চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে আওয়ামী লীগ বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ এমপি বলেছেন, আমরা জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। বিদ্রোহী প্রার্থীদের ব্যাপারে দলের অবস্থান অত্যন্ত কঠোর। এই নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে যারা প্রার্থী হিসেবে থাকবেন বা দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে কাজ করবেন তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে যারা নির্বাচন করবেন তাদের ভবিষ্যতে আর কখনও নৌকা প্রতীক এবং দলীয় সমর্থন পাবার প্রশ্ন থাকবে না।
গতকাল শনিবার দুপুরে বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলা চট্টগ্রাম মহানগর শাখার এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হৃদয়ে ধারণ করে স্বাধীনতা বিরোধীদের সকল অপতৎপরতা রুখে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে হানিফ বলেন, ভাস্কর্যের সাথে ধর্মের কোনো সাংঘর্ষিক অবস্থান নেই। ইসলামে ভাস্কর্য ভাঙার কথা কোথাও নেই। আমাদের দেশে তথাকথিত ধর্ম ব্যবসায়ী মৌলবাদীরা মানুষের মধ্যে ভুল ব্যাখা দিয়ে ফায়দা লুটতে চায়। এসবে সতর্ক থাকতে হবে। আমি আশা করি, আমাদের ভবিষৎ প্রজন্ম এ ব্যাপারে সতর্ক থাকবে।
তিনি বলেন, তথাকথিত ধর্ম ব্যবসায়ীরা ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা করছেন। তারা বলছেন আলেমদের সম্মান দিয়ে কথা বলতে। কিন্তু যারা ধর্মের অপব্যাখ্যা করেন তাদের কে সম্মান দিয়ে কথা বলবে? দেশের সাবেক ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে পার্থক্য করলে দেখবেন মানুষ শিক্ষা থাকলে কী করতে পারে এবং শিক্ষার অভাবে কী করে। শিক্ষা না থাকায় বেগম জিয়া রাষ্ট্রকে কোথায় নিয়ে গেছেন। আজকে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে যে ইন্টারনেট সংযোগ প্রায়োজন ছিল তা একসময় আমাদের ফ্রিতে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দেশের নিরাপত্তার অজুহাতে তা নেননি। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ১৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে তা কিনে নেয়।
তিনি বলেন, আমাদের প্রিয় নবী (সা.) যখন প্রিয় জন্মভূমিতে আসলেন তখন কাবা শরীফে তিনশ ষাটটি মূর্তি ছিল। নবী (সা.) কাবা শরীফে প্রবেশ করে নামাজ আদায় করতে চেয়েছিলেন। নামাজের সামনে মূর্তি থাকায় নামাজটা সহীহ হবে না, সেজন্য সাহাবিদের বলেছিলেন মূর্তিগুলো সরাতে। পাথরের মূর্তিগুলো এমনিতে সরানো সম্ভব ছিল না বলে ভেঙে সরাতে হয়েছে। এই একটি ঘটনা ছাড়া ভাস্কর্য বা মূর্তি ভাঙার আর কোনো ঘটনা নেই। সৌদি আরবসহ পৃথিবীর সকল মুসলিম রাষ্ট্রে ভাস্কর্য আছে। ইসলামী রাষ্ট্র ইরানেও ভাস্কর্য আছে। এমনকি পাকিস্তানে কায়েদে আজম মুহাম্মদ আলী জিন্নার ভাস্কর্য আছে, বেনজির ভুট্টোর ভাস্কর্য আছে।
শ্রদ্ধা অর্জন করতে হয়, শ্রদ্ধা চাপিয়ে দেওয়া যায় না উল্লেখ করে হানিফ বলেন, কিছুদিন আগে দেখলাম একজন বলল আলেমদের সম্মান করে কথা বলতে। আলেমদের তো সম্মান করেই কথা বলতে হয়, আর আমরা তো সেটাই করি। তবে যারা ধর্মের কথা বলে অধর্মের কাজ করে তাদেরকে কেউ সম্মান করে না।
মাহবুব উল আলম হানিফ এমপি বলেন, আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলন হয়েছিল জাতীয় চার মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে। বাঙালি জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতা। সেই চার বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে আমাদের সংবিধান রচিত হয়েছে। এই চার ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে থাকা সংবিধান কিন্তু রক্তে রঞ্জিত সংবিধান। অতএব বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ এবং সংবিধান এগুলোকে অসম্মান করার কোনো সুযোগ নেই। এই তিনটা ব্যাপারে কোনো আপস হতে পারে না, বাঙালি জাতি করতে পারে না। শিক্ষার্থীরা এই তিনটা বিষয়ে কম্প্রোমাইজ করবে না আমার বিশ্বাস।
নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে বিএনপির প্রার্থী অসন্তোষ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই নির্বাচনে অংশ নেয়। ইভিএম নিয়ে ইতোপূর্বে বহু কথা হয়েছে। তদের অনেক শীর্ষ নেতাও বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলেছেন। অতীতে ইভিএম দিয়ে সুষ্ঠু ভোটগ্রহণ হয়েছে। সুতরাং ইভিএম নিয়ে আর কোনো বিতর্কের সুযোগ নেই।
মা শিক্ষিত না হলে সন্তানদের কেমন অধঃপতন হয় তার উদাহরণ টেনে হানিফ বলেন, খালেদা জিয়ার সন্তান তারেক রহমান হাওয়া ভবন তৈরি করেছিলেন। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুই সন্তান নিজ যোগ্যতায় উদ্ভাসিত। কোনো রকমে স্কুলের গণ্ডি পার হয়ে সবাই চায় ভালো কলেজে ভর্তি হতে। আর তারেক রহমান ভর্তি হতে গিয়েছিলেন মানিকগঞ্জের সাটুরিয়াতে এক কলেজে। তার ওই শিক্ষা দিয়ে পাঁচ বছরে হাওয়া ভবন বানিয়ে দেশে যে অবস্থা করেছিলেন, দেশবাসীকে এখনও তার মাশুল দিতে হচ্ছে।
কৃতী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, তোমরা যারা শিক্ষার্থী তোমরাই আগামীর ভবিষৎ, তোমরাই আগামী দিনের কাণ্ডারী। সে কারণে আমার একটি ছোট্ট পরামর্শ, লেখাপড়া করে মানুষের মতো মানুষ হতে হবে। কিন্তু তার চেয়ে বেশি প্রয়োজন আদর্শবান মানুষ হওয়া।
অনুষ্ঠানে চসিক মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, সততা, কর্তব্যনিষ্ঠ, নিয়মানুবর্তিতাকে সঙ্গী করলে তোমাদের সফলতা কেউ আটকাতে পারবে না।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বঙ্গবন্ধুর শিশু কিশোর মেলা চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি সাজ্জাত হোসেন। সংগঠনের সহসভাপতি জাওইদ চৌধুরী ও এম শাহাদাৎ নবী খোকার সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান চৌধুরী, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মঈনুদ্দীন হাসান চৌধুরী, যুবলীগের কেন্দ্রীয় সদস্য ব্যারিস্টার তৌফিকুর রাহমান, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য মাহমুদ সালাউদ্দীন চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীমা হারুণ লুবনা, কেন্দ্রীয় যুবলীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মীর মো. মহিউদ্দীন, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক সদস্য দেবাশীষ পাল দেবু ও নগর যুবলীগ নেতা হেলাল উদ্দীন।
বক্তব্য রাখেন কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মহসীন, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শিবু প্রসাদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুল করিম, মহসিন কলেজ ছাত্রলীগ নেতা আনোয়ার পলাশ।
যাদুকর রাজীব বসাকের নান্দনিক যাদু দেখানোর পর কৃতী শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে স্বাগত বক্তব্য রাখে শারমীন সুলতানা শিফা ও সুবর্ণা ভট্টাচার্য। এছাড়া ছিল নৃত্য নিকেতনের শিল্পীদের মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা।।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গোলাম ফারুক ডলার, আইয়ুব বাবুল, নাছির উদ্দীন, গাজী জাফর উল্লাহ, সেলিম খান, ইকবাল হোসেন, শাহেদ হায়দার খান, জাফর আল তানিয়ার, আনিফুর রহমান লিটু, সৈয়দ মোর্শেদ উল্লাহ, সুরজিত দত্ত সৈকত, নোমান বিন খুরশীদ, সাজ্জাদ বিন ছফা, নাবিল হাসান, তারেক তালুকদার, তানভীর চৌধুরী, আরিফ আহমেদ, জয় ঘোষ ও ওমান শিকদার।