গত ২৩ জানুয়ারি রাতের ঘটনা। নগরীর জামালখানে রাস্তার পাশে প্রসব বেদনায় কাতরাচ্ছিলেন মানসিক ভারসাম্যহীন এক নারী। এক পথচারী সেটি বুঝতে পেরে পার্শ্ববর্তী বেসরকারি এক হাসপাতাল থেকে মিডওয়াইফ–নার্স ডেকে নেন। কল দেয়া হয় জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে। খবর পেয়ে পুলিশের এক এসআইও ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। পরে রাস্তার পাশেই এক ছেলে সন্তানের জন্ম দেন ওই নারী। সে–ই রাতেই (রাত দেড়টার দিকে) নবজাতক ও প্রসূতি ওই নারীকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। মাকে ৩৩ নম্বর গাইনি ওয়ার্ডে ভর্তি করালেও শিশু সন্তানটির ঠাঁই হয় ৩২ নং নবজাতক ওয়ার্ডে। সেই থেকে হাসপাতালের এই নবজাতক (নিওনেটাল) ওয়ার্ডই শিশুটির ঠিকানা। যদিও জন্মের পর থেকেই শিশুটির তেমন কোনো জটিলতা ছিলনা বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। সুস্থ–সবল এই শিশুর বয়স এখন আড়াই মাস।
গতকাল সোমবার হাসপাতালের নবজাতক ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, ওয়ার্ডের আলাদা ব্লকে (ই–ব্লকে) একটি বেবি কটে শিশুটিকে রাখা হয়েছে। দায়িত্বরত চিকিৎসক–নার্সরা জানান, শিশুটিকে ২৩ জানুয়ারি দিবাগত রাত দেড়টার দিকে এখানে ভর্তি করা হয়। যদিও তারিখ হিসেবে ২৪ জানুয়ারি উল্লেখ করা আছে। জন্মের সময় শিশুটির ওজন ছিল ২ কেজি। আর তেমন কোন জটিলতা ছিলনা। এখনো শিশুটির তেমন কোনো জটিলতা নেই। সম্পূর্ণ সুস্থ–স্বাভাবিক রয়েছে। তবে বয়স আড়াই মাস পেরুলেও এখনো কোনো নাম রাখা হয়নি শিশুটির। বলতে গেলে নাম–পরিচয় ছাড়াই বেড়ে উঠছে শিশুটি। ওয়ার্ডের ডাক্তার–নার্স আর আয়ারাই শিশুটিকে দেখভাল করে থাকেন। আর হাসপাতাল রোগী কল্যাণ সমিতি শিশুটির সার্বিক পরিচর্যা বাবদ সবধরণের সহায়তা করছে বলে জানান চমেক হাসপাতাল রোগী কল্যাণ সমিতির সদস্য সচিব ও হাসপাতাল সমাজসেবা কর্মকর্তা অভিজিৎ সাহা।
চিকিৎসক–নার্সরাও বলছেন, যেহেতু শিশুটির মা নেই। বাচ্চাটিকে ফর্মূলা দুধ খাওয়াতে হয়। আর যা লাগে রোগী কল্যাণ সমিতি এর খরচ দেয়। ডাক্তার–নার্সরা নিজেরাও শিশুটির বিভিন্ন খরচে সহায়তা করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিশুটির মাকে গাইনি ওয়ার্ডে ভর্তি করানো হয়েছিল। কিন্তু একদিন পরই ওই নারী হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে, শিশুটিকে দত্তক হিসেবে পেতে এরই মাঝে বেশ কয়টি পরিবার হাসপাতাল ও ওয়ার্ডে যোগাযোগ করেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একটি সুস্থ শিশুকে দীর্ঘদিন হাসপাতালে রাখলে শিশুটির স্বাস্থ্যগত বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিতে পারে। অসুস্থ হয়ে পড়ার আশঙ্কাও অমূলক নয়। বিষয়টি স্বীকার করে নবজাতক ওয়ার্ডের প্রধান ডা. মোহাম্মদ শাহীন আজাদীকে বলেন, ওয়ার্ডের চিকিৎসক–নার্সদের পরম যত্নে শিশুটি বেড়ে উঠছে।
তবে দীর্ঘ দিন হাসপাতালে থাকলে একটি সুস্থ শিশু অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে বা বিভিন্ন জটিলতাও দেখা দিতে পারে, এ আশঙ্কা অমূলক নয়। অনেকেই শিশুটিকে দত্তক নিতে যোগাযোগ করেছেন। কিন্তু আমাদের পক্ষে এ সংক্রান্ত কোনো সিদ্ধান্ত দেয়া সম্ভব না। আদালতের মাধ্যমে এ সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
জানতে চাইলে মঙ্গলবারই (আজ) এ বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ–খবর নেবেন জানিয়ে
চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান আজাদীকে বলেন, স্বাভাবিকভাবে পুলিশের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আদালতকে অবহিত করা হয়ে থাকে। যা–ই হোক, শিশুটির বিষয়ে আমরা দ্রুততার সাথে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব।