সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের বোর্ড সদস্য ড. ফাহমিদা খাতুন বলেছেন, ঢালাওভাবে ব্যবসায়ীদের ব্যাংক হিসাব জব্দ রাখা ঠিক নয়। কোনো বড় ধরনের বিচ্যুতি না থাকলে, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না থাকলে জব্দকৃত হিসাবগুলো খুলে দেওয়া যায়। তা না হলে সার্বিক ব্যবসা—বাণিজ্য, দারিদ্র্য ও কর্মসংস্থানের ওপর বিরাট প্রভাব পড়বে।
শনিবার এফডিসিতে ব্যাংকিং খাতের শৃঙ্খলায় ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে ছায়া সংসদে তিনি এসব কথা বলেন।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, গত এক বছরে অর্থনীতির কিছু সূচকের পতন ঠেকানো গেলেও সংকট কাটেনি, দারিদ্র্য কমছে না। ব্যাংকিং খাতে বিগত সরকারের সময় সুশাসন ছিল না। প্রতিটি সূচকেই খুব খারাপ অবস্থা ছিল। অর্থনীতির আকারের চেয়ে রাজনৈতিক বিবেচনায় অনেক বেশি ব্যাংক অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল, যা পৃথিবীর কোথাও নেই। বিগত সময়ে নিজেদের সম্পদকে বাড়ানোর হাতিয়ার হিসেবে ব্যাংকগুলোকে ব্যবহার করা হয়েছিল। অন্তর্বতী সরকার দুর্বল ব্যাংকসমূহকে একীভূত করার যে চেষ্টা চালাচ্ছে তার প্রক্রিয়াটি বেশ জটিল এবং ঝুঁকিপূর্ণ। এ বিষয়ে মানুষের মধ্যে ধোঁয়াশা রয়েছে।
তিনি বলেন, অর্থনীতি ও রাজনীতি পাশাপাশি চলে, একে অপরের পরিপূরক। দুর্বল শাসন ব্যবস্থার মাধ্যমে অর্থনীতি চলতে পারে না। সঠিক রাজনীতি ছাড়া সঠিক অর্থনীতি হয় না। স্বল্পমেয়াদী সরকার দীর্ঘায়িত হওয়া অর্থনীতির জন্য মঙ্গলজনক নয়। এতে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাধাগ্রস্ত হয়। তাই আর্থিকখাতের শৃঙ্খলার জন্য দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক সরকার দরকার।
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু কিছু কর্মকর্তা ক্ষমতার অপব্যবহার করে আর্থিকখাতের মাফিয়াদের অনৈতিক সুবিধা দিয়েছিল। তখন দেশে ছিল মাফিয়া ইকোনমির শাসন। চোখের সামনে ইসলামী ব্যাংকসহ বেশ কয়েকটি ভালো ব্যাংক লুণ্ঠিত হয়েছে। আর্থিকখাতের মাফিয়ারা এসব ব্যাংকের আমানতকারীদের টাকা কেবল আত্মসাতই করেনি, বিদেশেও পাচার করেছে। এর ফলে ব্যাংক গ্রাহকরা উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও আতঙ্কে রয়েছে। কখন তারা তাদের আমানতের টাকা ফেরত পাবেন তা এখনো অনিশ্চিত। অনেক আমানতকারী ব্যাংকে গচ্ছিত টাকা চিকিৎসার খরচ মেটানোর জন্যও তুলতে পারছে না। এর মধ্যে অনেকে আবার মৃত্যুবরণও করেছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী সরকারের আমলে রাজনৈতিক বিবেচনায় দেওয়া ব্যাংকগুলোর মালিকরা কেবল অর্থ আত্মসাতই করেনি, ব্যাংকের স্থাবর—অস্থাবরসহ সবকিছু লুট করে নিয়ে গেছে। বর্তমানে যে ৬ থেকে ৭ লাখ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ রয়েছে তা আদায় করা যাচ্ছে না। আর্থিকখাতের মাফিয়ারা যেসব সম্পত্তি মর্টগেজ রেখে ঋণ নিয়েছিল সম্পত্তিগুলো ঝামেলাপূর্ণ ও নিষ্কণ্টক না হওয়ায় নিলামে তুলে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। আবার অনেক সময় এসব সম্পত্তি প্রভাবশালীদের হওয়ায় কেউ কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না।
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে ‘ব্যাংক একীভূতকরণ ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনবে’ শীর্ষক ছায়া সংসদে বক্তারা বলেন, যে সব ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানের দেশের অভ্যন্তরে দৃশ্যমান বিনিয়োগ আছে কিংবা যাদের ঋন পরিশোধের সক্ষমতা আছে – তাদের সম্পদ জব্দ করা কিংবা ব্যাংক একাউন্ট জব্দ করে হয়রানি সবল এসব প্রতিষ্ঠানকে অর্থনৈতিকভাবে দূর্বল করবে। তারা ঋণ পরিশোধে অক্ষম হয়ে পড়বে। ঢালাওভাবে তদন্ত ছাড়াই কোন শিল্প গ্রুপের বিরুদ্ধে অনুমান নির্ভর হস্তক্ষেপ অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। ‘
আয়োজনে সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকদের পরাজিত করে ঢাকার সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক ড. তাজুল ইসলাম চৌধুরী তুহিন, সিনিয়র সাংবাদিক মাঈনুল আলম, প্রফেশনাল অ্যাকাউন্টেন্ট আবুল বশির খান, সাংবাদিক মো. আলমগীর হোসেন ও সাংবাদিক রেফায়েত উল্লাহ মীরধা।