ছায়াপথ বা গ্যালাক্সির কেন্দ্রের কাছাকাছি যার ঘাপটি মেরে বসে থাকার কথা রাশি রাশি খাবারের জন্য, সেই দৈত্যাকার ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বরকে এবার ঝড়ের গতিতে ছুটতে দেখা গেল। ছায়াপথের মধ্যেই এই প্রথম। সেই ছায়াপথের নাম জে০৪৩৭+২৪৫৬। সেটি রয়েছে পৃথিবী থেকে ২২ কোটি ৮০ লাখ আলোকবর্ষ দূরে। খবর বাংলানিউজের।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোফিজিঙের গবেষকরা দেখেছেন, এই গ্যালাঙির দৈত্যাকার কৃষ্ণগহ্বরটি ছুটছে দিগ্বিদিক শূন্য হয়ে। সেকেন্ডে প্রায় ৪ হাজার ৮১০ কিলোমিটার গতিবেগে (২ হাজার ৯৯০ মাইল)। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা দ্য অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নালে।
যেকোনো ছায়াপথই ভরা থাকে হাইড্রোজেন গ্যাসে। সেই গ্যাসের মেঘ থেকেই তারাদের জন্ম হয়। গবেষকরা দেখেছেন, ছায়াপথের দৈত্যাকার কৃষ্ণগহ্বরটি যেমন ঘাপটি মেরে কেন্দ্রের কাছাকাছি বসে না থেকে ছুটছে, তেমনই সরে সরে যাচ্ছে হাইড্রোজেন গ্যাসের মেঘ। তার গতিবেগ আরও বেশি। সেকেন্ডে ৪ হাজার ৯১০ কিলোমিটার। যে বিষয়টি গবেষকদের আরও অবাক করে দিয়েছে তা হলো, ছায়াপথের গতিবেগ যা, তার সঙ্গে মিল নেই দৈত্যাকার ব্ল্যাক হোলের গতিবেগের।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোফিজিঙের অধ্যাপক জ্যোতির্বিজ্ঞানী ডোমিনিক পেসকে বলেছেন, আমরা আশা করেছিলাম গতিবেগ সমানই হবে। কিন্তু তা নয়। তাই ধরেই নেওয়া যায় কোনো কারণে অস্থিরমতি হয়ে পড়েছে ছায়াপথের দৈত্যাকার ব্ল্যাক হোলটি।
সেই কারণটি কী? পেসকে জানিয়েছেন, ছায়াপথের কেন্দ্রের কাছাকাছি থাকা কোনো দৈত্যাকার ব্ল্যাক হোলকে এর আগে ছুটতে দেখা যায়নি। কেউ এমনটা আশাও করেনি। কারণ এই কৃষ্ণগহ্বর এতটাই ভারী হয় যে, তাদের ছোটা সম্ভব হয় না। এই দৈত্যাকার কৃষ্ণগহ্বরের ভর সূর্যের ভরের ৩০ লাখ গুণ। তবু এটা ছুটছে। এর অনেকগুলো কারণ হতে পারে। হয়তো এই ছায়াপথের সঙ্গে আর একটা ছায়াপথের ধাক্কা লেগেছে। তাই অস্থিরমতি হয়ে পড়েছে কৃষ্ণগহ্বরটি। অথবা এই দৈত্যাকার কৃষ্ণগহ্বরটির সঙ্গে অন্য ছায়াপথের কোনো দৈত্যাকার কৃষ্ণগহ্বরের ধাক্কা লেগেছে। আবার এ-ও হতে পারে, দৈত্যাকার এই কৃষ্ণগহ্বরটির কোনো দোসর রয়েছে। তারই সঙ্গে গুঁতোগুঁতি চলছে।