টানা চার হারে রাউন্ড রবীন লিগ শেষ রংপুরের দুর্দান্ত জয়ে প্লে অফের আশা জিইয়ে রাখল খুলনা

ক্রীড়া প্রতিবেদক | শুক্রবার , ৩১ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৬:৫০ পূর্বাহ্ণ

ম্যাচটা ছিল দু’দলের জন্য দু’রকমের। রংপুরের জন্য জয়ে ফেরা আর খুলনার জন্য প্লে অফের পথে থাকা। শেষ পর্যন্ত জয়টা খুলনারই। টানা চার ম্যাচে হেরে লিগ পর্ব শেষ করল রংপুর রাইডার্স। টানা আট ম্যাচে হারা রংপুর পরের চার ম্যাচে হারল। যদিও প্লে অফ আগেই নিশ্চিত করেছে রংপুর। তবে টুর্নামেন্টে টিকে থাকতে নেই জয়ের বিকল্প ছিল না খুলনার। হেরে গেলে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই শেষ সব আশা। এমন সমীকরণের ম্যাচে নিজের সেরাটা উপহার দিলেন মোহাম্মদ নাঈম শেখ। চমৎকার সেঞ্চুরিতে খুলনা টাইগার্সকে এনে দিলেন বড় পুঁজি। পরে সৌম্য সরকারের হুঙ্কার সামলে অনায়াসেই রংপুর রাইডার্সকে হারিয়ে দিল তারা। বাঁচামরার লড়াইয়ের পরিণত হওয়া ম্যাচে খুলনার জয় ৪৬ রানে। ১১ ম্যাচে ১০ পয়েন্ট নিয়ে প্লেঅফের লড়াইয়ে টিকে থাকল তারা। ফলে অপেক্ষা আরও বাড়ল দুর্বার রাজশাহীর। ১২ ম্যাচ শেষে রংপুরের পয়েন্ট ১৬। দ্বিতীয় স্থানে থাকল তারা। এক নাম্বারে বরিশাল।

মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে খুলনা ঝড়ো শুরু করলেও ৩২ রানে ভাঙ্গে উদ্বোধনী জুটি। মেহেদির বলে মিরাজ ফিরেন ১২ বলে ২১ রান করে। মিরাজের বিদায়ের পর একই গতিতে রান করতে পারেননি নাঈম ও অ্যালেক্স রস। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে মেহেদির বলে ছক্কাচার মেরে কিছুটা পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন নাঈম। অষ্টম ওভারে মারাত্মক ভুল বোঝাবুঝি ভাঙে এই জুটি। লং অনের দিকে খেলে এক রান পূর্ণ করে শুরুতে দ্বিতীয় রানের ডাক দেন নাঈম। কিন্তু নিতে পারবেন না বুঝতে পেরে পরে ফিরিয়ে দেন। ততক্ষণে মাঝ ক্রিজে রস। ফেরার চেষ্টায় লম্বা ডাইভ দিয়েও লাভ হয়নি তার। মেহেদির থ্রো ধরে আগেই বেলস ফেলে দেন নুরুল হাসান সোহান। মাঠ ছাড়েন ১৪ বলে ১২ রান করা রস। চার নম্বরে নামা উইলিয়াম বসিস্টোকে নিয়ে বড় জুটি গড়েন নাঈম। জুটির শুরুতে দুজনই সময় নেন। দশ ওভার শেষে খুলনার সংগ্রহ দাঁড়ায় ২ উইকেটে ৭৪ রান। তখনও ত্রিশ ছুঁতে পারেননি নাঈম। ১১ বলে ১০ রানে ছিলেন বসিস্টো। পরের দশ ওভারে রংপুরের বোলারদের ওপর তাণ্ডব চালান খুলনার ব্যাটসম্যানরা। আর মাত্র ২ উইকেট হারিয়ে তারা করে ১৪৬ রান। দ্বাদশ ওভারে ইফতিখারের আহমেদের বলে ডানা মেলার সুযোগ পেয়ে যান নাঈম। লং অন ও লং অফ দিয়ে মারেন তিনটি ছক্কা। তৃতীয় ছক্কায় ৩৩ বলে পৌঁছে যান ক্যারিয়ারের ষোড়শ পঞ্চাশে।

আকিফের বলে ছক্কা মেরে ড্রেসিং রুমে ফিরে যান বসিস্টো। ৩ চার ও ২ ছক্কায় ২১ বলে করেন ৩৬ রান। নাঈমের সঙ্গে তার তৃতীয় উইকেট জুটির সংগ্রহ ৪৭ বলে ৮৮ রান। অষ্টাদশ ওভারে সাইফ উদ্দিনকে আবার বোলিংয়ে আনে রংপুর। এই সুযোগের অপেক্ষায়ই যেন ছিলেন নাঈম। আর সে ওভারেই টিটোয়েন্টি ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি পূরণ করেন নাঈম ৫৫ বলে। পরে আকিফ জাভেদের বলে চারছক্কা মেরে দলের দুইশ পূর্ণ করেন মাহিদুল। শেষ ওভারে ইফতিখারের প্রথম বল ছক্কায় ওড়ান নাঈম। বাকি পাঁচ বলে আর বাউন্ডারি হয়নি। ১৫ বলে ২৯ রান করে ড্রেসিং রুমে ফেরেন মাহিদুল। ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসে ১১১ রানে অপরাজিত থাকেন নাঈম। ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধু টিটোয়েন্টি কাপে বেক্সিমকো ঢাকার হয়ে ৬৪ বলে ১০৫ রান করেছিলেন বাঁহাতি ওপেনার। আর ২২০ রানে পৌঁছে যায় খুলনা টাইগার্স।

বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুটা একদম ভালো হয়নি রংপুরের। একাদশে ফেরার সুযোগ কাজে লাগতে ব্যর্থ তৌফিক খান। দ্বিতীয় ওভারে নাসুম আহমেদের বলে এলবিডব্লিউ হন তিনি। নাসুমের পরের ওভারে চারের পর দুটি ছক্কা মেরে রানের চাকায় দম দেন সৌম্য। কিন্তু পঞ্চম ওভারে মোহাম্মদ নাওয়াজের সরাসরি থ্রোয়ে সাইফ হাসান রান আউট হলে আরও বাড়ে রংপুরের বিপদ। পাওয়ার প্লেতে তাদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ২ উইকেটে ৪৫ রান। চার নম্বরে নেমে রানের গতি বাড়ানোর চেষ্টা করেন ইফতিখার। তেমন সফল হননি। অন্য প্রান্তে সৌম্যই সচল রাখেন রানের চাকা। অষ্টম ওভারে চারের পর ছক্কা মারেন ড্যাশিং ওপেনার। পরের ওভারে মুশফিক হাসানের বল ছক্কায় ওড়ান ইফতিখার। এক বল পর ডিপ স্কয়ার লেগে নাঈমের চমৎকার ক্যাচে ড্রেসিং রুমে ফিরেন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান ১৫ বলে ১৯ রান করে। পরে ক্রিজে গিয়ে আবু হায়দারের বলে দুটি চার ও একটি ছক্কা মারেন মেহেদি। নাওয়াজের স্পিনও ছক্কায় ওড়ান তিনি। কিন্তু টিকতে পারেননি। পরের বলেই মিরাজের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ১৪ বলে ২৭ রান করা মেহেদি। এক বল পর সৌম্যকে একা করে দিয়ে ড্রেসিং রুমের পথ ধরেন অধিনায়ক সোহানও। এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে সৌম্য চতুর্দশ ওভারে পূর্ণ করেন নিজের পঞ্চাশ। সপ্তদশ ওভারে পরপর দুই বলে মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন ও আজিজুল হাকিমকে আউট করেন মুশফিক। সীমানা থেকে অনেকটা দৌড়ে সামনে ঝাঁপিয়ে দুর্দান্ত ক্যাচে সাইফ উদ্দিনের বিদায় নিশ্চিত করেন নাঈম। শেষ পর্যন্ত ১৭৪ রানে থামে রংপুরের ইনিংস। ৬ চার ও ৫ ছক্কায় ৪৮ বলে সৌম্য করেন ৭৪ রান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাটলার কোচ থাকলে গণঅবসরের হুমকি সাফজয়ী নারী ফুটবলারদের
পরবর্তী নিবন্ধদলিললেখক সমিতির দ্বি-বার্ষিক সাধারণ সভা