রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের উপ–সহকারী প্রকৌশলী মো. শাহ আলম (৪৭) নানা কারণে আলোচিত একটি নাম। অনিয়ম–দুর্নীতি আর ক্ষমতার দাপটে নিজ কর্মক্ষেত্রে গড়ে তুলেছেন অপকর্মের সাম্রাজ্য। দুদকের একটি দুর্নীতি মামলার আসামিও তিনি। ই–টেন্ডারে ভুয়া বিলের মাধ্যমে টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গত ২৯ ডিসেম্বর রেলের এই প্রকৌশলী ও ঠিকাদারসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়–১ এর সহকারী পরিচালক মো. এনামুল হক। তার অপকর্ম এখানেই থেমে নেই। দুর্নীতির পাশাপাশি গত ১৩ জানুয়ারি তার প্রথম স্ত্রী ও সন্তানদের কাছে গোপন করে ঢাকায় দ্বিতীয় বিয়ে করে এবার ফেঁসে গেলেন তিনি।
গত ১২ জানুয়ারি লিওন সাহা নামে তার এক পরিচিতজনের মাধ্যমে দ্বিতীয় বিয়ে করেন বাগেরহাটের উম্মে সাইয়েদা (২৩) নামে এক মেয়েকে। বিয়ের ১১ দিনের মাথায় গত ২৩ জানুয়ারি উম্মে সাইয়েদা আত্মহত্যা করেন। ঢাকা থেকে উম্মে সাইয়েদার লাশ মো. শাহ আলম তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার বুড়িচং থানার শাহদৌলতপুরে না নিয়ে প্রথম স্ত্রী ও সন্তানদের কাছে বিষয়টি লুকানোর জন্য তার সহযোগী লিওন সাহার মাধ্যমে দাফনের জন্য গতকাল সোমবার গোপালগঞ্জ নিয়ে যান। সেখানে স্থানীয়রা লাশের পরিচয় জানতে চাইলে শাহ আলম ও তার সহযোগী লিওন সাহা পরিচয় না দিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে করে লাশ দ্রুত নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে স্থানীয়রা গোপালগঞ্জ সদর থানা পুলিশকে জানায়। পুলিশ এসে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায় এবং প্রকৌশলী শাহ আলম ও তার সহযোগী লিওন সাহাকে আটক করে।
এই ব্যাপারে গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুল ইসলাম আজাদীকে জানান, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের উপ সহকারী প্রকৌশলী মো. শাহ আলম চলতি মাসের ১২ তারিখ তার বন্ধু লিওন সাহার পরিচয়ের সূত্রে উম্মে সাইয়েদা নামে এক মেয়েকে বিয়ে করেন। বিয়ে করে তাকে ঢাকায় রেখে শাহ আলম চট্টগ্রামে চলে যান। গত ২৩ জানুয়ারি নাকি ঐ মেয়ে আত্মহত্যা করেন। প্রথমে ঢাকার একটি হাসপাতলে নেয়া হলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সেখান থেকে মেয়েটিকে অ্যাম্বুলেন্সে করে গোপালগঞ্জে তার বন্ধু লিওন সাহার এলাকায় কবর দেয়ার জন্য নিয়ে আসে। লিওন সাহার বাড়ি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পাটগাতি গ্রামে। সেখানে দাফন করতে আসলে এলাকার লোকজন ওই নারীর পরিচয় জানতে চাইলে প্রকৌশলী শাহ আলম ও তার সহযোগী লিওন সাহা পরিচয় দিতে রাজি না হয়ে দ্রুত মরদেহ নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। পরে স্থানীয়রা আমাদেরকে জানালে (সদর থানা) আমরা তাদের দুজনকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করি। এখন তারা দুজন আমাদের হেফাজতে আছে। আমরা লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছি।
ওসি মো. মনিরুল ইসলাম আরও জানান, মেয়েটির গ্রামের বাড়ি বাগেরহাট জেলার ফকিরহাটের বেতাগা ইউনিয়নে। দুই–আড়াই বছর আগে সে মা–বাবার সাথে ঝগড়া করে বাড়ি থেকে চলে আসে। ঢাকায় এসে লিওন সাহার সাথে পরিচয় হয়। লিওন সাহা আর এই মেয়েটি কথিত ভাই–বোন পরিচয়ে আরো কয়েকজন মিলে এক সাথে থাকতেন। শাহ আলম বিয়ে করার পর মেয়েটিকে সেখানেই রেখে এসেছেন।