বাংলাদেশের অর্থনীতি বর্তমানে বড়সড় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সংকটে পড়েছে। গত ২০২১–২২ অর্থ–বছরে দেশের বাণিজ্য–ঘাটতি ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল, যার জন্য প্রধানত দায়ী ছিল আমদানি ব্যয়ের উল্লম্ফন। এখন প্রমাণিত হয়েছে যে এই উল্লম্ফনের পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছিল আমদানি এল/সি এর ওভারইনভয়েসিং। রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্বে যে মূল্যস্ফীতির তান্ডব শুরু হয়েছে সেটাও আমদানি ব্যয়–বৃদ্ধির বড় কারণ ছিল। ২০২০–২১ অর্থ–বছরের তুলনায় ২০২১–২২ অর্থ–বছরে বাংলাদেশের আমদানি ব্যয় ৩৫ শতাংশ বেড়ে যাওয়ায় বাণিজ্য–ঘাটতি বেড়ে ৩৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে গিয়েছিল। একইসাথে হুন্ডি ব্যবসা চাঙা হওয়ার ফলশ্রুতিতে ফর্মাল চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ ২০২০–২১ অর্থ–বছরের ২৪.৭৪ বিলিয়ন ডলার থেকে ১৫ শতাংশ কমে ২১.০৩ বিলিয়ন ডলারে নেমে গিয়েছিল। অতএব ঐ ৩৩ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি রেমিট্যান্স দিয়ে মেটানো যায়নি, যার ফলে ব্যালেন্স অব পেমেন্টসের চলতি হিসাব বা কারেন্ট একাউন্টেও ইতিহাসের সর্বোচ্চ ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছিল।
এসবের মিলিত যোগফল হলো বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের বিরাট পতনের ধারা। ২০২৩ সালের ৫ জানুয়ারি তারিখে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের পাওনা পরিশোধের পর দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০২১ সালের আগস্টের ৪৮.০৬ বিলিয়ন ডলার থেকে কমে সরকারের হিসাব মোতাবেক ৩২.৫২ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। আইএমএফ এর নির্দেশনা মানলে রিজার্ভ ২৪.৫২ বিলিয়ন ডলার। যে হিসাবই ব্যবহার করা হোক, এক বছর চার মাসে রিজার্ভের এহেন পতনের ধারা অত্যন্ত বিপজ্জনক। কিন্তু আজকের কলামে আমি দেখাতে চাই, শুধু আমদানি ব্যয়ের উল্লম্ফন ব্যালেন্স অব পেমেন্টসের বর্তমান সংকটের জন্য দায়ী নয়। একইসাথে, ব্যালেন্স অব পেমেন্টসে অত্যন্ত বিপজ্জনক চাপ সৃষ্টি করে চলেছে প্রাইভেট সেক্টরে বাণিজ্য–ঋণের (ট্রেড ক্রেডিট) উল্লম্ফন এবং বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ ও পোর্টফোলিও বিনিয়োগের পতন।
প্রাইভেট সেক্টরের ব্যবসায়ীরা এসব বৈদেশিক ঋণ পেতে হলে সরকারকে গ্যারান্টর হতে হয়। মানে, যদি প্রাইভেট সেক্টরের ঋণগ্রহীতা ঐ ঋণ পরিশোধে অপারগ হয় তাহলে সরকারকে খেলাপিঋণ পরিশোধের দায় নিতে হয়। বর্তমান অর্থমন্ত্রী ২০১৯ সালে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণের পর সরকার অত্যন্ত উদারভাবে এহেন প্রাইভেট সেক্টরের ট্রেড–ক্রেডিটের গ্যারান্টর হওয়ার ঐতিহ্য সৃষ্টি করেছে, যার ধারাবাহিকতায় প্রাইভেট সেক্টরের বাণিজ্য–ঋণ ইতোমধ্যেই ২৫.৪০ বিলিয়ন ডলারের ঐতিহাসিক উচ্চতায় পৌঁছে গেছে। এই ব্যাপারটা এখন দেশের ব্যালেন্স অব পেমেন্টসের পতনের ধারাকে থামাবার পথে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যাখ্যাটা বোঝার চেষ্টা করা যাক্।
জাতীয় ইংরেজী দৈনিক দি ডেইলি স্টারের ৮ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখের বিজনেস শাখার প্রথম পৃষ্ঠার হেডলাইন হয়েছে,‘ব্যালেন্স অব পেমেন্টস্ আন্ডার স্ট্রেস’—মানে, ‘দেশের লেনদেন ভারসাম্য চাপের মুখে’। ২০২২ সালের জুলাই থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত পাঁচ মাসে ব্যালেন্স অব পেমেন্টসের ‘ওভার–অল ঘাটতি’ এর আগের বছরের ঐ পাঁচ মাসের ঘাটতি ২.০২৩ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ৬.৩৮৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে গেছে, যা খুবই উদ্বেগজনক। আরো বিস্ময়কর হলো, প্রকাশিত ঐ খবর অনুযায়ী ব্যালেন্স অব পেমেন্টসের ফাইনেন্সিয়াল একাউন্ট বহু বছর পর এই পাঁচ মাসে নেতিবাচক প্রবাহ দেখাচ্ছে। ফাইনেন্সিয়াল একাউন্ট ব্যালেন্স অব পেমেন্টসের এমন একটি কমপোনেন্ট যার মধ্যে প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ এবং পোর্টফোলিও বিনিয়োগ অন্তর্ভুক্ত হয়।
গত ২০২১–২২ অর্থ–বছরের জুলাই–নভেম্বর পর্যায়ে ফাইনেন্সিয়াল একাউন্টে ৪.৮৩৮ বিলিয়ন ডলার উদ্বৃত্ত ছিল, কিন্তু ২০২২–২৩ অর্থ–বছরের জুলাই–নভেম্বর সময়ে ওখানেই ১৫৭ মিলিয়ন ডলার ঘাটতি সৃষ্টি হয়ে গেছে। দেশের খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ আহসান মনসুর দাবি করেছেন, গত কুড়ি বছরে তিনি কখনোই ফাইনেন্সিয়াল একাউন্টে ঘাটতি হতে দেখেননি—এবারই প্রথম দেখলেন। বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক লীড ইকনমিস্ট জাহিদ হোসেনও তাঁর কথায় সায় দিয়েছেন। জাহিদ হোসেনের মতে এই ঘাটতি সুস্পষ্ট ইংগিত দিচ্ছে যে আগামী মাসগুলোতেও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকট অব্যাহত থাকবে।
তার মানে, বাংলাদেশের অর্থনীতি একটা বড় ধরনের রিজার্ভ–সংকটে পতিত হয়েছে যেখান থেকে মুক্তি এখনো দৃশ্যমান নয়। ইতোমধ্যেই বলেছি, ২০২১–২২ অর্থ–বছরে ব্যালেন্স অব পেমেন্টসের চলতি হিসাব বা কারেন্ট একাউন্টে অভূতপূর্ব ঘাটতির জন্য প্রধানত আমদানি ব্যয়ের উল্লম্ফনকে দায়ী করা হচ্ছিল। কিন্তু ২০২২–২৩ অর্থ–বছরের জুলাই–নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসে বাংলাদেশের ব্যালেন্স অব পেমেন্টসের কারেন্ট একাউন্টের ঘাটতি ৮.৮৮ শতাংশ কমে ৫.৬৭ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যার প্রধান কারণ বাংলাদেশ ব্যাংকের আমদানি নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব মোতাবেক ২০২২ সালের জুলাই–নভেম্বর পর্যায়ে দেশের আমদানি ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ বিলিয়ন ডলারে, রফতানি আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০.৭৪ বিলিয়ন ডলারে, আর রেমিট্যান্স প্রবাহ দাঁড়িয়েছে ৮.৭৯ বিলিয়ন ডলার।
কিন্তু, একেবারেই অন্য কারণে ব্যালেন্স অব পেমেন্টসের ‘ওভার–অল ঘাটতি’ ঐ পাঁচ মাসে তিনগুণ বেড়ে ৬.৩৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে গেছে, যার জন্য প্রধানত দায়ী প্রাইভেট সেক্টরে বাণিজ্য–ঋণের (ট্রেড ক্রেডিট) উল্লম্ফন এবং বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ ও পোর্টফোলিও বিনিয়োগের পতন। ট্রেড–ক্রেডিটের ঘাটতি এই পাঁচ মাসে চারগুণ বেড়ে ২.২৬ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে গেছে। দেখা যাচ্ছে, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত প্রাইভেট সেক্টরের বৈদেশিক ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫.৪০ বিলিয়ন ডলারে, যার মধ্যে ১১.৮৯ বিলিয়ন ডলার হলো স্বল্প–মেয়াদী ট্রেড–ক্রেডিট। জাহিদ হোসেনের মতে দুটো বিষয় ট্রেড ক্রেডিটকে বাড়িয়ে দিচ্ছে: প্রথমত রফতানির শিপমেন্ট হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও হয়তো রফতানি আয় এসে পৌঁছায়নি, আর দ্বিতীয়ত হয়তো ‘স্বল্পমেয়াদী বায়ার্স ক্রেডিট’ পরিশোধ করা হয়েছে অথচ নূতন ঋণ না আসায় অর্থের বহির্গমন বেড়ে যাচ্ছে। আহসান মনসুর বলছেন, ব্যালেন্স অব পেমেন্টসের ওপর চাপ বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা হয়তো সন্ত্রস্ত হয়ে এদেশ থেকে বিনিয়োগের অর্থ ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। এটা নিশ্চিতভাবে ইংগিত দিচ্ছে যে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর আস্থা রাখতে পারছেন না। এটা খুবই উল্লেখযোগ্য যে সরকারকে প্রদত্ত ঋণের অর্থ–ছাড়ও ইদানীং কমে গেছে। সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ জানাচ্ছে, ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ঋণের অর্থ–ছাড় গত ২০২১ সালের নভেম্বরের ৩.০১ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় ২০ শতাংশ কমে ২.৩৬ বিলিয়ন ডলারে নেমে গেছে।
ওপরের অনুচ্ছেদে প্রাইভেট সেক্টরের বৈদেশিক ঋণের অভূতপূর্ব যে ২৫.৪০ বিলিয়ন ডলারের স্ফীতি উল্লিখিত হলো তার দায় নিঃসন্দেহে বর্তমান অর্থমন্ত্রীর ওপরেই বর্তাবে। বিশেষত ১১.৮৯ বিলিয়ন ডলারের স্বল্প–মেয়াদী ট্রেড–ক্রেডিট পুঞ্জীভূত হওয়ার যে কাহিনী উদঘাটিত হলো তার জন্য অর্থমন্ত্রীর অস্বাভাবিক রকমের ব্যবসায়ী–প্রীতিকেই দায়ী করতে হবে। এসব ঋণ আদায়ে তাঁর অদক্ষতা ও অব্যবস্থাপনাকেও দোষারোপ করতে হবে। ব্যাংকিং সিস্টেমের খেলাপিঋণের দ্রুত উল্লম্ফনের জন্যও অর্থমন্ত্রীর ভুল নীতিগুলোই দায়ী। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি, দেশের ব্যাংকগুলোর খেলাপিঋণের পরিমাণ ইতোমধ্যেই চার লক্ষ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। অথচ, বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্লাসিফাইড লোনের সর্বশেষ হিসাব বলছে মাত্র এক লাখ চৌত্রিশ হাজার কোটি টাকা নাকি ক্লাসিফাইড লোন। এই ভুয়া তথ্য দিয়ে অর্থমন্ত্রী খেলাপিঋণ সমস্যাকে কার্পেটের তলায় লুকিয়ে ফেলার সুব্যবস্থা করলেও তাঁর মন্ত্রিত্বের চার বছর মেয়াদে তিনি কত কোটি টাকা খেলাপিঋণ আদায় করতে পেরেছেন সে হিসাবটা প্রকাশ করার জন্য তাঁকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছি। অর্থমন্ত্রীর প্রবর্তিত নিয়ম মোতাবেক মাত্র ২ শতাংশ খেলাপিঋণ জমা দিয়ে ১০ বছরের জন্য যদি রাঘববোয়াল ঋণখেলাপিরা খেলাপির তালিকা থেকে নিজেদের নাম উধাও করে দিতে পারেন তাহলে কোন্ আহাম্মক খেলাপিঋণ ফেরত দিতে যাবে?
আমার দৃঢ় বিশ্বাস, বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতি যে বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে তার জন্য প্রধানত অর্থমন্ত্রীর অদক্ষতা ও গাফেলতিই দায়ী। দেশ থেকে বিদেশে পুঁজিপাচার এখন অর্থনীতির সবচেয়ে বড় সংকট। ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে সরকারের ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি) এর বরাত দিয়ে দেশের পত্র–পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে যে শুধু হুন্ডি প্রক্রিয়ায় দেশ থেকে বর্তমানে বছরে ৭৫ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। এর সাথে আমদানির ওভারইনভয়েসিং, রফতানির আন্ডারইনভয়েসিং এবং রফতানি আয় দেশে ফেরত না আনার মত মূল সমস্যাগুলো যোগ করলে দেখা যাবে প্রত্যেক বছর এখন কমপক্ষে দেড় লাখ কোটি টাকার সম–পরিমাণের বৈদেশিক মুদ্রা থেকে বাংলাদেশ বঞ্চিত হচ্ছে। এর মানে, বাংলাদেশ থেকে বছরে কমপক্ষে ১৫/১৬ বিলিয়ন ডলার পুঁজি এখন বিদেশে পাচার হয়ে চলেছে (অথবা বিদেশে হুন্ডিওয়ালাদের কাছে বিক্রিত ডলার ও অন্যান্য বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আসছে না, কিন্তু তার সমপরিমাণ টাকা হুন্ডিওয়ালাদেরকে প্রদানের মাধ্যমে দেশ থেকে বিদেশে হুন্ডি প্রক্রিয়ায় অর্থ পাচার হয়ে যাচ্ছে), যার অর্ধেকের মত পাচার হচ্ছে হুন্ডি প্রক্রিয়ার বেলাগাম বিস্তারের মাধ্যমে। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি, বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন যে টালমাটাল অবস্থায় পৌঁছে গেছে সেটার জন্য প্রধানত দায়ী পুঁজিপাচার প্রক্রিয়া। তাই, পুঁজিপাচারকে বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের প্রধান অগ্রাধিকারে নিয়ে আসতেই হবে। সরকারকে মেনে নিতেই হবে যে পুঁজিপাচার বর্তমান পর্যায়ে দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা। অর্থমন্ত্রী মহোদয় কি আদৌ তা করছেন? এবারের বাজেটে পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরত আনতে চাইলে মাত্র সাড়ে সাত শতাংশ কর দিয়ে বিনা প্রশ্নে তা গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
কিন্তু, খবর নিয়ে জানা যাচ্ছে গত ছয় মাসে কেউ এই সুবিধা গ্রহণ করেনি। (বর্তমান বাজেটে অর্থমন্ত্রী মহোদয় পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার জন্য যে ‘টোটকা দাওয়াই’ এর প্রস্তাব করেছেন সেগুলোকে আমি দেশের জনগণের সাথে ‘মশকরা’ আখ্যায়িত করেছি। আমি বলেছি, তিনি পুরো ব্যাপারটাকে লঘু করার জন্য এই প্রহসনমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। বছরের শেষে দেখা যাবে ফলাফল শূন্য)। ২০২৩ সালের ৭ জানুয়ারি অর্থমন্ত্রী বলেছেন কেউ এই সুবিধা গ্রহণ না করলে সরকারের কিছুই করার নেই, বাজেট বানানোর সময় তিনি নাকি এই খাত থেকে কোন অর্থ আসবে বলে হিসাবে ধরেননি। দায় অস্বীকার করার কী অভিনব প্রয়াস! গত এক বছরে বাংলাদেশের মুদ্রা টাকার বৈদেশিক মান প্রায় ২৪ শতাংশ অবচয়নের শিকার হয়েছে। এশিয়ার বর্ধনশীল অর্থনীতিগুলোর তুলনায় এই অবচয়ন সর্বোচ্চ। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতনের ধারাকে থামাতে না পারলে ডলারের কার্ব মার্কেটের দামের উল্লম্ফন এবং টাকার বৈদেশিক মানের দ্রুত অবচয়নকে থামানো যাবে না। আর, এজন্য প্রয়োজন পুঁজিপাচারের বিরুদ্ধে সরকারের বিশ্বাসযোগ্য, কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তোলা। সময় থাকতে কঠোরভাবে পুঁজিপাচার দমন করুন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। অর্থনীতির বর্তমান সংকট সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী তেমন কোন গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখছেন না, কোন কার্যকর পদক্ষেপও গ্রহণ করছেন না। দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আহসান মনসুর বর্তমান অর্থমন্ত্রীকে ‘এবসেন্ট ফিন্যান্স মিনিস্টার’ আখ্যায়িত করেছেন। দেশের জনগণের মধ্যে একটা সাধারণ ধারণা গড়ে উঠেছে যে বর্তমান অর্থমন্ত্রী চলমান অর্থনৈতিক বিপর্যয় মোকাবেলা করার জন্য যথেষ্ট দক্ষ নন। অতএব অবিলম্বে অর্থ মন্ত্রণালয়ে নেতৃত্বের পরিবর্তন আনুন, কালক্ষেপণ সংকটকে শুধুই দীর্ঘস্থায়ী করবে।
লেখক : সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি, একুশে পদকপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ ও অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়