টিকার অগ্রাধিকার তালিকা নিয়ে অস্পষ্টতা দূর

চসিক মহানগরের এবং সিভিল সার্জন জেলার তালিকা করছেন

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ১৫ জানুয়ারি, ২০২১ at ৭:১৩ পূর্বাহ্ণ

করোনার ভ্যাকসিনের অগ্রাধিকার তালিকা নিয়ে অস্পষ্টতা অবশেষে দূর হয়েছে। ফের অগ্রাধিকার তালিকা প্রণয়নে এবার পূর্ণাঙ্গ নির্দেশনা পেয়েছে মাঠ পর্যায়ের দফতর ও সংশ্লিষ্ট কমিটি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ১৩ জানুয়ারি এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্দেশনার পাশাপাশি তালিকা প্রণয়নের সুবিধার্থে একই সাথে ফরম্যাটও পাঠানো হয়েছে। সাত কর্মদিবসের মধ্যে এ সংক্রান্ত তালিকা প্রণয়নের কাজ শেষ করতেও নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
নির্দেশনা পেয়ে নতুন করে অগ্রাধিকার তালিকা প্রণয়নে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো এরইমধ্যে কাজ শুরু করেছে। নির্দেশনা অনুযায়ী চট্টগ্রাম মহানগর এলাকার তালিকা প্রণয়নের কাজ করছে চসিক (চট্টগ্রাম সিটিকর্পোরেশন)। আর মহানগর ব্যতীত চট্টগ্রাম জেলার তালিকা প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জনের কার্যালয়। তালিকা প্রণয়নে পূর্ণাঙ্গ নির্দেশনা পাওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছেন চসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী ও চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি। ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে ব্যবস্থাপনা ও গুজব প্রতিরোধকল্পে গঠিত চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকার কমিটির সদস্য সচিবের দায়িত্বে রয়েছেন চসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। অন্যদিকে এ সংক্রান্ত জেলা পর্যায়ের কমিটির সদস্য সচিব সিভিল সার্জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এই নির্দেশনা পাওয়ার পরপরই সংশ্লিষ্ট দফতর, প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনকে বিষয়টি জানিয়ে দেয়া হয়েছে জানিয়ে চসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী বলেন, তালিকা প্রণয়নের জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট দফতর, প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের কাছ থেকে ফরম্যাট অনুযায়ী তালিকা চেয়েছি। সোমবারের মধ্যে এ তালিকা প্রণয়নের কাজ সম্পন্ন করতে পারব বলে আমরা আশা করছি। আর তালিকা প্রণয়নে সবকয়টি উপজেলাসহ জেলার অধীন সংশ্লিষ্ট সব দফতর ও প্রতিষ্ঠানে বিষয়টি অবহিত করে চিঠি দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি। তালিকা প্রণয়নে উপজেলা কমিটিকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, আগামী ২৫ জানুয়ারির মধ্যে দেশে ৫০ লাখ ভ্যাকসিন আসবে বলে ঘোষণা দিয়েছে সরকার। আর ২৬ জানুয়ারি থেকে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন এবং ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে এ ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম শুরুর কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী- অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন পেতে ভারতের সাথে চুক্তি করা হয়েছে। প্রথম দফায় ৫০ লাখ ভ্যাকসিন আসবে বাংলাদেশে। যা ৫০ লাখ মানুষকে দেয়া যাবে। কিন্তু ১৬ কোটির বেশি জনসংখ্যার দেশে প্রথম দফায় এই ভ্যাকসিন কারা পাবে, তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে হচ্ছে সরকারকে। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন- প্রথম দফাতেই সব বাসিন্দাকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনা সম্ভব নয়। যার কারণে অগ্রাধিকার ভিত্তিক তালিকা করতে হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিভাগের মাধ্যমে প্রাথমিক ভাবে একটি তালিকা প্রণয়নের কাজ এরইমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। তবে প্রাথমিকভাবে একটি তালিকা করা হলেও নতুন করে অগ্রাধিকার তালিকা প্রণয়ন এবং টিকাদান কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে ব্যবস্থাপনা ও গুজব প্রতিরোধকল্পে জাতীয় কমিটির পাশাপাশি সিটি কর্পোরেশন, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে একটি করে কমিটি গঠন করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। ১৩ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক (৩) মুহম্মদ শাহীন ইমরান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ সংক্রান্ত কমিটি গঠনের তথ্য জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিবকে সভাপতি করে জাতীয় কমিটি, মেয়রের নেতৃত্বে সিটি কর্পোরেশন এলাকার কমিটি এবং জেলাপ্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নের্তৃত্বে যথাক্রমে জেলা ও উপজেলা কমিটি গঠন করা হয়েছে। জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব, সিটি কর্পোরেশন এলাকার কমিটির ক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, জেলা পর্যায়ের কমিটিতে সিভিল সার্জন এবং উপজেলা কমিটিতে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে সদস্য সচিবের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এ কমিটির ৫টি কার্যপরিধির মধ্যে প্রথমেই কোভিড-১৯ মোকাবেলায় নিয়োজিত স্বাস্থ্য কর্মীগণ, সম্মুখ সারির কর্মীগণ, রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতাহীন জনগোষ্ঠী, বয়োজ্যেষ্ঠ জনগোষ্ঠী, দীর্ঘমেয়াদী রোগে আক্রান্ত প্রাপ্ত বয়স্ক জনগোষ্ঠীর অগ্রাধিকার তালিকা প্রণয়নের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কার্যপরিধি অনুযায়ী- এ সংক্রান্ত কমিটির নতুন করে অগ্রাধিকার তালিকা প্রণয়নের কথা। কিন্তু নির্দেশনায় কিছু অস্পষ্টতার কারণে এতদিন এ অগ্রাধিকার তালিকা করতে পারেনি কমিটি।
প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় কর্তৃক গঠন করা কমিটির কার্যপরিধিতে অগ্রাধিকার তালিকা প্রণয়নের ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ মোকাবেলায় নিয়োজিত স্বাস্থ্য কর্মীগণ, সম্মুখ সারির কর্মীগণ, রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতাহীন জনগোষ্ঠী, বয়োজ্যেষ্ঠ জনগোষ্ঠী, দীর্ঘমেয়াদী রোগে আক্রান্ত প্রাপ্ত বয়স্ক জনগোষ্ঠীর অগ্রাধিকারের কথা উল্লেখ করা হয়। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য কর্মীর বিষয়টি বাদ দিলে সম্মুখ সারির কর্মী হিসেবে কারা বিবেচনায় আসবেন, সে বিষয়টি স্পষ্ট করা ছিলনা। এ নিয়ে গত ৮ জানুয়ারি দৈনিক আজাদীর প্রথম পাতায় ‘করোনার ভ্যাকসিনঃ অগ্রাধিকার তালিকা নিয়ে অস্পষ্টতা’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
ওই প্রতিবেদনে কমিটি সংশ্লিষ্টরা দাবি করেন, সম্মুখ সারির কর্মী বলতে কারা বা কোন কোন বিভাগের কর্মীদের বিবেচনায় আনা হবে, তা নিয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে। প্রশাসন, আইনশৃক্সখলা রক্ষাকারী বাহিনী, সামরিক ও আধা সামরিক বাহিনী, গণমাধ্যম, শিক্ষা বিভাগ ছাড়াও সরকারের বিভিন্ন দফতর ও বিভাগ রয়েছে। এর মধ্যে সম্মুখ সারির কর্মী হিসেবে কারা বিবেচনায় আসবেন, তা স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি বয়োজ্যেষ্ঠ বিবেচনার ক্ষেত্রেও কত বছর বয়সীদের বিবেচনায় আনা হবে, তা নিয়েও অস্পষ্টতা রয়ে যায়। এছাড়া রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতাহীন জনগোষ্ঠী এবং দীর্ঘমেয়াদী রোগে আক্রান্ত প্রাপ্ত বয়স্ক জনগোষ্ঠী নির্বাচনের ক্ষেত্রেও স্পষ্ট কোনো নির্দেশনা ছিল না। সবমিলিয়ে এসব অস্পষ্টতার কারণে অগ্রাধিকার তালিকা প্রণয়নের পথে এগোতে পারেনি এ সংক্রান্ত কমিটি। ১৩ জানুয়ারি প্রদত্ত নির্দেশনায় এসব অস্পষ্টতা দূর হওয়ায় এখন নতুন করে অগ্রাধিকার তালিকা প্রণয়নের কাজ শুরু করেছেন কমিটি সংশ্লিষ্টরা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআমার সরকার মানুষের সেবক : প্রধানমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধসাংবাদিক পরিচয়ে মামলা করতে গিয়ে তিন ঘণ্টা হাজতবাস