চট্টগ্রামে করোনার নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা কমে অর্ধেকে নেমেছে হঠাৎ। লকডাউনের আওতায় উড়োজাহাজ/বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণের কারণে বিদেশগামীর সংখ্যা এখন নেই বললেই চলে। অথচ প্রতিদিন পরীক্ষাকৃত নমুনার মধ্যে সিংহভাগই ছিল এই বিদেশগামী যাত্রীদের নমুনা। বিমানে যাতায়াতে করোনা নেগেটিভ সনদ বাধ্যতামূলক করায় বাধ্য হয়ে এই নমুনা পরীক্ষা করে থাকেন বিদেশগামীরা। কিন্তু ১৪ এপ্রিল থেকে ঘোষিত লকডাউনে আকাশপথে চলাচলও এক প্রকার বন্ধ। ফলে বিদেশগামীদের যাতায়াতও অনেকটা বন্ধ হয়ে গেছে। এতে করে অনেকটা থমকে গেছে বিদেশগামীদের নমুনা পরীক্ষা কার্যক্রমও। পাশাপাশি লকডাউনের কবলে পড়ে উপসর্গ থাকা সাধারণ মানুষের নমুনাদানের সংখ্যাও কমে গেছে উল্লেখযোগ্য হারে। ল্যাব সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যাতায়াত অসুবিধায় সাধারণ মানুষ নমুনা দিতে কেন্দ্রে আসতে পারছেন না। যার কারণে নমুনার সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমছে।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ১১ এপ্রিল ২ হাজার ৬০৩টি নমুনা পরীক্ষা হয় চট্টগ্রামে। এর মধ্যে করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয় ৫৪১ জনের।
১২ এপ্রিল ২ হাজার ৬২১টি নমুনা পরীক্ষায় পজিটিভ শনাক্ত হয় ৪৩১ জনের। একই ভাবে ১৩ এপ্রিল পরীক্ষা হয় ২ হাজার ৬৮২টি নমুনা। এর মধ্যে করোনা পজিটিভ পাওয়া যায় ৪১৭ জনের। তবে একদিনের মধ্যেই নমুনার সংখ্যা কমে প্রায় অর্ধেকে নেমেছে ১৪ এপ্রিল। এদিন (১৪ এপ্রিল) মাত্র ১ হাজার ৪৪২টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে চট্টগ্রামে। যা আগের দিনের প্রায় অর্ধেক। ১ হাজার ৪৪২টি নমুনা পরীক্ষায় ৩৬৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।
একদিনের ব্যবধানে নমুনার সংখ্যা অর্ধেকে নেমে আসার পিছনে বিদেশগামীদের নমুনা কমে যাওয়াই অন্যতম কারণ বলে অভিহিত করেছেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা ও ল্যাব সংশ্লিষ্টরা। অবশ্য, বিদেশগামীদের রেজিস্ট্রেশন ও নমুনা গ্রহণ কার্যক্রম বন্ধ নেই বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কন্ট্রোল রুমে দায়িত্বপালনরত জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক সুজন বড়ুয়া। কেউ আসলে তাদের ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে না জানিয়ে বিদেশগামীদের সব ধরণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলেও জানান তিনি।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী- ৬০৭ জন বিদেশগামীর নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১৩ এপ্রিল। ১৪ এপ্রিল এ সংখ্যা নেমেছে ৫৫ জনে। আর গতকাল (১৫ এপ্রিল) এ সংখ্যা মাত্র ৪ জন। মূলত বিদেশগামীদের যাত্রা থমকে যাওয়ায় নমুনা পরীক্ষায়ও এর বড় ধরণের প্রভাব পড়েছে বলে মনে করেন বিআইটিআইডি ল্যাবের প্রধান ডা. শাকিল আহমেদ। তিনি গতকাল আজাদীকে বলেন, অন্য সময়ে যেখানে ৭০০/৮০০ বিদেশগামীর নমুনা পরীক্ষা করতে হতো, সেখানে বৃহস্পতিবার (গতকাল) মাত্র ৪ জন বিদেশগামীর নমুনা এসেছে। স্বাভাবিকভাবেই সংখ্যাটা উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে গেছে। পাশাপাশি লকডাউনে যাতায়াত অসুবিধার কারণে সাধারণ মানুষও কিন্তু নমুনা দিতে আসতে পারছেন না। আগে প্রতিদিন আমাদের এখানে ১৫০ থেকে ২০০ মানুষের নমুনা নিতে হতো। যারা বিভিন্ন উপসর্গ থাকায় নমুনা দিতে আসতেন। কিন্তু গত ২/১ দিনে এ সংখ্যা ৫০ জনও হচ্ছে না। তার মানে সাধারণ মানুষ কিন্তু যাতায়াত অসুবিধার কারণেই আসতে পারছেন না বলে আমাদের ধারণা। সব মিলিয়ে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যাটা দৃশ্যমানভাবে কমে গেছে।
গ্রামাঞ্চলে নমুনা পরীক্ষায় আগ্রহ কম :
উপসর্গ দেখা দিলেই নমুনা পরীক্ষা করানো উচিত মর্মে সবসময় বলে আসছেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। তবে গ্রামাঞ্চলের মানুষের মাঝে এ বিষয়ে সচেতনতা তুলনামূলক কম বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। যার কারণে গ্রামাঞ্চলের মানুষের মাঝে নমুনা পরীক্ষায়ও আগ্রহ কম। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যও এই কথা জানান দেয়। সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়- চট্টগ্রামে দৈনিক আড়াই হাজার নমুনা পরীক্ষা হলেও এর মধ্যে ১৪ উপজেলা থেকে আসা নমুনার সংখ্যা দুইশর কিছু কম-বেশি। গতকাল (১৫ এপ্রিল) ১৪ উপজেলা থেকে মাত্র ২১১টি নমুনা এসেছে ল্যাবগুলোতে। এর আগে ৮ এপ্রিল আসে ২২০টি। ১৪টি উপজেলার হিসেবে এ সংখ্যা খুবই কম। কোনো কোনো উপজেলায় দিনে একটি নমুনাও পাওয়া যাচ্ছে না। ৮ এপ্রিল নমুনা সংক্রান্ত তালিকায় দেখা যায়- আনোয়ারা ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলা থেকে একটি নমুনাও আসেনি। একইভাবে চন্দনাইশ, সীতাকুণ্ড, লোহাগাড়া ও সন্দ্বীপ উপজেলা থেকেও কোনো নমুনা পাওয়া যায়নি গতকাল। বেশ কয়টি উপজেলার নমুনার সংখ্যা দশটির কম। সবমিলিয়ে গ্রামাঞ্চলের মানুষের মাঝে নমুনা পরীক্ষায় আগ্রহ তেমন দেখা যাচ্ছে না। গ্রামাঞ্চলে মানুষকে সচেতন করা ও নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়াতে হলে ইউনিয়ন পর্যায়ে নমুনা সংগ্রহের ব্যবস্থা করতে হবে বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্য অধিকার রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব ডা. সুশান্ত বড়ুয়া। তিনি বলেন, এখন উপসর্গ দেখা দিলেও মানুষকে উপজেলা সদরে গিয়ে নমুনা দিতে হয়। সাধারণ মানুষ বিশেষ করে যারা খুব বেশি সচেতন না তারা কিন্তু এতদূর কষ্ট স্বীকার করে উপজেলায় যেতে চায় না। বরং তার ঘরের আশেপাশে (ইউনিয়ন পর্যায়ে) যদি নমুনা সংগ্রহের ব্যবস্থা করা যায়, তবে গ্রামের এসব মানুষ কিছুটা হলেও আগ্রহী হয়ে উঠবে বলে আমরা মনে করি। এটি করতে পারলে পরিস্থিতির অনেকটা পরিবর্তন আসতে পারে বলেও মনে করেন ডা. সুশান্ত বড়ুয়া।