বিশ্বের নানা দেশের নানা কোম্পানি কোভিড-১৯ টিকা তৈরি করলেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্বীকৃতিবিহীন কোনো টিকা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গতকাল বুধবার মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সরকারের এই সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন। সারাবিশ্ব যখন মহামারীতে জেরবার, তখন টিকা শুরুতে বিনা খরচে পাওয়া যাবে না ধরে নিয়ে তা কেনার জন্য ৬০০ কোটি টাকা রেখেছে সরকার। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, দেশে সবাইকে না পারলেও দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে বিনামূল্যে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। রাশিয়া ও চীন ইতোমধ্যে টিকা তৈরি করে তার প্রয়োগও শুরু করেছে। আরও কয়েকটি দেশের টিকাও রয়েছে চূড়ান্ত পর্যায়ে। তবে এর কোনোটি এখনও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার চূড়ান্ত অনুমোদন পায়নি। গতকাল বুধবারের বৈঠকে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন বা টিকা সংগ্রহের বিষয়ে সর্বশেষ পরিস্থিতি স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ মন্ত্রিসভাকে জানায়। মন্ত্রিসভার ভার্চুয়াল বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব আনোয়ারুল ইসলাম বিশ্বে টিকা তৈরির অগ্রগতি এবং টিকা পেতে বাংলাদেশের পদক্ষেপগুলো তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ভ্যাকসিনের জন্য বিভিন্ন দেশ উঠেপড়ে লেগেছে। ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হয়েছে ৪৬টি ভ্যাকসিনের, আর প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে ৯১টি ভ্যাকসিনের।
যারা টিকা তৈরি করছে, শুরু থেকেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে জানিয়েই মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আমাদের একটা বেইজলাইন হল ডব্লিউএইচও যেটাকে রিকগনাইজ না করবে, সেটাকে আমরা একসেপ্ট করব না। এটাকে বেজলাইন ধরে আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ডিপার্টমেন্টগুলো এবং আমাদের ফার্মাসিটিক্যালস কোম্পানি পার্সোনালি বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করছে এখানে প্রোডাকশনের জন্য। খবর বিডিনিউজের।
টিকা পেতে দৌড়ঝাঁপ : চীনের বেসরকারি কোম্পানি সিনোভ্যাকের টিকার বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সরকারের কাছে আইসিডিডিআর,বি আবেদন জানানোর পর তা অনুমোদন করা হয়েছে। এখানে সিনোভ্যাকের ভ্যাকসিনের একটা ট্রায়ালের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছে। বাংলাদেশে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ হলে টিকা কম দামে পাওয়ার সুযোগ তৈরি হবে বলে জানান তিনি। বাংলাদেশ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে একটু লেস প্রাইসে ভ্যাকসিন পাবে। শুধু তাই না, আমাদের এখানকার এক বা একাধিক ফার্মাসিটিক্যালস কোম্পানি ইন্ট্রোডিউস করবে।
টিকা কিনতে বরাদ্দ : কোভিড-১৯ টিকা কেনার জন্য বাজেটে একটি প্রকল্পের আওতায় ৬০০ কোটি টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান।
তিনি বলেন, অর্থ সচিব আমাদের নিশ্চিত করেছেন, কোনো কারণে যদি ফরেন কারেন্সি নাও পাওয়া যায়, আমাদের বাজেটে সেটার সংস্থান রাখা হয়েছে। ভ্যাকসিন কেনার জন্য টাকা-পয়সার কোনো সমস্যা ইনশাআল্লাহ হবে না।
বাংলাদেশে বিনা পয়সায় টিকা পাওয়ার সুযোগ নষ্ট করছে বলে যে কথা উঠেছে, তা নিয়েও বলেন খন্দকার আনোয়ারুল। বিনা পয়সায় ভ্যাকসিন আসার ইমিডিয়েট কোনো সম্ভাবনা নেই, এটা আমাদেরকে বুঝতে হবে।
কবে নাগাদ টিকা : মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, টিকা কখন কবে বাজারে আসবে, সেটা সুনির্দিষ্টভাবে কোনো কোম্পানি বলতে পারছে না। আমি যে তালিকাটা দেখলাম, ২০২১ সালের এপ্রিল-মে-জুনের আগে মার্কেটে আসবে বলে তারা নিশ্চয়তা দিতে পারছে না। যদি এর আগে সাকসেসফুল হয়ে যায়, তবে ইনশাল্লহ সবার সঙ্গেই আমাদের যোগাযোগ আছে।
সবাইকে বিনামূল্যে নয় : করোনাভাইরাস টিকা পেলেও তা দেশে সবাই বিনামূল্যে পাচ্ছেন না বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, ভ্যাকসিনের প্রাইসটা তো এখনো ফিঙড যায়নি। সব কিছু দেখা যাক। তবে গরিব মানুষদের বিনামূল্যে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান খন্দকার আনোয়রুল। সাধারণ মানুষ যারা কিনতে পারবে না সেজন্য ডেফিনেটলি একটা বড় পোরশন ফ্রি দেওয়া হবে। এটা প্রাইমারি চিন্তাভাবনায় আছে।