হাসি, আনন্দ মানুষের জীবনে ভরে উঠুক আজীবন। শ্রেণিভিত্তিক বা বর্ণ, গোত্র বৈষম্য নই। বাঙালির জীবনে নতুন আশা-আকাঙ্খা মানে ঐতিহ্যময় “বাংলা নববর্ষ”। ফসলের সুগন্ধ গ্রামে প্রতি ঘরে শোভাময়, পাকা ফসল তুলতে কৃষকরা ব্যস্ত, তা দেখে তাদের সন্তানের মুখে হাসি। রাজা, নবাবদের আমলে এই দিনে খাজনা আদায় আদি প্রথা যা আজও বিদ্যমান। বিলাসিতা শাসকদের কঠোর শাস্তিতে সারা বছর কষ্ট করে ফসল ফলানো শোষকদের কাছ থেকে খাজনা আদায় করাই “নববর্ষ”। কৃষকরা তাদের সন্তানের মুখে দুমুঠো ভাত ও তুলে দিতে পারে না। সবই তো শাসকদের গোলায়, পরিশ্রমের অর্থ শারীরিক শাস্তি প্রাপ্তি। কিন্তু আশা তাদের পিছু হটে না, মনের মাঝে আবার নতুন ফসল ফলানোর আখাঙ্খা সেই শাসকদের জমিতে, কারণ তারা জন্মগত শোষক। লাঞ্ছনা, অর্থকষ্ট, দুঃখ ভরা জীবনে অন্যের মুখের আহার জোগাড় করাই তাদের পেশা, অন্যদিকে তাদের মুখের আহার ছিনিয়ে নেওয়া শাসকদের স্বভাব। তাদের কষ্টের কান্না কেউ শোনার নেই। প্রকৃতি অন্যায় মেনে নেয় না। আজ রাজা নবাব বিলুপ্ত, কিন্তু বিলুপ্ত নই শাসক ও অত্যাচার। কষ্ট করে ন্যায্য প্রাপ্যতে ব্যর্থ হতে হতে বিংশ শতাব্দীতে এসে কৃৃষক নামটা বিলুপ্ত হতে চলেছে। আজ আহার গ্রহণের সংখ্যা বাড়লেও আহার তুলে দেওয়ার সংখ্যাটা কমেই চলেছে। নববর্ষ সংখ্যা গরিষ্টদের আনন্দ হলেও সংখ্যা লঘুদের কান্না আর চিন্তার দিন। মানব কল্যাণের জন্য মানুষের সৃষ্টি, কিন্তু বিপরীত প্রক্রিয়া বর্তমানে বিদ্যমান। তাই বিংশ শতাব্দীর শপথ হোক নববর্ষে সুখ, শান্তি, আনন্দ বয়ে আনুক ধরিত্রীর প্রতিটি মানব জীবনে। প্রকৃতির প্রতিশোধ আর নই, পৃথিবী হোক শান্তিময়।