বর্তমানে ধর্মের সওদাগর বের হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, এসব সওদাগরের কাজ হচ্ছে একটা ধর্মীয় বিষয়কে সামনে এনে বিবাদ সৃষ্টি করে দেওয়া। এতে তাদের দুই–তিনটা লাভ আছে। একদিকে ধর্মের একটা অংশের সে নেতা হয়ে গেল। পত্রপত্রিকায় এমন এমন বক্তব্য দিবে যেটা সত্যের সাথে এবং আসল ঘটনার সাথে কোনো সম্পর্কই নেই। এদের কারণে একটি জাতি কত বড় বিপদের সম্মুখীন হয় তা তারা দ্বিতীয়বার চিন্তা করে না। তারা একটি জাতিকে বিভক্ত করে নেতৃত্ব দিতে চায়। লাভবান হতে চায়।
তিনি গতকাল বিকেলে নগরের সল্টগুলা ক্রসিংস্থ সীম্যান্স হোস্টেল ন্যাশনাল মেরিটাইম ইনস্টিটিউটে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কঠিন চীবর দান উৎসব উপলক্ষে ইপিজেড সার্বজনীন বৌদ্ধ বিহার আয়োজিত ধর্মসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। এরপরে সন্ধ্যায় তিনি মুহুরী পাড়ায় বিএনপির দলীয় কার্যালয় উদ্বোধন করেন। বাংলাদেশ ভিক্ষু মহাসভার উপ সংঘরাজ সদ্ধর্মবারিধি প্রিয়দর্শী মহাথের এর সভাপতিত্বে ও প্রিয়রত্ন মহাস্থবিরের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা প্রফেসর ড. সুকোমল বড়ুয়া, সাবেক সংসদ সদস্য জহির উদ্দিন স্বপন, ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপি নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট নিপুন রায় চৌধুরী, নগর বিএনপির আহ্বায়ক আলহাজ্ব এরশাদ উল্লাহ, পাথরঘাটা মহাবোধি বিহারের অধ্যক্ষ ভদন্ত পি. লোকানন্দ মহাথেরো। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন ইপিজেড সার্বজনীন বৌদ্ধ বিহারের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ জ্ঞানসারথি অধ্যাপক ভদন্ত জ্ঞানরত্ন মহাথেরো। সম্মানিত অতিথি ছিলেন মহানগর জাতীয়তাবাদী বৌদ্ধ ঐক্য ফ্রন্টের আহ্বায়ক রুবেল বড়ুয়া।
আমীর খসরু বলেন, বাংলাদেশে অনেক রকম সমস্যা আছে। আর সেসব সমস্যার সমাধান না দিয়ে যদি উল্টো সমস্যাকে রাজনৈতিক মূলধন বানিয়ে ফেলা হয় তাহলে আর সমাধান হবে না। তাই সমস্যার সমাধান করতে হবে। সেসব সমস্যার নিয়ে কথা বলতে হবে, চেষ্টা করতে হবে, ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, সমস্যাকে মূলধন করলে সমস্যা আরো গুরুতর হবে, আরো গভীরে যাবে। দেশটা নতুন বাংলাদেশ হয়েছে, নতুন আকাক্সখা জন্মেছে, নতুন যে ভাবনা জন্মেছে এটাকে সবাই মিলে কাজে লাগাতে হবে।
আমীর খসরু বলেন, সমস্যাকে যদি রাজনৈতিক মূলধন বানান, কিংবা কোনো একটি সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য কিংবা বিশেষ নেরেটিভ তৈরি করার জন্য, তাহলে সেটা তো সমাধান হবে না। এতে সমস্যা আরো বিপদ বাড়িয়ে দিবে। যাদের মাথা বিক্রি করে সেই ধরনের বিভক্তি সৃষ্টি করা হচ্ছে; সেসব লোক সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাবে।
তিনি বলেন, আর ওই নেতা (ধর্মের সওদাগর) সে তার চরকা ঘুরিয়ে লাভবান হবে। কিন্তু যে লোকগুলোকে ব্যবহার করছে, যাদের কথা বলে সে নেতা হওয়ার চেষ্টা করছে, যাদের কথা বলে বিভক্তি সৃষ্টি করছে, এ লোকগুলো কিন্তু কষ্টে পড়ে যায়। আর এ লোকদের রক্ষা করা বড় ধরনের কষ্ট হয়। আমরা সেদিকে যেতে পারবো না। ঐক্যবদ্ধ থেকে সমস্যার সমাধান করতে হবে।
রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা’র কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিএনপির যে ৩১ পয়েন্ট সংস্কারের অনুষ্ঠান, এতে কিছু বাকি নেই। ধর্মের সমাধান আছে, অর্থনৈতিক সমাধান আছে, রাজনৈতিক সমাধান আছে, সামাজিক সমাধান আছে, বিচারের সমাধান আছে। কেউ যদি সেই সমস্যার সমাধান এখন দিতে পারে ভালো। আমরা তো এসব সংস্কারের কথা বলছি। এগুলোর পরে যদি আরো কিছু বাকি থাকে সেগুলো আমরা করবো।
খসরু বলেন, বিভিন্ন ধর্ম, মত সবাই যদি এক জায়গায় আসতে পারি। তাহলে আজকে যে জাতি সংকটে পড়েছে এখান থেকে মুক্ত হয়ে আবার স্বাধীন বাংলাদেশে যে জন্য মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে স্বাধীনতাযুদ্ধ হয়েছে, আমরা সেটাকে সফলভাবে বাস্তবায়ন করবো। তবে কোনো ব্যক্তিকে আজীবন ক্ষমতায় রাখার জন্য না, কোনো এক দলকে আজীবন ক্ষমতায় রাখার জন্য না, কোনো এক গোষ্ঠীকে দেশ লুটপাট করার জন্য না। এছাড়া, যারা জাতির মধ্যে বিবেদ সৃষ্টি করে তার মূলধন আদায় করে তাদের জন্য না। যারাই জাতির জন্য সকলের জন্য কাজ করবে আমরা তাদের নিয়েই কাজ করবো।
অধ্যাপক ড. সুকোমল বড়ুয়া বলেন, বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক মহামতি গৌতম বুদ্ধ অহিংসা ও মানুষে মানুষে গভীর ভালোবাসার বাণী প্রচার করে গেছেন। গৌতম বুদ্ধ বলেছেন, হিংসা দিয়ে হিংসাকে জয় করা যায় না। আজকে সারাবিশ্বে সংঘাত ও সংঘর্ষে মানবজাতি ক্ষতবিক্ষত। এ শ্বাসরুদ্ধকর মুহূর্তে গৌতম বুদ্ধের উপদেশ মানুষকে অহিংসার পথে চালিত করবে। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ সবাইকে একই বন্ধনে আবদ্ধ করে।
জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, যারা জোর করে ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিল তারা জাতির মধ্যে বিভেদ ও সংঘাত তৈরি করেছিল। তারা শুধু হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সমপ্রদায়ের মধ্যেই না মুসলিম সমপ্রদায়ের মধ্যেও রাষ্ট্রীয় বাহিনী ব্যবহার করে বিভেদ সৃষ্টি করতো। তারা অবৈধভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য কূটকৌশল ব্যবহার করেছিল। কিন্তু এসব করে টিকতে পারে নাই। নিপুণ রায় চৌধুরী বলেন, বিএনপি বিশ্বাস করে সাম্য, সমপ্রীতি ও শান্তির বাংলাদেশ। সমান অধিকার ও নিরাপত্তা পাওয়া সকল ধর্মের মানুষের সাংবিধানিক অধিকার। ধর্ম যার যার, অধিকার সবার। শেখ হাসিনার পতনের পর যখন দুর্গাপূজা হয় তখন এক ধরনের আতংক সৃষ্টি করা হয়েছিল। তখন তারেক রহমানের নির্দেশে বিএনপি নেতাকর্মীরা হিন্দু সমপ্রদায়ের পাশে ছিল, নিরাপত্তা দিয়েছিল। বিগত যেকোনো বছরের চেয়ে দুর্গাপূজা শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়েছে। এখানে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান সবাই এক ও অভিন্ন।
এরশাদ উল্লাহ বলেন, বিএনপি সকল সমপ্রদায়ের সমপ্রীতিতে বিশ্বাস করে। এবার সারাদেশে বিএনপির নেতাকর্মীরা শারদীয় দুর্গোৎসব ও বৌদ্ধ সমপ্রদায়ের উৎসবে সাথে ছিলেন। আগামীতেও প্রত্যেক সমপ্রদায়ের প্রতিটি ধর্মীয় ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বিএনপি পাশে থাকবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান জ্ঞাতি ছিলেন শীলকূপ জ্ঞানোদয় বিহারের অধ্যক্ষ শিক্ষাবিদ রাহুলপ্রিয় মহাথেরো, প্রধান ধর্মদেশক ছিলেন ত্রিপিটক গবেষক ভদন্ত শাসনবংশ মহাথেরো, মুখ্য সন্ধর্মদেশক ছিলেন সংঘরাজ সারমেধ বৌদ্ধ বিহারের প্রতিষ্ঠাতা এইচ শীলজ্যোতি মহাথেরো, সদ্ধর্মদেশক ছিলেন জ্ঞানরত্ন বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ ভদন্ত সত্যজিত মহাথেরো, চট্টগ্রাম সাংঘিক বৌদ্ধ বিহারের ভদন্ত ড. সুমনপ্রিয় থেরো, ইপিজেড সার্বজনীন বৌদ্ধ বিহারের সভাপতি অধ্যাপক জ্ঞান রত্ন মহাথেরো, সাধারণ সম্পাদক ডা: সুমেধ কুমার বড়ুয়া, এস প্রিয়রত্ন থেরো। উপস্থিত ছিলেন মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আলহাজ্ব এম এ আজিজ, এস এম সাইফুল আলম, শাহ আলম, নিয়াজ মো. খান, আনোয়ার হোসেন লিপু, সরফরাজ কাদের রাসেল, রোকন উদ্দিন মাহমুদ, রাজিব ধর তমাল, বিপ্লব পার্থ, অধ্যাপক ঝন্টু কুমার বড়ুয়া, কমল জ্যোতি বড়ুয়া, জয়দত্ত বড়ুয়া, সুমন বড়ুয়া, রঞ্জিত বড়ুয়া, সজল বড়ুয়া।