ঢাকাকে ছাড়ালো রাজশাহী

করোনা শনাক্তের সংখ্যা

আজাদী অনলাইন | মঙ্গলবার , ৮ জুন, ২০২১ at ৮:২৭ অপরাহ্ণ

করোনাভাইরাসের ডেল্টা ধরনের বিস্তারে সংক্রমণের নতুন ‘হটস্পট’ হয়ে ওঠা রাজশাহী বিভাগ দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যায় ঢাকাকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে গত দুদিন ধরে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, আজ মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহীতে ৬৭৩ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে, যা দেশের আট বিভাগের মধ্যে সর্বোচ্চ। বিডিনিউজ
এই সময়ে ঢাকা ও খুলনায় ৫৪৪ জন করে নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রামে ২৯১ জন, রংপুরে ১১৪ জন, বরিশালে ৩৯ জন, সিলেটে ৬৯ জন এবং ময়মনসিংহে ৪৮ জন মিলিয়ে সারা দেশে মোট ২ হাজার ৩২২ জন নতুন রোগী শনাক্তের তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
রাজশাহীতে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেশি হলেও নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হারে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা খুলনা বিভাগের।
গত এক দিনে ঢাকায় যেখানে শনাক্তের হার ৬ শতাংশের মত, চট্টগ্রামে তা ১১ শতাংশ, রাজশাহীতে ১৬ শতাংশ, রংপুরে ২৬ শতাংশ, খুলনায় খুলনায় ৩৭ শতাংশ।
রাজশাহীতে শনাক্ত রোগী বাড়ার এই প্রবণতা স্পষ্ট হয় সোমবার। সেদিন ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহীতে ৬০৭ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছিল, ঢাকায় সংক্রমণ ধরা পড়েছিল ৫৪৫ জনের মধ্যে, খুলনায় ৪২৭ জন নতুন রোগীর সন্ধান মিলেছিল।
এছাড়া চট্টগ্রামে ২৪৪ জন, রংপুরে ৯৪ জন, বরিশালে ৪১ জন, সিলেটে ৫৪ জন এবং ময়মনসিংহে ৪৯ জন মিলিয়ে সারা দেশে মোট ১ হাজার ৯৭০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছিল।
গত বছর মার্চে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ দেখা দেওয়ার পর সংক্রমণের প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ে ঢাকার পরিস্থিতিই সবচেয়ে খারাপ ছিল।
এখনও মোট শনাক্ত রোগীর দিক দিয়ে ঢাকা দেশের আট বিভাগের মধ্যে সবেচেয়ে এগিয়ে আছে। ঢাকায় এ পর্যন্ত ৯ হাজার ৪ জন আক্রান্ত হওয়ার তথ্য এসেছে সরকারের খাতায়, এর পরেই রাজশাহীতে শনাক্ত হয়েছে ৪ হাজার ১৩৭ জন।
গত এক দিনে রাজশাহীতে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর ঘটনাও বেড়েছে। ঢাকার মতই ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে সেখানে। সারা দেশে মারা যাওয়া ৪৪ জনের অর্ধেকই এই দুই বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন।
দেশে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছিল মার্চের শেষে। এরপর দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা হু হু করে বাড়তে থাকে, সেই সঙ্গে বাড়তে থাকে মৃত্যু।
গত ৭ এপ্রিল দেশে রেকর্ড ৭ হাজার ৬২৬ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়। এর ১৯ এপ্রিল এক দিনেই রেকর্ড ১১২ জনের মৃত্যুর খবর আসে।
করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সরকার এপ্রিলে কঠোর বিধিনিষেধ জারি করার পর মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে দৈনিক শনাক্ত রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা কমে এসেছিল। কিন্তু মে মাসের শুরুতেই ভারত থেকে আসা তিন বাংলাদেশির দেহে করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ডেল্টা শনাক্ত করা হয়, এরপর রাজশাহী ও খুলনার ভারত সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে নতুন করে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে।
গত দেড় বছর ধরে বিশ্বজুড়ে ত্রাসের রাজস্ব চালিয়ে যাওয়া করোনাভাইরাস রূপ বদলাচ্ছে ক্রমাগত। ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশে এর বেশ কয়েকটি ‘মিউট্যান্ট’ বা পরিবর্তিত ধরন পাওয়া গেছে, যেগুলো অনেক বেশি সংক্রামক।
এর মধ্যে ভারতে গত বছরের শেষ দিকে একটি নতুন ধরন শনাক্ত হয়, যাকে এ বছর দেশটিতে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে রেকর্ড সংক্রমণ ও মৃত্যুর জন্য দায়ী করা হচ্ছে। আলোচনার সুবিধার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একে বলছে ‘ডেলটা’।
ইতোমধ্যে রাজধানী ঢাকাতেও করোনাভাইরাসের অতি সংক্রামক ওই ধরনটি পাওয়া গেছে। আক্রান্তদের ইতিহাস পর্যালোচনা করে আইইডিসিআর বলেছে, ইতোমধ্যে দেশে করোনাভাইরাসের ‘ডেলটা’ ধরনটির সামাজিক বিস্তার বা কমিউনিটি ট্রান্সমিশন ঘটেছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে কঠোর ‘লকডাউন’ জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন। চলাফেরায় ওপর দেওয়া হয়েছে কড়াকড়ি। কিন্তু পরিস্থিতির উন্নতির কোনো খবর এখনও আসেনি।
গতকাল সোমবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের দুটি পিসিআর ল্যাবে জেলার ৩৮৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করে শনাক্তের হার পাওয়া যায় ৪৫ দশমিক ৭ শতাংশ। যা এর আগের দিন রোববার ছিল ৪১ দশমিক ৩০ শতাংশ, শনিবার ছিল ৫০ দশমিক ২৭ শতাংশ এবং গত শুক্রবার ছিল ৪৯ দশমিক ৪৩ শতাংশ।
করোনাভাইরাস মহামারীতে দেশে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে ৮ লাখ ১৫ হাজার ২৮২ জন হয়েছে। আর মৃতের মোট সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১২ হাজার ৯১৩ জন।
বিশ্বে শনাক্ত কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা ইতোমধ্যে ১৭ কোটি ৩৬ লাখ ছাড়িয়েছে। মৃত্যু হয়েছে সাড়ে ৩৭ লাখ ৩৮ হাজারের বেশি মানুষের।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহাটহাজারীতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মোটরসাইকেলে বাসের ধাক্কায় স্বামী-স্ত্রী সহ আহত ৩
পরবর্তী নিবন্ধআচমকা চড় খেলেন ম্যাক্রোঁ