বাজারে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্তের কারণে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম ৭ টাকা বৃদ্ধি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এক লাফে ডলারের দাম ১১০ টাকা থেকে ১১৭ টাকায় উন্নীত হয়েছে, যা আগের দিনও ছিল ১১০ টাকা। বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার নির্ধারণে নতুন পদ্ধতি ‘ক্রলিং পেগ’ চালু হতেই এক দিনেই সাড়ে ৬ শতাংশের বেশি দর হারিয়েছে টাকা। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের পরামর্শ মেনে এখন থেকে এ পদ্ধতিতেই ডলারের দর নির্ধারিত হবে। খবর বিডিনিউজের।
গত ১৭ ডিসেম্বর থেকে ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় দর ব্যাংক খাতে ছিল সর্বোচ্চ ১১০ টাকা। ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে আসছেন তারা ব্যাংক থেকে আমদানি পর্যায়ে ডলার কিনতে ব্যয় হচ্ছে ১১৫ থেকে ১১৬ টাকা। আর কার্ডে ব্যাংক থেকে ডলারের দর ১১৪ টাকা। খোলা বাজারে যা চলছে ১১৮ টাকা।
নতুন দর নির্ধারণ করে বাণিজ্যিক ব্যাংকে সার্কুলার দিয়ে বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, এর বাইরে ব্যাংকগুলো গ্রাহক ও আন্তঃব্যাংকে ইচ্ছে মতো দরে ডলার কেনা–বেচা করতে পারবে। বুধবার থেকেই নতুন পদ্ধতি কার্যকর বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অতীতে বিনিময় হার বাজারের উপর ছেড়ে দিলেও আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি ডলারের দর কত হবে তা ব্যাংকগুলোকে মৌখিকভাবে জানিয়ে দিত। সেক্ষেত্রে ঘোষিত দরের সঙ্গে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন ৫০ পয়সা যোগ–বিয়োগ করে বৈদেশিক মুদ্রা কেনা বেচার সুযোগ দিত কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আনুষ্ঠানিকভাবে ক্রলিং পেগ চালুর সময়ে মার্জিনের কথা উল্লেখ করেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে ব্যাংকগুলো ইচ্ছে মত দরে ডলার কেনাবেচা করতে পারবে কি না তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে ব্যাংকারদের মধ্যে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেসরকারি খাতের এক ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, আগে তো মার্জিন ৫০ পয়সা ছিল। নতুন সিদ্ধান্তে কী হয় তা জানতে আমরা আজ ও আগামীকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের অবস্থান দেখব। তারা যদি ১১৭ টাকাকে স্ট্যান্ডার্ড ধরে মার্জিন ঠিক করে দেয়, তাহলে তাই করা হবে। আর যদি মার্জিন না থাকে তাহলে বাজার দর অনুযায়ী কেনাবেচা করব।
কোভিড মহামারী থেকে অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর সময় ২০২১ সালের মাঝামাঝি থেকে ডলারের চাহিদা বাড়তে থাকে। পরের বছর ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা করে বসলে আন্তর্জাতিক বাজারের দ্রব্যমূল্য বেড়ে গেলে ডলারের চাহিদা আরও বেড়ে যায়। তখন থেকে সরবরাহ সংকটে দাম বেড়ে ডলারের বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়। বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা মেটাতে আইএমএফ এর কাছে ঋণ চুক্তিতে যায় বাংলাদেশ ২০২২ সালের জানুয়ারিতে। ঋণ চুক্তিতে যাওয়ার পরে শর্ত অনুযায়ী বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করার অংশ হিসেবে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ফরেন এঙচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) ও ব্যাংকের নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি) ডলারের দর নির্ধারণ করছে। তাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত ১৭ ডিসেম্বর থেকে ডলারের বিনিময় হার ১১০ পয়সা বেঁধে দেওয়া ছিল। অথচ কোভিড মহামারীর শুরুতেও এই বিনিময় হার ছিল ৮৫ টাকার মত।
গত জানুয়ারিতে মুদ্রানীতি ঘোষণায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছিল, বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে এবিবি ও বাফেদার উপর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। বাজারভিত্তিক করতে আইএমএফ এর পরামর্শে ক্রলিং পেগ পদ্ধতি চালু করলো বাংলাদেশ ব্যাংক।