নতুন করে গড়তে ভাঙা হল চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার

বিকল্প শহীদ মিনার মিউনিসিপ্যাল স্কুল মাঠে

| শুক্রবার , ১৪ জানুয়ারি, ২০২২ at ৬:৩৮ পূর্বাহ্ণ

সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স প্রকল্পের আওতায় একই নকশায় নতুনভাবে নির্মাণের জন্য চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারটি ভাঙা হয়েছে। পুরনো শহীদ মিনারের স্থানে একই নকশায় নতুন শহীদ মিনারটির নির্মাণ কাজ আগামী ৯ মাসের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ চলছে বলে জানিয়েছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। আর এই সময়ের জন্য মিউনিসিপ্যাল মডেল স্কুল ও কলেজ মাঠে একটি বিকল্প শহীদ মিনার নির্মাণের কাজও শুরু হয়েছে। খবর বিডিনিউজের।
১৯৬২ সালে নগরীর কেসি দে রোডে পাহাড়ের পাদদেশে প্রথম শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। পরে ১৯৭৪ সালে এটি বর্তমান রূপ লাভ করে। চট্টগ্রামে কোনো স্মৃতি সৌধ না থাকায় একুশে ফেব্রুয়ারি, ১৬ ডিসেম্বর, ২৬ মার্চসহ জাতীয় দিবসগুলোতে এখানেই কর্মসূচি পালন করা হয়। সবশেষ গত ১৬ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিজয় দিবসের কর্মসূচি পালিত হয়। এরপর ২৭ ডিসেম্বর শুরু হয় পুরনো কাঠামোটি ভাঙার কাজ।
গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী রাহুল গুহ বলেন, ডিসেম্বর মাসের শুরুতেই মিউনিসিপ্যাল স্কুলের মাঠে শহীদ মিনার নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যেই সেটির কাজ শেষ হবে আশা করছি। আসন্ন ২১ ফেব্রুয়ারির কর্মসূচি সেখানে পালন করা যাবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার মিউনিসিপ্যাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে গিয়ে দেখা যায় শহীদ মিনারের মূল অবকাঠামো নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ। স্কুলের মূল ফটক থেকে শহীদ মিনার পর্যন্ত একটি হাঁটা পথ নির্মাণের কাজ চলছে। এদিকে পুরনো শহীদ মিনার এলাকায় মিনারের মূল অংশ পুরোটাই ভেঙে ফেলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার শ্রমিকরা মিনারের ভিত্তি ভাঙার কাজ কাজ করছিল।
এ বিষয়ে গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী রাহুল গুহ বলেন, ২৭ ডিসেম্বর থেকে ভাঙার কাজ শুরু হয়েছে। আমাদের ৯ মাস সময় দেওয়া হয়েছে। সে লক্ষ্যে কাজ এগিয়ে চলেছে। আশা করি, আগামী বিজয় দিবস একই নকশায় নতুনভাবে নির্মিত শহীদ মিনারটিতেই কর্মসূচি পালন করা সম্ভব হবে।
চট্টগ্রামের সংস্কৃতিকর্মীদের দীর্ঘদিনের দাবির মুখে চট্টগ্রাম মুসলিম ইনস্টিটিউট হল ভেঙে সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্সে নির্মাণ করছে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়। ২৩২ কোটি টাকার প্রকল্পটির কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে। প্রকল্পের অধীনে মুসলিম ইনস্টিটিউট হল ও পাবলিক লাইব্রেরির অংশের পুরনো স্থাপনা ভেঙে ১৫ তলা গণগ্রন্থাগার ও আট তলা অডিটরিয়াম ভবন নির্মাণ চলছে। সড়কের দুই পাশে সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্সের দুই অংশের মধ্যে সংযোগ ঘটাতে রাস্তার ২১ ফুট উপর দিয়ে একটি প্লাজা নির্মাণ করা হবে। এই প্লাজা দিয়ে হেঁটে কমপ্লেক্সের উভয় অংশে চলাচল করা যাবে। শহীদ মিনার অংশে মুক্তমঞ্চ, শহীদ মিনার এবং প্লাজা নির্মাণ করতে যে নকশা করা হয়েছে, তাতে বর্তমান শহীদ মিনারটির ভিত্তি ভাঙার পাশাপাশি মিনার আরও উঁচুতে স্থাপন করতে হবে। এ কারণেই সেটি ভেঙে সাময়িকভাবে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
গত বছরের জুনে বিষয়টি আলোচনায় এলে শহীদ মিনার সাময়িকভাবে সরানোর বিষয়টি নিয়ে আপত্তি তোলেন সংস্কৃতিকর্মীরা। পাশাপাশি শহীদ মিনারের পাশে গাছপালা কেটে মিউজিয়াম ও ফুড কোর্ট না করারও দাবি জানান তারা। পরে ২৫ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস নগরীর শহীদ মিনার এলাকায় সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্সের চলমান নির্মাণ কাজ পরিদর্শনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে জানান, শহীদ মিনার কোথাও সরিয়ে নেওয়া হবে না, শুধু সংস্কার করা হবে। এটি এখানেই স্থায়ীভাবে থাকছে। যে নকশায় এই প্রকল্পে নির্মাণ কাজ করা হচ্ছে, তারই ধারাবাহিকতায় শহীদ মিনারও উন্নয়ন করা হবে।

সবশেষ গত ৩ অক্টোবর এক সভায় সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স প্রকল্পের আওতায় বর্তমান শহীদ মিনারটি সংস্কার ও সম্প্রসারণ কাজ ৯ মাসের মধ্যে শেষ করতে বলেন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপাহাড়তলীতে স্ত্রীর সাথে ঝগড়া করে যুবকের গলায় ফাঁস
পরবর্তী নিবন্ধকাটছে না পোল্ট্রি খাতের দুর্দিন