বাজার স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে গঠিত হয়েছিল ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। কিন্তু নিকট অতীতে লক্ষ্য অর্জনে কোন ভূমিকা পালন করেছে তেমন দৃষ্টান্ত নেই। আলু-পেঁয়াজ, এমন কি রমজানে দাম বাড়ে এমন পণ্যের দামও স্থিতিশীল রাখতে তারা ব্যর্থ হয়েছে। দুর্নীতি, দক্ষ জনবল ও মূলধনের অভাবসহ নানা কারণেও আগের সে দাপট হারিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশও বাস্তবায়ন হয়নি। টিসিবি কর্মকর্তাদের অভিযোগ, দুই ধরনের জটিলতার কারণে টিসিবিকে শক্তিশালী করা যাচ্ছে না। প্রথমত, পণ্য কেনায় টিসিবির হাতে যথেষ্ট তহবিল নেই। দ্বিতীয়ত, সরাসরি পণ্য আমদানি ও ক্রয়ের ক্ষেত্রে রয়েছে আইনি বাধা। বাংলাদেশে টিসিবি ব্যর্থ হলেও প্রতিবেশী দেশ ভারত দ্য স্ট্যাট ট্রেডিং করপোরেশন অব ইন্ডিয়া লিমিটেড (এসটিসি) ও ট্রেডিং করপোরেশন অব পাকিস্তান বাজার নিয়ন্ত্রণসহ বছরে হাজার কোটি টাকা মুনাফা করে। সম্প্রতি পত্রিকান্তরে প্রকাশিত সংশ্লিষ্ট এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
মূলধন ও জনবল সংকট প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জনবলের অভাবে যে আর্থিক সক্ষমতা রয়েছে তাও বাস্তবায়ন করতে পারছে না। একই সঙ্গে সংস্কারের অভাবে যে আর্থিক সক্ষমতা রয়েছে তাও বাস্তবায়ন করতে পারছে না। একই সঙ্গে সংস্কারের অভাবে নিজস্ব ও ভাড়া করা গুদামগুলো দিনদিন জরাজীর্ণ হয়ে পড়ছে। মানসম্পন্ন পণ্য কিনে এসব গুদামে রাখলেই তা মানহীন হয়ে পড়ছে। টিসিবি ভৌত অব কাঠামো গত বেশ কিছু অসুবিধার জন্য নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য বাজারে তারা প্রতিযোগিতা তৈরি করতে ব্যর্থ হচ্ছে। এসবের মধ্যে রয়েছে টিসিবির গুদাম স্বল্পতা। এছাড়া যে সব গুদাম রয়েছে তাও বর্তমানে জরাজীর্ণ। দীর্ঘদিন সংস্কার না করার ফলে গুদামগুলো নাজুক হয়ে পড়েছে। এসব গুদাম তৈরি করা হয়েছিল সে সময় সিমেন্ট, লবণ, ওষুধের মতো পণ্য রাখার জন্য এ কারণে এসব গুদাম তেল, চিনি, ডাল ইত্যাদি ভোগ্যপণ্য রাখার জন্য উপযুক্ত নয়। আবার ভাড়া করা গুদাম ও টিসিবি পণ্য রাখার উপযুক্ত নয়। ফলে এসব গুদামে পণ্য ও এর গুণগত মান নষ্টের পাশাপাশি মজুদ পণ্যও নষ্ট হয়ে যায়।
টিসিবিকে শক্তিশালী করতে সরকারি ক্রয় নীতির আওতামুক্ত রাখা, অগ্রিম আয়কর ও ভ্যাট মুক্ত রাখাসহ কয়েকদফা সুপারিশ করে একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি গঠিত উপকমিটি। প্রতিবেদনে ৩টি নতুন গুদাম একটি কলেজ টলেজ নির্মাণ ও একটি জরাজীর্ণ গুদাম সংস্কারসহ ৩টি স্থানে বহুতল ভবন নির্মাণের কথা বলা হয়েছে। সরকারি কাউন্টার গ্যারান্টি সুবিধা এবং আপদকালীন খাদ্য সংকটে কেনা পণ্যের দীর্ঘকালীন মেয়াদী সংরক্ষণ, বিপণন ক্ষমতা বাড়াতে ও গুদাম ভাড়া কমাতে ৭টি জায়গায় বাস্তবায়ন হয়নি। বাজার নিয়ন্ত্রণ টিসিবি ক্রমেই গুরুত্ব হারাতে বসেছে। বিদ্যমান বাজার ব্যবস্থা এখন অনেক বড় এই বাজার চাহিদা সীমিত মজুদ দিয়ে কিছুই হবে না। বাজার নিয়ন্ত্রণে স্বয়ংসম্পন্নতা অর্জনে একটা নিজস্ব মূলধন থাকা দরকার। এ মূলধন পেলে টিসিবি স্বাধীনভাবে পণ্য ক্রয় ও ভোক্তা পর্যায়ে বিপণন কার্যক্রম পরিচালনা করতে সক্ষম হবে। ৯০ দশকে মুক্তবাজার অর্থনীতিতে চালু হওয়ার পর বেসরকারি খাতের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে টিসিবি কার্যক্রম অনেকটাই সীমিত হয়ে যায়। তবে মুক্তবাজার অর্থনীতি ব্যবসা বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না হলেও সরকারকে এক্ষেত্রে বাজার নিয়ন্ত্রণে সহায়ক শক্তি হিসেবে ভূমিকা রাখতে হবে। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মোট চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম হলে চাহিদা ও জোগানের মধ্যে যে ব্যবধান সৃষ্টি হয় তা পূরণ করা হয় আমদানির মাধ্যমে। এক্ষেত্রে কোনো অসাধু চক্র অযৌক্তিকভাবে যেমন নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ ঘাটতি বা দাম বাড়াতে না পারে তা দেখাও সরকারের দায়িত্ব। টিসিবি হলো সরকারের সেই ব্যবস্থার যার মাধ্যমে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখার ব্যবস্থা করা যায়। বাজার নিয়ন্ত্রণে তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশের জন্য টিসিবির মতো প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা তা নির্দিষ্ট করা জরুরি। প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন পূর্বক একে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করা প্রয়োজন। বাজার সঠিকভাবে কাজ না করলে টিসিবিকে ভূমিকা রাখার মতো সক্ষমতা প্রদান করতে হবে। নইলে সরকারের অর্থের অপচয় শুরু হবে। টিসিবিতে সমস্যার অন্ত নেই। এতো সমস্যা নিয়ে একটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে কাজ করা এবং তার থেকে জনগণের সুফল প্রাপ্তির সম্ভাবনা ক্ষীণ। এ পরিস্থিতিতে টিসিবি মজুদ সক্ষমতা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতাসহ পরিপূর্ণ প্রতিষ্ঠান করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলংকার উদাহরণ আমলে নেওয়া যেতে পারে।