন ও পরিমার্জন করা দরকার সেটাও চিহ্নিত করবে। এছাড়া তথ্য বিশ্লেষণ করে যৌথভাবে বার্ষিক সড়ক নিরাপত্তা প্রতিবেদন প্রকাশ করবে।
টাইগারপাসস্থ নগর ভবনের অস্থায়ী কার্যালয়ে চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী এবং সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়ের উপস্থিতিতে এ ‘ডাটা শেয়ারিং এগ্রিমেন্ট (ডিএসএ)’ স্বাক্ষর করা হয়। চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম এবং সিএমপির ডেপুটি কমিশনার (হেডকোয়ার্টার) আব্দুল ওয়ারিশ নিজ নিজ সংস্থার পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতে বাংলাদেশের কোনো শহরের দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এটিই প্রথম চুক্তি। চুক্তিটি সড়ক নিরাপত্তা সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের জন্য চসিক ও সিএমপির মধ্যে একটি সমন্বিত পদ্ধতির বিকাশ ঘটাবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিস ইনিশিয়েটিভ ফর গ্লোবাল রোড সেফটি (বিআইজিআরএস) বিশ্বের ২৮টি শহরে রোড ক্র্যাশে মৃত্যু ও হতাহতের সংখ্যা কমাতে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করেছে। চট্টগ্রামেও বিআইজিআরএস কারিগরি সহায়তা দিবে চসিক ও সিএমপিকে।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, সমন্বিত প্রয়াস ছাড়া সাফল্য সম্ভব নয়। আজকে আমরা নতুন যুগে প্রবেশ করেছি। ডাটা শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে আস্তে আস্তে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সেতু তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশন এবং সিএমপি যানজটমুক্ত চট্টগ্রাম গড়তে একসাথে কাজ করছে। ইতোমধ্যে উচ্ছেদ কার্যক্রমের কারণে শহরে যানজট কমেছে। এছাড়া পে–পার্কিং করার বিষয়েও আমরা একত্রে কাজ করছি। এই চুক্তির আওতায় পারষ্পরিক তথ্য আদান–প্রদানের মাধমে আমরা নিরাপদ নগর পরিকল্পনায় আরো এগিয়ে যাব।
সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় বলেন, আমরা অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি বিভিন্ন তথ্য নিয়ে রাস্তার ডিজাইন চেঞ্জ করার কারণে অনেক ক্ষেত্রে দুর্ঘটনা কমে আসছে। তিনি বলেন, সঠিক তথ্য সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করে। এই চুক্তির আলোকে তথ্যের আদান–প্রদান ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাকে আরো বেশি বিজ্ঞানভিত্তিক ও গতিশীল করবে, ভূমিকা রাখবে সড়ককে আরো নিরাপদ করতে। দীর্ঘমেয়াদে এই চুক্তি নগরীর অবকাঠামোগত ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের মাধ্যমে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়নে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
এদিকে চুক্তির লক্ষ্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়, নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করার জন্য দায়িত্বশীল দুটি প্রধান সংস্থা সিএমপি এবং চসিকের মধ্যে একটি সমন্বয় প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠা করা। নগরের সড়ক ব্যবস্থাপনা, সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য লিপিবদ্ধ করা এবং তদন্তের দায়িত্ব সিএমপির। অন্যদিকে নিরাপদ সড়ক অবকাঠামো উন্নয়ন এবং বিদ্যমান রাস্তাগুলোর দেখভালের কাজটি চসিকের।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এই চুক্তি দুর্ঘটনার তথ্য আদান–প্রদান, ব্যবস্থাপনা এবং বিশ্লেষণ, রাস্তার ডিজাইন এবং তথ্য–উপাত্ত যথাযথভাবে ব্যবহারের জন্য একটি প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠা করবে। এর ফলে প্রতিটি সংস্থা কার্যকরভাবে তথ্যগুলো কাজে লাগিয়ে সড়ক নিরাপত্তায় শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হবে। এছাড়া সড়ক অবকাঠামোর নকশা, নির্মাণ, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি বিষয়ে উভয় সংস্থা একে অপরের সঙ্গে পরামর্শ করবে।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম বাহাদুর, আবুল হাসনাত মো. বেলাল, চসিকের প্রধান প্রকৌশলী শাহীন–উল ইসলাম চৌধুরী।