দেশে ডিমের দাম ১৫ টাকা ছুঁয়ে ফেলার মধ্যে ভারত থেকে আনা ডিমে শুল্কসহ দাম পড়ল এর অর্ধেক। গতকাল রোববার দুপুরে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ২ লাখ ৩১ হাজার ৮৪০টি মুরগির ডিম আমদানি করা হয়। বেনাপোল কাস্টমসের চেকপোস্ট কার্গো শাখার রাজস্ব কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান এই তথ্য নিশ্চিত করে বলেছেন, পরীক্ষণ শেষ করে ডিমগুলো যত দ্রুত সম্ভব খালাস দেওয়া হবে। খবর বিডিনিউজের।
দেশে ডিমের দাম ক্রমাগত বেড়ে চলার মধ্যে সরকার ৫০ লাখ ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছে। চলতি বছর এটি আমদানি করা ডিমের দ্বিতীয় চালান। চলতি বছরের ৯ সেপ্টেম্বর দুই লাখ ৩১ হাজার ৮৪০টি ডিম আমদানি করা হয়। আওয়ামী লীগ সরকারে থাকার সময় গত বছরের শেষেও একবার ৬১ হাজার ডিমের একটি চালান আসে। সে সময় ১৫ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি ছিল। তবে দেশেই দাম কমে আসায় আর কোনো চালান আসেনি। এবার ডিম আসার পর বাজার নিম্নমুখী হলেও এবার এমনটি হয়নি, বরং গত এক মাসে ডিমের দাম উল্টো বেড়েছে।
বেনাপোলের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা বিনয় কৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, আমদানিকারকের কাগজপত্র পেয়েছি। এখানে ডিম পরীক্ষার যন্ত্রপাতি নেই। ভারতীয় সার্টিফিকেটের ওপর ভিত্তি করে ছাড়পত্র দেওয়া হবে। তাছাড়া দৃশ্যমান কোনো সমস্যা থাকলে সে বিষয়ে খতিয়ে দেখা হবে।
বেনাপোল কাস্টমস হাউসের উপ–কমিশনার ওথেলো চৌধুরী বলেন, ডিম আমদানির ওপর কাস্টমসের ৩৩ শতাংশ ভ্যাট–ট্যাক্স রয়েছে। সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পাদনের পর পরীক্ষণ করা হবে। এরপর খালাস দেওয়া হবে।
গত ৯ নভেম্বরের মত এবারও ডিম এনেছে ঢাকার ‘হাইড্রো ল্যান্ড সল্যুশন’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। তাদের পক্ষে চালানটি ছাড় করার জন্য বেনাপোল শুল্কভবনে কাগজপত্র দাখিল করে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট রাতুল এন্টারপ্রাইজ। ডিমগুলো কেনা হয়েছে ভারতের ‘শ্রী লক্ষ্মী নারায়ণ ভাণ্ডার’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান থেকে।
দেশে লাল ডিমের চাহিদা বেশি থাকলেও ভারত থেকে আনা হয়েছে সাদা ডিম। প্রতি ডজনের দাম পড়েছে দশমিক ৫৬ ডলার। সেই অনুযায়ী বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রতিটি ডিমের মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ৫ টাকা ৭০ পয়সা। প্রতি ডজন ডিমের নির্ধারিত মূল্যের ওপর ৩৩ শতাংশ কাস্টমস ডিউটি বাবদ এক টাকা ৮৩ পয়সা যোগ হবে। সব মিলিয়ে প্রতিটি ডিমের আমদানি মূল্য দাঁড়াচ্ছে প্রায় সাড়ে ৭ টাকার মত। এর সঙ্গে গুদাম ভাড়া, এলসি খরচ, ট্রাক ভাড়া যোগ হবে। সব মিলিয়ে প্রতিটি ডিমের খরচ সাড়ে ৮ টাকার কম হবে না বলে মনে করছেন আমদানি সংশ্লিষ্টরা।
গত ৯ সেপ্টেম্বরও একই দরে ডিম এসেছিল দেশে। সেই ডিম পাইকারিতে ১০ টাকা ৪০ পয়সা দরে বিক্রি হয়েছিল বলে জানিয়েছিলেন আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ‘হাইড্রো ল্যান্ড সল্যুশন’ এর স্বত্বাধিকারী আব্দুল লতিফ। গত ১৩ সেপ্টেম্বর তিনি বলেছিলেন, সব খরচ মিলে আমাদের লাভ খুব একটা থাকে না। একই প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তা মিল্টন রায় বলেন, খালি দাম আর ট্যাক্সের হিসাব করলে তো হবে না। ২ লাখ ডিমে নষ্ট হয় ১৬ থেকে ১৭ হাজার, খরচ যায় ১ টাকা। এরপর অন্যান্য মিলিয়ে ১০ টাকার বেশি হয়ে যায়।
২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে ডিমের দাম লাফ দেওয়ার পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রতিটি ডিমের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১২ টাকা বেঁধে দিয়েও দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেনি। পরে ১৫টি প্রতিষ্ঠানকে ১৫ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়। সে সময় প্রতিটি ডিমের আমদানি খরচ পড়ে ৭ টাকার কিছু বেশি, যা দেশের বাজারদরের চেয়ে অনেকটাই কম ছিল। তবে যে পরিমাণ ডিম আমদানির অনুমতি ছিল, সে পরিমাণ ডিম দেশে আসেনি। পোলট্রি খাত সংশ্লিষ্টদের হিসাব বলছে, দেশে দৈনিক ডিমের চাহিদা চার কোটির মতো।